‘জনস্বার্থে’ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষিকাকে বদলি
শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্তজেলা ও আন্তবিভাগ বদলি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বেতালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাজবিনা খাতুনকে ‘জনস্বার্থে’ বদলি করা হয়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জানতে চাইলে তাজবিনা খাতুন বলেন, তিনি প্রায় দেড় মাস আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। বদলি কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই কীভাবে বদলি হলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তিনি জানেন না, জানেন তাঁর স্বামী।
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর বদলির কাজ শুরু হয়। নতুন পদ্ধতিতে বদলির কাজ হচ্ছে পুরোপুরি অনলাইনে। এই পদ্ধতিতে ইতিমধ্যে নিজ উপজেলার মধ্যে দুবার সহকারী শিক্ষক এবং একবার প্রধান শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল থেকে সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের একই জেলার মধ্যে আন্ত–উপজেলা অনলাইন বদলি কার্যক্রম শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখনো সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের আন্তজেলা ও আন্তবিভাগ অনলাইন বদলি কার্যক্রম শুরুই হয়নি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্ধারিত আইডি ব্যবহার করে শিক্ষকদের বদলির জন্য আবেদন করতে হয়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ওই শিক্ষক বদলির যোগ্য কি না বা কোন বিদ্যালয়ে বদলি হবেন, তা নির্ধারিত হয়। বদলিপ্রত্যাশী সহকারী শিক্ষক অনলাইনে আবেদনটি করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনিও ওই সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে দেন সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি সেটি যাচাই করে পাঠান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি সেটি যাচাই করে পাঠান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে। ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠিয়ে দেন আবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির বিষয়ে আদেশ জারি করেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যান।
নতুন পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষক বদলি হয়। এর বাইরে শিক্ষকদের বদলির কোনো সুযোগ নেই। সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের আন্তজেলা ও আন্তবিভাগ অনলাইন বদলি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সহকারী শিক্ষক তাজবিনা খাতুনের বদলির আদেশ করেছে অধিদপ্তর।
মো. মোসলেম উদ্দিন, উপপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়
একই পদ্ধতিতে বদলি হন প্রধান শিক্ষক। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যাচাই করে পাঠান ডিপিইওর কাছে। ডিপিইও সেটি যাচাই করে পাঠান বিভাগীয় উপরিচালকের (ডিডি) কাছে। ডিডি সেটি মঞ্জুর করে পাঠিয়ে দেন আবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির বিষয়ে আদেশ জারি করেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, বাঘারপাড়া উপজেলার বেতালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাজবিনা খাতুনকে বিদ্যালয়ের বিদ্যমান শূন্যপদে তাঁর নিজ বেতন ও বেতন স্কেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলিভিত্তিক নিয়োগ করা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর ১৫ জানুয়ারি বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র নেন তাজবিনা খাতুন।
বাঘারপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের অনলাইনে বদলি হচ্ছে। কিন্তু অধিদপ্তর সহকারী শিক্ষক তাজবিনা খাতুনের বদলির আদেশ করেছে। আমরা আদেশটি যাচাই–বাছাই করে তাঁকে ছাড়পত্র দিয়েছি। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই।’
খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষক বদলি হয়। এর বাইরে শিক্ষকদের বদলির কোনো সুযোগ নেই। সহকারী ও প্রধান শিক্ষকদের আন্তজেলা ও আন্তবিভাগ অনলাইন বদলি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সহকারী শিক্ষক তাজবিনা খাতুনের বদলির আদেশ করেছে অধিদপ্তর।’
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মনীষ চাকমার দাপ্তরিক টেলিফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়