ছাত্রীদের আতঙ্ক শেকৃবির শিক্ষক মুকুল
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ ক্লাসে আকারে ইঙ্গিতে স্যার নানা কিছু বুঝাতে চান। শিক্ষক হলেও ছাত্রীদের সঙ্গে তার আচরণ শিক্ষকসুলভ নয়, বরং অস্বস্তিকর। এসএমএস দিয়ে বা ফোন করে ছাত্রীদের ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করেন। দুর্বলতা বের করে, মধ্যবিত্ত এবং বাবা মারা যাওয়া ছাত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। বিভিন্ন জায়গায় একান্তে দেখা করতে বলেন। তার কথায় রাজি না হলেই শুরু হয় নানা হুমকি-ধামকি। ক্লাসে অপমান আর কটু কথা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু জাফর আহমেদ মুকুলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন ওই অনুষদের ভুক্তভোগী বেশ কিছু ছাত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নম্বর বেশি দিয়ে শিক্ষক বানানোর প্রলোভনে কাছে টানার চেষ্টা, প্রতিদিন সকালে রুটিন মাফিক কল-মেসেজ, গভীর রাতে ভিডিও কল, একা কফি শপে ডাকা, ছাত্রীদের বাসার সামনে গিয়ে ঘুরতে বের হতে বলা, অসময়ে কল করে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ছাড়াও একাডেমিক কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগও উঠে এসেছে।
২৮ মার্চ ভুক্তভোগী ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টরের কাছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেশ করেন। ছাত্রীদের এসব অভিযোগের প্রমাণাদি যুগান্তরের হাতে এসেছে।
অভিযোগপত্রে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি নিজেকে ক্লাসে লাইসেন্সধারী মাস্তান এবং শিক্ষার্থীদের লাইসেন্সবিহীন মাস্তান বলে অভিহিত করেন। মনগড়া সিলেবাসে এবং সিলেবাসের বাইরে পরীক্ষা নেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে কেউ যাতে মুখ খুলতে না পারে সেজন্য প্রতি সেমিস্টারে তার ক্লাস রয়েছে এবং তার থেকে ‘নিস্তার’ নেই উল্লেখ করে হুমকি দেন শিক্ষার্থীদের। এমনকি তিনি ক্লাসে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হয়রানি করেন বলে প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীকে পাগল ও অটিস্টিক বলে সম্বোধন করেন-অভিযোগ ছাত্রীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যকে হেয় করার অভিযোগও উঠে এসেছে অভিযোগপত্রে। উপাচার্যের নির্দেশের পরও মেকআপ পরীক্ষা নেননি এবং পরবর্তীতে উপাচার্যের কলও রিসিভ করেননি বলে ক্লাসে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করেন শিক্ষক মুকুল।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, ডিগ্রিসংক্রান্ত জটিলতায় তিনি অনুষদের শিক্ষার্থীদের ডিন ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাপ দেন এবং এর প্রতিদান হিসাবে সাজেশনের কথা বলে অনুগত আন্দোলনকারীদের প্রশ্নপত্র বিতরণ করেন। এছাড়া নিয়মবহির্ভূত হলেও তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাস টেস্টে এবং ফাইনালের কুইজে রেজিস্ট্রেশন নম্বরের পাশাপাশি নাম লিখান। অসম নম্বর বণ্টনের উদ্দেশ্যে এবং পছন্দের শিক্ষার্থীকে প্রেজেন্টেশনের জন্য নির্বাচিত করার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষক মুকুলের বিরুদ্ধে।
ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের অভিযোগের বিষয়ে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধকল্পে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক লাম ইয়া আসাদ বলেন, এ রকম কিছু থাকেই যারা সুযোগ নিয়ে এসব কাজ করে থাকে। কারণ, ছাত্রীরা ভয়ে কিছু বলতে পারে না। আমরা তার (মুকুলের) বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরই আমরা কমিটির সবাই বসব।
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক আবু জাফর আহমেদ মুকুল বলেন, এরকম কিছু আসলে ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। শিক্ষার্থীরা আমাকে প্রতিপক্ষ ভেবে এসব অভিযোগ করে থাকতে পারে। কুইজে রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি নাম লেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নাম্বারিংয়ে যেন সমস্যা না হয় তাই নাম লিখতে বলি।
একাডেমিক অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। অতি শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
প্রসঙ্গত, দশ বছর আগেও এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়