ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না
অনলাইন ডেস্ক।।
সরকার উৎস সম্পর্কে কোনো জিজ্ঞাসা ছাড়াই চলতি অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দিয়েছিল, ২০২১-২২ অর্থবছরে সেই সুযোগ আর থাকছে না।
এর অর্থ কালো টাকা বৈধকরণের যে সুযোগ, যেটির আওতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ১৪ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা সাদা করা রেকর্ড হয়েছে, সেটির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হবে।
তবে, অপ্রকাশিত আয়ের মাধ্যমে এলাকা এবং সম্পত্তির অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে বাড়ি, জমি, ভবন বা ফ্ল্যাট কেনার যে সুযোগ, তা বিদ্যমান থাকবে। কিন্তু, সরকারি সংস্থা তহবিলের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারবে।
বিদায়ী অর্থবছরে, যেকোনো ধরনের করবহির্ভূত আয়কে হিসেবের আওতায় আনার জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রসারিত করা হয়েছিল। কোনো সম্পদ বৈধ করার পর কোনো কর্তৃপক্ষ এমনকি আয়কর কর্তৃপক্ষ বা দুর্নীতি দমন কমিশনও সেই সম্পদ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, এমন বিধান প্রবর্তন করে সরকার ঢালাওভাবে আয়কে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল।
করদাতাদের সম্পত্তির প্রতি বর্গফুটের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে কর প্রদানের মাধ্যমে বাড়ি, জমি, ভবন বা ফ্ল্যাটসহ যেকোনো প্রকারের অপ্রকাশিত সম্পত্তি প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
জনগণ ১০ শতাংশ কর প্রদান করে অপ্রকাশিত নগদ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সুরক্ষা সম্পত্তি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছিল।
কমপক্ষে এক বছরের জন্য বিনিয়োগ মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করে এবং তাদের ট্যাক্স রিটার্নে বিনিয়োগ দেখানোর মাধ্যমে জনগণকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে অপ্রকাশিত সম্পদের ১৪ হাজার ৪৫৯ দশমিক চার কোটি টাকা বৈধ করা হয়েছে।
এই সময়ে ১০ হাজার ৪০৪ জন লোক সম্পদ বৈধ করার জন্য মোট এক হাজার ৪৪৫ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা কর দিয়েছে।
সম্পদ বৈধ করার মধ্যে ১১ হাজার ৬৬৩ দশমিক আট কোটি টাকা সমমূল্যের অপ্রকাশিত স্থায়ী আমানতের প্রাপ্তি (এফডিআর), সঞ্চয়পত্র, নগদ ও অন্যান্য সম্পত্তির জন্য কর প্রদান করা হয়েছে।
কর প্রদানের মাধ্যমে দুই হাজার ৫১৩ দশমিক দুই কোটি টাকার অপ্রকাশিত বাড়ির সম্পত্তিও বৈধ করা হয়েছে।
বাকি ২৮২ দশমিক চার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এবং কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছে।
২০১৯-২০ পর্যন্ত গত ১৫ বছরে সরকারের দেওয়া সুযোগে ১৪ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৩ কোটি টাকার অপ্রকাশিত আয় বৈধ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এ জাতীয় কর প্রদানের বিরোধিতা করে এটিকে বৈধ করদাতাদের ওপর অবিচার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কারণ কালো টাকা সাদাকারীদের মাত্র ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হলেও বৈধ সম্পদের করদাতাদের আরও বেশি কর দিতে হয়।স্বাধীনতার পর থেকে বিশেষ করের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
তথ্য অনুসারে, ১৯৭১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপ্রকাশিত আয়ের প্রায় ৩০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে এবং যা থেকে প্রায় তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে।
অপ্রকাশিত আয়ের মধ্যে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালে দুই দশমিক ২৫ কোটি টাকা, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সালে ৫০ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা, ১৯৮১ থেকে ১৯৯০ সালে ৪৫ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে ১৫০ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা, ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালে ৯৫০ দশমিক ৪১ কোটি টাকা, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ৮২৭ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা, ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে এক হাজার ৬৮২ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে এক হাজার ৮০৫ দশমিক শূন্য এক কোটি টাকা এবং ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা প্রকাশ করা হয়েছে।