শিক্ষকদের দেশের মন্ত্রী হওয়ার সাধ নেই, তাদের চুরি কিংবা দূর্নিতির টাকা ও নেই, তাই তারা লোক ভাড়া করে বড় আন্দোলন করতে পারেনা।তাই বলে কি দূর্নিতিবাজদের সাথে শিক্ষকদের একসাথে তুলনা করব?অন্যদিকে আন্দোলন না হয় ছোট কিন্তু তা তো যারা আন্দোলনে আসেনি তাদের ও দাবী।
শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে ২/৩ জন করে প্রতি আন্দোলনে হয়ত যোগ দিতেন, তাই তাদের সংখ্যা হয়ত কম মনে হয়েছিল।কিন্তু জাতীয়করনের স্বপ্ন সকল শিক্ষদের প্রাণের দাবী।এর ব্যত্যয় হলে হলে প্রমান করুন। তাছাড়া সবাই মাঠে নামলে কি জাতীয়করন দিতেন?বিএনপি সরকার শতভাগ বেতন দিয়েছেন আপনারা ১০ শতাংশ কেটে দিয়েছেন তা কি শিক্ষা ক্ষেত্রে কি খুব উন্নয়ন?শতভাগ বেতন দিলে বেসরকারি বলতে পারবেন না,তাই কি ১০ শতাংশ কর্তন?সবাই এক সিলেবাস পড়াবে,এক নীতিমালায় পড়াবে তাহলে বেতনে বৈষম্য কেন? সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এমপিওভুক্তরা সেরা ফলাফল উপহার দিলেও কি তাদের যোগ্যতা নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আছে?তাই বলি শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা যদি দেখাতে ই হয় তাহলে শিক্ষকের ক্লাসের ফলাফল দিয়েই মূল্যায়ন করুন।শিক্ষার মান উন্নয়ন করবেন বলে চিৎকার করেন কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির যোগ্যতা নির্ধারন করলেন এইচ এস সি পাস।ঐ বোকারাম শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে কি বোঝেন বলবেন কি?প্রতিষ্ঠানে যত আয় হয় তা সরকার পায় না।কিন্তু সে আয় কি শিক্ষক পায়? দূর্নিতির খোঁজ না করে,জাতীয়করন না করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দূর্নিতির সুযোগ করে দিয়ে,প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আমলাদের কিংবা রাজনীতিবিদদের ভাগ ভাটোয়ারার পথ কি সরকারি ভাবে বৈধ করছেন?গত বিশ বছরে ও শিক্ষক উৎসব ভাতা পঁচিশ শতাংশ রেখে কোন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা ভাবছেন? ঘরে ভাত নেই গায়ে লাল কোত্তা (জামা) এমন স্বপ্ন নিয়ে ধ্যান করা অপ্রত্যাশিত।শিক্ষায় জিডিপির ২.৬ শতাংশ রেখেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অন্যায় নয় কি?চাকরি না করেও কিছুদিন রাজনীতি করে বাড়ি- গাড়ি করে বিলাস জীবন গড়ে তোলা,অন্যের সন্তানদেরকে অপরাজনীতিতে ব্যবহার করে নেতা হয়ে নিজ সন্তানদের বিদেশে পড়ানো কাদের চরিত্র, শিক্ষক কেন শ্রমিকরা ও তা জানে।কতজন শিক্ষক সারা জীবন পার করেও একটি পাকা বাড়ি করতে পেরেছেন কিংবা নিজ গাড়িতে চড়ার স্বপ্ন পূরন করেছেন পরিসংখ্যান দিয়েই প্রমান করুন।দশ শতাংশ মুদ্রা স্ফীতির দেশে প্রাপ্ত বেতন দিয়ে শিক্ষক পনের দিন পার করতে না করতেই অন্যের কাছে হাত পাতছেন কিংবা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে দোকানির নিকট বাকী চাচ্ছেন,সংসারের ভার বইতে না পেরে রাতে নিরবে গুমরে কাঁদছেন তা ভেবে দেখেছেন কি? কিসের এত স্তরের বেতন কাঠামো। পদ্ধতি পাল্টান।বেতন স্তর বৈষম্য দূর করুন।মুখে মুখে সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই যুক্তি,অন্তরে বৈষম্য রীতি শিক্ষকের ই প্রাপ্তি বলে বোল পাল্টান। শেষ আট বছরে ও পে স্কেল না দিয়ে উন্নয়নের রুপকথা, রুপকথার রাজকন্যার মত মুখে আওড়ান কেমন জানি বেমানান কাকে বুঝাই। ২০২১ সালে বলেছেন, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটা বড় অংশ ঘটনাচক্রে শিক্ষক। তাহলে ঘটনাচক্রের পরিসমাপ্তি খুঁজে বের করছেন না কেন? যত দোষ নন্দ ঘোষের।মানছি বেতন বেড়েছে,ইনক্রিমেন্ট বেড়েছে,বৈশাখি ভাতা যোগ হয়েছে,কিছু চিকিৎসা ভাতা ও বেড়েছে কিন্তু তা দ্রব্য মূল্যের তুলনায় কতখানি বেড়েছে জরিপ করেছেন কি?সরকার তো সব কিছু শিক্ষকরা না চাইতেই দেয়, তাহলে গত ২০ বছরে উৎসব ভাতার পরিবর্তন নাই কেন?মেডিকেল ভাতা ,বাড়ি ভাড়া এত নগন্য কেন? আর্থিক অন্যান্য সুবিধা এত নগন্য কেন? জাতীয়করন করতে এত ভয় কেন? শিক্ষকরা সরকার পরিবর্তন নয় বরং শিক্ষকদের ভাগ্যে উন্নয়ন আন্দোলনে করছে তাতে এত ভয় কেন? অথচ উন্নত দেশ গুলোতে সর্বোচ্চ স্থানে আছে শিক্ষকতা পেশা! সবচেয়ে বেশি সম্মানী তাঁদের প্রদান করা হয়ে থাকে। আর সবচেয়ে মেধাবীরাই যাচ্ছেন শিক্ষকতা পেশায়!
১. লাক্সেমবার্গ এ প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে, বছরে ৬৪,০০০ ইউ এস ডলার পেয়ে থাকেন। এবং শিক্ষকতার ১৫ বছর পরে, ৯৮,০০০ ইউ এস ডলার পান।
২. সুইজারল্যান্ডে একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে বছরে ৪৭,৫০০ ইউ এস ডলার পেয়ে থাকেন। এবং শিক্ষকতার ১৫ বছর পরে ৬৯,০০০ ইউ এস ডলার পান।
৩. জার্মানে স্কুলের একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে বছরে ৪৭,৫০০ ইউ এস ডলার পেয়ে থাকেন। এবং শিক্ষকতার ১৫ বছর পরে, বছরে ৬৪,০০০ ইউ এস ডলার পান।
৪. নেদারল্যান্ড স্কুলের একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে বছরে ৩৬,০০০ ইউ এস ডলার পেয়ে থাকেন। এবং শিক্ষকতার ১৫ বছর পরে, বছরে ৬০,০০০ ইউ এস ডলার পান।এরকম শতাধিক উদাহরন দেওয়া সম্ভব।শুধু তাই নয় সম্মানের দিক থেকেও শিক্ষকেরা অনেক এগিয়ে আছেন। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিয়ে ২০১৩ সালে গবেষণা করে ভার্কি ফাউন্ডেশন। গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর সমাজ কাঠামোয় বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরে শিক্ষদের বৃহৎ সম্মানের চোখে দেখা হয়। চিনাদের মধ্যে ৫০ ভাগ বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের শিক্ষক হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেন।আমেরিকায় শতকরা ৩০ ভাগ বাবা-মা শিক্ষক হতে উৎসাহ দেন। কিন্তু এদেশে
সম্প্রতি Center for Educational Research রিসার্চ নামের একটি শিক্ষা গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠানের ৩৫৫ জন গার্ডিয়ানদের এক জরিপে জানা যায় শতকরা ৬৫ ভাগ বাবা-মা এবং তাদের সন্তানরা চান না শিক্ষকতা পেশায় যেতে। এদের মধ্যে বেশিরভাগের ইচ্ছা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা বিসিএস ক্যাডার(প্রশাসনিক কর্মকর্তা)র দিকে। তাদের মাঝে শতকরা ৩০ ভাগ এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কিংবা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছেন। শুধুমাত্র শতকরা ৩ ভাগ বাবা-মায়েরা এবং তাদের সন্তানরা চান শিক্ষক হতে। শিক্ষক হতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন সমাজের শিক্ষকদের মর্যাদা হ্রাস এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা।
ফলে এইসব অনিশ্চয়তা মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে পারছে না। যেখানে শিক্ষকের স্থান সর্বোচ্চ স্থানে হওয়া উচিত ছিল। সেখানে শিক্ষক আজ রাস্তায়।শিক্ষকরাই যেহেতু জাতি গড়ার কারিগর তাই তাঁদেরকে তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা এবং সম্মান দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয় কি?
তাই বিশ্বাস করি জাতীয়করনের দাবী উঠলেই না অজুহাতে আপনি এড়িয়ে যান, আপনাকে দিয়ে হবেনা বুঝতে পারছি কিন্তু বর্তমান সময়ের সাহসী ও জনপ্রিয় নেত্রী, মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা, সকল শিক্ষা ব্যবস্থা একযোগে জাতীয়করণের ঘোষণা করবেন এবং সেই সাথে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা নিবেন বলে বিশ্বাস করি।
বিএনপি সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন শতভাগ করেছিলেন। বিএনপি তাদের সম্প্রতি ঘোষিত ৩১ দফায় শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির পাঁচ শতাংশ ঘোষনার কথা বলেছেন যা দিয়ে জাতীয়করন সম্ভব। এখন দেখা যাক শিক্ষকদের শত বছরের লালিত স্বপ্ন জাতীয়করন কারা বাস্তবায়ন করেন।এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের শিক্ষকদের হৃদয়ের মনিকোঠায় চির স্মরনীয় ও বরনীয় হয়ে থাকতে কারা ভূমিকা রাখবেন। শিক্ষক সমাজ বিশ্বাস করে শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ স্লোগানের যথার্থতা বৈষম্য রেখে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান,আয়েশা ( রা:) মহিলা অনার্স কামিল মাদ্রাসা, সদর, লক্ষীপুর। সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক,কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটি এবং সাধারন সম্পাদক লক্ষীপুর জেলা শাখা,বিএমজিটিএ।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়