ডুমুরিয়ায় ক্লাবঘরে পাঠদান
নিউজ ডেস্ক।।
ডুমুরিয়া উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে মাগুরখালী ইউনিয়ন পরিষদ। ওই পরিষদ থেকে পশ্চিম দিকে আরও প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাগুরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় প্রায় দেড় যুগ আগে। বর্ষা মৌসুমে এ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকে। আর শুকনা মৌসুমে সব শ্রেণির পাঠদান চলে বিদ্যালয়ের পাশে জানালা-দরজাবিহীন পরিত্যক্ত একটি ক্লাব ঘরের ছোট্ট কক্ষে। যথাযথ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছাড়ছে। আর শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন নেহায়েত চাকরির খাতিরে। তাছাড়া এখানে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। তিনজন সহকারী শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিদ্যালয়ে পাঠদান।
সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯২৮ সালে উপজেলার মাগুরখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাদেশে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী মাগুরখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ও জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পাকা দেয়াল আর টিনের ছাউনি সংবলিত লাইব্রেরিসহ চার কক্ষ বিশিষ্ট মাগুরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ এতই দুর্বল ছিল যে, তিন বছর গড়াতে না গড়াতেই ভবনের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করে এবং ভবনের টিন ছিদ্র হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে শ্রেণি কক্ষ পানিতে একাকার হয়ে যায়। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শেষে ৩২ বছর পার হলেও ভবনটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রায় দেড় যুগ আগে ওই বিদ্যালয় ভবনটি উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শিপ্রা রানী বলেন, এ বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। অফিসের মূল্যবান কাগজপত্র রাখার কোনো জায়গাও নেই। প্রতিনিয়ত ব্যাগে করে প্রয়োজনীয় খাতা ও কাগজপত্র আনা-নেওয়া করতে হয়। বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে টেন্ডার হয়েছে, কাজ শুরু হয়নি। তাছাড়া ২০১১ সাল থেকে এখানে ছয়জন শিক্ষক থাকার কথা। আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। দপ্তরিক কাজে প্রায় সময় প্রধান শিক্ষককে বিভিন্ন কাজে বাইরে থাকতে হয়। তখন মাত্র দু'জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান চালানো হয়। এ অবস্থায় এখানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ নেই বললেই চলে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নানামুখী সংকটে পড়তে হচ্ছে। দুর্গম এলাকা বলে এখানে কেউ বদলি হয়ে আসতে চায় না। এখন এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। প্রতি বছর এ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। চলতি বছরও ছয় শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে মাত্র ৫২ শিক্ষার্থী রয়েছে।
সংশ্নিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য প্রসাধ মণ্ডল জানান, নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কাজ শুরু করানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য অস্থায়ী একটি কাঁচা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মাগুরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা আছে। নতুন নিয়োগ হলে, ওই শূন্য পদ পূরণ করা হবে। চলতি বছরই স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটবে।
উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, মাগুরখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল অনেক আগে। দুর্গম এলাকা বলে
মালপত্র পৌঁছতে দেরি হওয়া ও বৃষ্টির কারণে ঠিকাদার কাজে হাত দিচ্ছেন না। দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।সুত্র সমকাল