চোখে দেখা মক্কা-মদিনা
পূণ্যভূমি মক্কায় সমাবশে ভিত্তিক মুসলমানদের অন্যতম ইবাদতের নাম হল হজ্ব। ইসলামের ৫টি স্তম্ভরে মধ্যে হজ্ব এর আবিধানিক অর্থ হল-সংকল্প করা, ইচ্ছা করা ও সাক্ষাত করা। সন্মান প্রর্দশনরে নিমিত্তে নির্দিষ্ট সময়ে কিছু কাজের মাধ্যমে বায়তুল্লাহ শরীফ যিয়ারত করার ইচ্ছাকে হজ্ব বল। রসূল (স.) বলনে, ‘যে ব্যক্তি হজ্ব সমাপন করার ইচ্ছা রাখে, সম্ভব যথাশীর্ঘই আদায় করে নেয়। সবপ্রথম হজ্ব হযরত আদম (আ.) ভারত উপমহাদশে থেকে সমাপন করেন॥ তিনি ৪০বার হজ্ব করেন এই উপমহাদেশ থেকে।
হজ্বরে মূল আনুষ্ঠানিক কাজ হল-বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা। আল্লাহ বলেন-আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দন্ডায়মানদের জন্য ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য। আল্লাহ আরো বলেন, তারা যেন সংরক্ষিত ঘরের তাওয়াফ করে। নবী (স.) বলেন-আল্লাহ বায়তুল্লাহ শরীফে প্রত্যহ ১২০টি রহমত নাজিল করেন তম্মধ্যে
ক. ৬০টি তাওয়াফকারীদের জন্য
খ. ৪০টি নামাজ আদায়কারীদের জন্য
গ. ২০টি বায়তুল্লাহ দর্শনকারীদের জন্য। হাদিসে আরো আছে ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করেন তাহার এক কদম উঠাইয়া আরেক কদম রাখার পূবেই আল্লাহ একটি পাপ ক্ষমা করেন, ১টি নেকি লেখিয়া দেন এবং ১টি র্মযাদা বাড়িয়ে দেন।’
১৯৮৬ সাল। বাবা গেলেন হজ্ব পালন করতে। আমি খুব ছোট্ট মানুষ। আজকের মত এতটা আধুনিক হজ্ব ব্যবস্থাপনা তখন ছিল না। ছিল না যোগাযোগ। যেদিন হজ্বে গেলেন না ফেরা পযন্ত আর কারো কোন খবর পাওয়ার বা নেয়ার সুযোগ ছিল না। তেমনি এক অবস্থায় আমরা ভাইবোন পালাক্রমে হাইওয়ে রোডে অবস্থান করতাম কখন বাবা আসবেন।
১০ গ্রাম মিলিয়ে হয়ত ১ বা ২জন তখন হজ্বে যেতেন। এভাবে রাস্তায় দীঘ মাস অবস্থানের পর একদিন বাবা ফিরে এলেন। সে কি অবস্থা। এই সময়ে বসে থাকতে থাকতে আর লাব্বায়েক উচ্চারণ করতে করতে কখন যে নিজের অজান্তেই হজ্ব করার মনোবাসনা করে ফেললাম তা বুঝে উঠতে পারিনি।
অবশষে। ২০১২ সালে আমার স্ত্রীকে সহ পবিত্র ঘররে পথে রওনা দিলাম। ২ অক্টোবর ২০১২। মোট ২৯ দিন ছিলাম মক্কা ও মদিনা। এই আমার প্রথম পবিত্রঘরে ও আমার প্রিয় নবীর রওজায়। জাতীয় কবি নজরুল-‘বক্ষে আমার কা’বার ছবি চক্ষে মুহাম্মদ রসূল।’ আসলেই আমি চলে গিয়েছি। কোন আবেগে।
কোন ভালোবাসায়। এখনও ঘুরে ফিরি। কি দেখে এলাম। মন মানে না। প্রথমে আমার নবীর রওজায় ৮দিন। সোনার মদিনা বলতে শুনেছি। দেখার পর সত্যিই সোনার মদিনা। চোখে না দেখলে এটি বিশ্বাস করানো যাবে না। তারপর ২১দিন মক্কা। প্রথমে কালো ঘর বায়তুল্লাহ। চোখে পড়ার পর সব ভুলে গেলাম। কি দেখলাম? কিভাবে? এখনও স্বপ্ন মনে হয়।
মক্কা মদিনার অলি গলি হাটছি। দেখেছি। ইসলাম ও এর ইতিহাস। মুসলিম জাতি হিসাবে আমাদের গৌরব। ঐতিহ্য। ঘরে ২জন শিশু সন্তান। একজনের বয়স ৫বছর অন্যজন ৩বছর রেখে আমরা স্বামী-স্ত্রী চলে গেলাম। কোন আবেগে? কিসের টানে? সে টান এখনও শেষ হয়নি। আল্লাহ তাদের সাথে ছিলেন। এই এক অদ্ভুত আল্লাহর রহমত। এই পর্যন্ত ১০বার সুযোগ পেয়েছি॥
আরাফাতে বসেই মনেহল আমরা সেই জাতি যাদের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। আমরা সেই জাতি যাদের রয়েছে গৌরবময় ক্ষমার ইতিহাস। সেই ইতিহাস ধরেই আমরা সমৃদ্ধ। আমরা পরিপূর্ণ। এই গৌরবময় ইতিহাস জানা ও বুঝার জন্য আমাদের পবিত্র ভূমিতে যাওয়া সক্ষম থাকতে উচিত। একসাথে ইয়া আল্লাহ। ক্ষমা কর। বুকফাটা সেই আওয়াজ এখনও কানে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়। এই আওয়াজের অংশ হওয়ার জন্য হজ্বে চলুন।
আল্লাহ কিভাবে ক্ষমা চাইতে হয় জানি না। ক্ষমা কর। কিভাবে কাঁদতে হয়, কোন শব্দটি তোমার পছন্দ কিছুইতো জানি না। ক্ষমা কর। এমন এক জায়গা যেখানে না গেলে কোনভাবইে বুঝাতে পারব না –কি বলতে চাইছি। আল্লাহ তুমি আমাদের জন্য তোমার ঘর দেখার, জিয়ারতের সুযোগ করে দিও-আমাদরে তুমি কবুল করে নিও। তোমার বায়তুল্লাহ তওয়াফ না করে মরতে চাই না-বার বার সুযোগ করে দিও।
পৃথিবীর এই কঠিন মূর্হুতে তোমার কাছে তোমার বায়তুল্লাহ, তোমার নবীর রওজা, আরাফা-মিনা মোজদালিফার উসিলায় আমাদের ক্ষমা করে দিও। আমাদের ভুল গুলোকে তুমি আর ধারন করে আমাদের শাস্তি দিও না।--আমিন ( চলমান-৩ পর্বে সমাপ্ত)
লেখক-
ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন