জাতীয়করণে লাভবান হবেন সর্বস্তরের জনগণ
সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন সর্বস্তরের জনগণ। ধনী, গরীব, মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণির অভিভাবক বৃন্দ স্বল্প খরচে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন।
অবিভাবকের দুঃচিন্তা থাকবে না সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয়ভার নিয়ে। প্রতিটি অবিভাবক তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারবে। লেখাপড়ার গতি বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। সকল পেশার এবং সকল শ্রেণির লোকেরা তাদের সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার সমান সুযোগ সুবিধা পাবে। সন্তানের লেখা পড়ার ব্যয়ভার নিয়ে অবিভাবকদের পিছু টান থাকবে না।
সংসারের বরণ পোষণ করার পরেও সন্তানের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা হবে বিদ্যালয়মুখী। পাঠদানের প্রতি হবে মনোযোগী। দেশের গ্রামাঞ্চলেও শহরের ন্যায় ব্যাপক হারে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। গ্রাম এবং শহরে একই মানের শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হবে শিক্ষা ব্যবস্থা। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ শিক্ষকের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা যা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীরা নতুন তথ্য উপাত্ত জানার সুযোগ সুবিধা পাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটবে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে পড়বে দেশের উন্নয়নে। কথায় আছে, যে দেশ যত শিক্ষিত, সে দেশ তত বেশি উন্নত। দেশে অশিক্ষিত লোকের সংখ্যা কমে যাবে।
শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। দেশের উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। বেকার সমস্যার সমাধান হবে। নিজ নিজ উদ্যোগে মানুষ স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করবে। বেকারত্ব কমে আসবে। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে ব্যাপক হারে। চাকরি করার প্রবনতা কমে আসবে। দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে। পরের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। দেশ হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। যেখানে থাকবে না কোন প্রকার বৈষম্য।
সকল শ্রেণির এবং সকল পেশার লোকেরা উপভোগ করবে সমান সুযোগ সুবিধা। নতুন সূর্যের উদয় হবে এই সোনার বাংলায়। প্রত্যেকের মুখে হাসি ফুটবে। থাকবে না কোন জাতি ভেদাভেদ। অভাব অনটন থাকবে না। হাহাকার থাকবে না। অবৈধ পথে রোজগার করার প্রবণতা কমে আসবে। সমাজ ব্যবস্থায় আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই চিরতরে নির্মূল হয় যাবে সমাজ কিংবা রাষ্ট্র থেকে।
শিক্ষিত জাতি গঠনের নিপুণ কারিগর হলো শিক্ষক। আর শিক্ষক জাতি যদি অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে তাহলে প্রকৃত শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটতে বাধ্য। এই ডিজিটাল যুগেও শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বৈষম্য বিরাজমান। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য থাকলে শিক্ষকদের পাঠদানের প্রতি মনোযোগ কমে আসবে যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ।যদি শিক্ষকদের অধিকার আদায় করার জন্য রাজ পথে আন্দোলন করতে হয় তা সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা। স্বাধীন বাংলাদেশে সকলে সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা।
কেউ পায় পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সুবিধা আবার কেউ পায় নাম মাত্র সুযোগ সুবিধা। সরকারি চাকরিজীবী পায় পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সুবিধা আর বেসরকারি শিক্ষকরা পায় নাম মাত্র সুযোগ সুবিধা। স্কেল সমান হলেও বিরাট পার্থক্য হলো বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, পেনশনের মধ্যে । সরকারি শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পায় (৪০-৬০) শতাংশ হারে আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পায় মাত্র ১০০০ টাকা।
সরকারি শিক্ষকরা চিকিৎসা ভাতা পায় ১৫০০ টাকা আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পায় ৫০০ টাকা। সরকারি শিক্ষকরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন পায়। আর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবসর ও কল্যান তহবিল নামে ১০০ মাসের বেতন পান সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা।
এই ১০০ মাসের শর্ত হলো ২৫ বছর হতে হবে এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে নতুবা পাবে যত বছর চাকরি করবে তার হিসেব অনুযায়ী। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নেই বদলি সিস্টেম, নেই সন্তানের শিক্ষা ভাতা, নেই স্বল্প সুদে গৃহঋণ, নেই পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা।
বিগত ২০০৪ সাল থেকে উৎসব ভাতা দেওয়া হয় মূল স্কেলের ২৫ শতাংশ হারে। বদলি সিস্টেম না থাকার কারণে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কারণে অথবা অকারণে ক্ষমতাবানদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। বর্তমানে শিক্ষক লাঞ্ছিতের হার বেড়েই চলেছে। এই অবাঞ্চিত ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একটিই পথ তাহলো সমগ্র বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ। এর বিকল্প কোন পথ নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমরা ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের দাবি আদায়ে রাজ পথে নামতে হবে না। আমরা জানি আপনি একদিন আপনার সেই কথাকে বাস্তবে রুপ দিবেন। সেই প্রতিক্ষায় আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ একটি ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।
কখন আপনি বৈষম্যের অবসানের ঘোষণা দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা জানি আপনি আপনার কথা যেকোনো সময় বাস্তবে রুপ দিবেন সেই সাহস এবং ক্ষমতা আপনার আছে। আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আশা করি আপনি আপনার কথার প্রতিফলন ঘটাবেন খুব শ্রীঘ্রই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সাথে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে যে সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন এই অবদানের কথা বাঙালি জাতি স্মরণে রেখেছে এবং রাখবে চিরকাল। আপনি ও তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আপনার দ্বারাই সমগ্র বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি মনে প্রাণে। আপনিও এই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা ধর প্রধানমন্ত্রী এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ আপনার নিকট একটি আবদার রাখব সেটি হলো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্যের অবসানকল্পে সমগ্র বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের ঘোষণা করে আমাদের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি দিবেন ।আপনি যদি বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে আমাদের মুক্ত করেন তাহলে বাঙালি জাতি আপনার এই অবদানের কথা স্মরণে রাখবে চিরকাল।
লেখক-
মোঃ আবুল হোসেন
মহাসচিব
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক সমিতি
কেন্দ্রীয় কমিটি