ছড়াচ্ছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট
নিউজ ডেস্ক।।
স্থানীয়দের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে শুরু করেছে -অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, পরিচালক আইইডিসিআর
লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে -মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জ
শনাক্ত হওয়া সাতজনের নাম-ঠিকানা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে -ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, সিভিল সার্জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ
স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে করোনার ভারতীয় ধরন। চলতি মাসের শুরুতে দেশে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। ওইদিন দুইজন ভারতফেরত ব্যক্তির নমুনায় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। গতকাল আরও ১৩ জনের নমুনায় ভারতীয় ধারার করোনা চিহ্নিত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ২৩ জনের নমুনায় ভাইরাসটি শনাক্ত হলো। নতুন ১৩ জনের মধ্যে আটজন ভারত ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই। তারা স্থানীয়ভাবে (কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের দ্বারা) সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে সীমান্ত। তবে সীমান্তবর্তী জেলায় বন্ধ হয়নি অরক্ষিত সীমান্তে অবৈধ যাতায়াত। ফলে সংক্রমণ আরও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর আগে করোনা রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে দেশে যুক্তরাজ্য, আফ্রিকা ও ব্রাজিলে সৃষ্ট নতুন ধরনের করোনার উপস্থিতি মিলেছে।
স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত আটজনের সাতজনের বাড়ি সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গত ১৯ মে পাঠানো ৪২ করোনা শনাক্ত রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সের পর নিশ্চিত করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যে সেখানে সাতদিনের লকডাউন চলছে। এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে ভর্তি করোনা রোগীর অধিকাংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার। জনস্বাস্থ্যবিদদের ভাষ্যমতে, সীমান্তপথে অবৈধ চলাচলে করোনা ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ছে। এসব যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। আরও বেশি রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে হবে। তাহলে দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কোন পর্যায়ে রয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ৮ মে ভারত থেকে আসা দুইজনের শরীরে প্রথম করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। যারা উভয়ই ভারত থেকে দেশে ফেরেন। এ পর্যন্ত ২৩ জন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে নতুন করে ১৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন সম্প্রতি ভারত সফর করেন। বাকি আটজন ভারতে না গিয়ে অন্যদের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই রয়েছে সাতজন। এ সংক্রান্ত তথ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (জিআইএসএআইডি) শেয়ার করেছে আইইডিসিআর। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বি.১.৬১৭ নামের এই ভ্যারিয়েন্টটি গত বছর প্রথম ভারতে শনাক্ত হয়। ইতোমধ্যে ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে ঘোষিত করোনার এই ধরনটি। এটি ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে ঘোষিত করোনার চতুর্থ ধরন। এর আগের তিনটিও বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। সেগুলো হলো করোনার যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের ধরন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ‘ঈদের পর জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৯ মে শনাক্ত হওয়া ৪২ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। শনিবার সকালে রিপোর্ট আসে, তার মধ্যে সাতজন ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এরা সবাই দেশে অন্যদের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়া ওই সাতজনের নাম-ঠিকানা এখনো প্রশাসনের হাতে আসেনি। এলে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জেলায় ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। আইইডিসিআরে জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য যেই ৪২ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছে প্রশাসন।’ এ বিষয়টি নিশ্চিত করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘সমপ্রতি ভারতে যাননি এমন সাতজনের শরীরেও করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। সুতরাং এটি নিশ্চিত যে, স্থানীয়দের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে শুরু করেছে।’