ডেঙ্গু কমছেই না
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমছেই না। গতকাল বৃহস্পতিবারও নতুন করে এক হাজার ৫৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ গত পাঁচ দিনের একদিনও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের নিচে নামেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিদিনই বলা হচ্ছে, রোগীর সংখ্যা বা রোগী ভর্তির হার কমে আসছে। অথচ বাস্তবে তা কমছে না।
গতকালও ডেঙ্গু আক্রান্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এ রোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৭। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (বুধবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়) সারাদেশে নতুন করে এক হাজার ৫৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ১৮ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত যথাক্রমে এক হাজার ৭০৬, এক হাজার ৬১৫, এক হাজার ৫৭২ ও এক হাজার ৬২৬ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৬১ এবং বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ৮৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ৫৯ হাজার ৫৯২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৩ হাজার ৩৯৮ জন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এখনও ছয় হাজার ১৪৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর ৪১ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ৩৩২ এবং অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালে দুই হাজার ৮১৫ জন ভর্তি আছেন।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন গিয়াস উদ্দিন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলায়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন কদমতলীর জুরাইনের তাসনিম ও মিটফোর্ড হাসপাতালে মৃত্যু ঘটেছে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকার তাসলিমের। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন মনির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বকন্দি গ্রামে। খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গেছেন আলমগীর হোসেন গাজী। তার বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীকলস গ্রামে। এর আগে বুধবার রাজধানীর আদ্-দ্বীন হাসপাতালে মারা যান আব্দুল গফফার। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাপা গ্রামে। একই দিন বিকেলে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান প্রাইভেটকার চালক মো. হানিফ। তার বাড়ি সাভারের টঙ্গিবাড়ীতে।
বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান -ঢাকা : এ বিভাগের ঢাকা জেলায় ৮১, গাজীপুরে ৪৮, মুন্সীগঞ্জে ২৫, কিশোরগঞ্জে ৭৪, নারায়ণগঞ্জে ৩৮, গোপালগঞ্জে ২৫, মাদারীপুরে ৫৩, মানিকগঞ্জে ১৫৫, নরসিংদীতে ৩২, রাজবাড়ী ১৩, শরীয়তপুরে ৫৭, টাঙ্গাইলে ৫৬ ও ফরিদপুরে ৬০ জনসহ মোট ৭১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিভাগে ছয় হাজার ১৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৪৩৯ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম : বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় ১৪৫, ফেনীতে ৪৬, কুমিল্লায় ৭৩ জন, চাঁদপুরে ৭৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০, নোয়াখালীতে ৭৯, কক্সবাজারে ১৭, লক্ষ্মীপুরে ২৬, খাগড়াছড়িতে ২৬, রাঙামাটিতে পাঁচ এবং বান্দরবানে দুই জনসহ মোট ৫১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বিভাগে মোট চার হাজার ৫২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে চার হাজার ছয় জন ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
খুলনা : বিভাগের খুলনা জেলায় ১৭৮, কুষ্টিয়ায় ৭০, মাগুরায় ২৪, নড়াইলে ২৯, যশোরে ১৭৭, ঝিনাইদহে ২৯, বাগেরহাটে ১৭, সাতক্ষীরায় ৫২, চুয়াডাঙ্গায় চার ও মেহেরপুরে সাত জনসহ মোট ৫৮৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বিভাগে তিন হাজার ৫৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে তিন হাজার সাত জন ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
রাজশাহী : বিভাগের রাজশাহী জেলায় ১৭, বগুড়ায় ৮৩, পাবনায় ৩৬, সিরাজগঞ্জে ৬৩, নওগাঁয় ১০, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৮, নাটোরে আট ও জয়পুরহাটে ১০ জনসহ মোট ২৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিভাগে দুই হাজার ৬৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৪১৭ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
রংপুর : বিভাগের রংপুর জেলায় ৫৪, লালমনিরহাটে দুই, কুড়িগ্রামে ১০, গাইবান্ধায় আট, নীলফামারীতে ছয়, দিনাজপুরে ২৬, পঞ্চগড়ে চার ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩ জনসহ মোট ১২৩ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিভাগে এক হাজার ৫০৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছাড়পত্র নিয়েছেন এক হাজার ৩৮২ জন।
বরিশাল : বিভাগের বরিশাল জেলায় ১৯৫, পটুয়াখালীতে ৪০, ভোলায় ৫৩, পিরোজপুরে ৫৫, ঝালকাঠিতে ১২ ও বরগুনায় ৩৩ জনসহ মোট ৩৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিভাগে তিন হাজার ১২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৭৩৩ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
সিলেট : বিভাগের সিলেট জেলায় ৫৫, সুনামগঞ্জে চার, হবিগঞ্জে সাত, মৌলভীবাজারে পাঁচ জনসহ মোট ৬৯ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ বিভাগে ৬৬৮ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৫৯৯ জন ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
ময়মনসিংহ : বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার মেডিকেল কলেজে ১১৮, জামালপুরে ৩৮, শেরপুরে ১৭, নেত্রকোনায় আট জনসহ মোট ১৮১ জন হাসপাতালে আছেন। এ বিভাগে এক হাজার ৬২০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৪৩৯ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।সুত্র সমকাল