জেলা শিক্ষা অফিসে ‘শোকজ বাণিজ্য’ জমজমাট
নীলফামারীঃ শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে আবার দালাল দিয়ে মিটমাটের ‘শোকজ বাণিজ্য’ জমজমাট হয়ে উঠেছে নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে। শোকজ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে সাধারণ শিক্ষকদের কাছ থেকে। এ কাজে রিতিমতো একাধিক দালাল টিম গড়ে উঠেছে। এ টিমের সদস্য আবার শিক্ষকরাই। তবে অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষকও আছেন চক্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষক জানান, জেলা কর্মকর্তা নানান ছুতা এনে ঢালাওভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শোকজ নোটিশ দেয়ার পরপরেই সক্রিয় হয়ে উঠছেন দালাল চক্র। নানান প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা।
শোকজের জবার দিতে হবে না। জন প্রতি ৫-৭ হাজার করে টাকা দিলেই হবে। কিংবা স্যারের সঙ্গে দেখা করেন। জেলা স্যাররা যেহেতু এসেছিলেন, ওনাদেরতো সম্মান আছে।
হচ্ছেও তাই। ঝামেলা এড়াতে দালালের হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছেন অসহায় শিক্ষকরা। অতি সম্প্রতি নীলফামারী সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রায় জনা বিশেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শোকজ করা হয়। কিন্তু এসব শোকজের কোনো নথি নেই শিক্ষা অফিসে। সূত্র জানায়, গত এক-দেড় বছরে জেলার প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ের কয়েকশত শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে শোকজ করা হলেও তাদের শোকজের যেমন কোনো নথি নেই তেমনি শোকজের কোনো জবাবও নেই শিক্ষা অফিসে।
সবই হয়েছে গায়েবিভাবে। সূত্র জানায়, জেলা সদরের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষিকা এ দালালির কাজে সরাসরি জড়িত। তবে শহরের কয়েকজন শিক্ষিকা স্কুল ছেড়ে এ কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন বলে জানা গেছে। তাদের সারাদিন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দেখা যায় শিক্ষা কর্মকর্তার ডানে-বাঁয়ে। অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীও এ চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে শিক্ষকরা জানান। এ চক্রের হাত এতটাই নাকি লম্বা যে, তাদের ছাড়া কোনো কাজই হয় না শিক্ষা অফিসে। শিক্ষকদের বদলি, সমন্বয়, ডেপুটেশন সবকিছুতেই এ দালাল চক্র। মোটা অংকের টাকা নিয়ে সুবিধাজনক স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে বদলির ঘটনাও রয়েছে নীলফামারী শহরের একাধিক স্কুলে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা থেকেও ২০-২৫ হাজার করে টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেক স্কুল প্রধান। এ ছাড়া স্লিপের টাকারও ভাগ দিতে হচ্ছে অফিসে। সদ্য বিদায়ী সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন নীলফামারীতে যোগদানের পর থেকেই কার্যালয়কে দালালের আখড়ায় যেমন পরিণত করেন, তেমনি অফিসের একটি রুম আবাসিক হিসেবে ব্যাবহার করতেন। বছরের পর বছর অফিসের গেস্ট রুমেই বসবাস করে সরকারি বিদ্যুৎ-পানি ব্যবহার করলেও বাসা ভাড়া ঠিকই তুলেছেন তিনি। আর এ গেস্ট রুম থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় শোকজ বাণিজ্যের। দালাল শিক্ষক চক্রের অনেককেই রাতের বেলাতেও দেখা যেতো অফিস ক্যাম্পাসে।
এ ব্যাপারে রংপুররস্থ বিভাগীয় উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে বিভিন্ন মহলে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিনকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয়েছে। তবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে শোকজ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন। সূত্র; মানবজমিন
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়