জাতীয় কবির সরকারি স্বীকৃতি নেই
নিউজ ডেস্ক।।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কে- এমন প্রশ্নে প্রাথমিকে পড়া ছোট্ট শিশুও হাসতে হাসতে উত্তর দেয় কাজী নজরুল ইসলাম। সরকারি-বেসরকারি চাকরি, স্কুল-কলেজের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও বিভিন্ন সময় এসেছে জাতীয় কবি কে- এমন প্রশ্ন। এভাবেই সবার মুখে মুখে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুলের নাম। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আজও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি নজরুল। সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তার নাম নেই। অথচ জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানেও নজরুলের পরিচয় দেওয়া হয় জাতীয় কবি হসেবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো দলিল নেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কাছেও।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ২৪ মে জন্মদিনে কবি নজরুলকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় নিয়ে আসেন। বড় ছেলে কাজী সব্যসাচী ও তার স্ত্রী উমা কাজী, ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধ ও তার স্ত্রী কল্যাণী কাজী এবং তাদের সন্তানেরা এসেছিলেন কবির সঙ্গে। রাজধানীর ধানমন্ডির বর্তমান ১৫ নম্বর (পুরনো ২৮) সড়কের ৩৩০/বি বাড়িটি তখন কবির নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তখন বাড়িটির নাম দেওয়া হয় কবি ভবন। বর্তমানে এটি কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। সে সময় বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়ে কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। নজরুলকে বাংলাদেশে আনার পর বাংলা একাডেমিও সরকারিভাবে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার জন্মদিন উদযাপন করে। ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি আখ্যায়িত করেন।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে একুশে পদকে ভূষিত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্বও প্রদান করা হয়। অসুস্থাবস্থায় নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতাল বা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মারা যান। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাফন করা হয়।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। এর পর ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট আবারও একটি প্রস্তাবনা হাতে হাতে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে দেওয়া হয়। পরে একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘জাতীয় কবিবিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি’ সংক্রান্ত ৭১ বিধিতে জরুরি নোটিশ উত্থাপন করেন একজন সংসদ সদস্য। এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে বলা হয় সংসদ থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মতামত চেয়ে নজরুল ইনস্টিটিউটকে একটি চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। পরের দিনই প্রতিষ্ঠানটি থেকে মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠানো হয় জাতীয় কবিবিষয়ক গেজেট প্রকাশের। তবে এর পর আর এ উদ্যোগের কোনো অগ্রগতি নেই।
জানা গেছে, সম্প্রতি হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বরাবর তথ্য অধিকার আইনে কবি নজরুলের স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশের বিষয়ে জানতে চান। এর উত্তরে মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব (অনুষ্ঠান) এ জে এম আব্দুল্ল্যাহেল বাকী স্বাক্ষরিত উত্তরে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে কোনো সরকারি গেজেট প্রকাশ হয়নি। তবে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘সময় অনেক গড়িয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করেছি, তবে কবি নজরুলের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে অগ্রগতি নেই। দ্রুত গেজেট প্রকাশ করবে কিনা এমন বিষয় জানতে আমরা আগামী সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠাব। এর পর সন্তোষজনক জবাব না পেলে আদালতের আশ্রয় নেব।’
এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘কবি নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। এটার গেজেট প্রয়োজন হয় না। আইন আছে, আইনে বলা আছে। গেজেটের চেয়ে আইন গুরুত্বপূর্ণ। নজরুল ইনস্টিটিউটের আইনেও বলা আছে নজরুল আমাদের জাতীয় কবি।’