ঘুষ নেওয়ার দায়ে শুধু বদলি হন শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ
কক্সবাজারঃ ঘুষ লেনদেনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কক্সবাজারের রামু উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েক মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। যেখানে দেখা যায় ওই কর্মকর্তাকে ঘুষের টাকা নিতে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদকে রামু থেকে বদলি করে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। গত ৭ই জুন জারি করা একই প্রজ্ঞাপনে সারা দেশের মোট ১৯ জন শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে, ঘুষ গ্রহণের স্পষ্ট ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরেও শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে এই শিক্ষা কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ না করে বদলি করে অন্য উপজেলায় পদায়নের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলার একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। অসাধু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল বলছেন উপজেলার একাধিক সুশীল ব্যক্তিবর্গ।
নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম.এ কালাম সরকারি কলেজের অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও বিচার না হওয়া এবং চাকরিতে বহাল রাখার প্রবণতা সরকার এবং সাধারণ জনগণকে একটি দীর্ঘ মেয়াদি হুমকিতে ফেলবে। পাশাপাশি অসাধু দুর্নীতিতে লিপ্ত কর্মকর্তারা অসৎ কাজে আরও উৎসাহ হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ঘুষ লেনদেনে অভিযুক্ত রামু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ রাঙামাটি উপজেলার বাঘাইছড়িতেও শিক্ষা কর্মকর্তা থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে একাধিক ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণায়লের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিলো এবং শিক্ষা দফতর থেকে তাকে তিরষ্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিলো।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সামনে আসার পর পরই লিখিতভাবে শিক্ষা অধিদফতরকে জানিয়েছিলাম আমরা। তারপরে গতকাল বদলির আদেশ আসে, পরে হয় তো আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সর্বশেষ রামু উপজেলার ধেছুয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মোবাইলে গোপনে ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ঘুষ নিচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ এবং ঘুষের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলছেন। এ নিয়ে গত ১১ মে ‘যেখানেই যান ঘুষ খান শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে ও ভিডিও প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর নানান প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে।
এদিকে প্রতিবেদকের হাতে আসা নূর মোহাম্মদের আগের তিন কর্মস্থলের কিছু নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বেসরকারি স্কুল ও মাদরাসা এমপিওভুক্তি, শিক্ষকদের তালিকাভুক্তি, বেতনের স্কেল বৃদ্ধি, নামের ভুল সংশোধন, মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনসহ নানা বিষয়ে বর্তমান কর্মস্থলে ঘুষ নেওয়ার সাতটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি লিখিত এবং ছয়টি মৌখিক পেয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নোটিশে নূর মোহাম্মদকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া একই বছর তার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। রামুতে কর্মরত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ এর আগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১০ (মাধ্যমিক-১)-এর ১০৬৮ নম্বর স্মারক অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সেমিস্টারের উপবৃত্তি দিতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে টাকা নেওয়া, ২০১৫ সালে বিনামূল্যের বই বিতরণে বিভিন্ন স্কুল থেকে টাকা আদায়, খেদামারা উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শনের পর পরিদর্শন বই ফেরত আনার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তদন্তে রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই তদন্তে তৎকালীন বাঘাইছড়ি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে তাকে কেন চাকরিচ্যুত করা হবে না, এ মর্মে কারণ দর্শাতে নোটিশ জারি করা হয়েছিল। পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর বিধি ৩-এর উপবিধি (বি) ও (ডি) অনুযায়ী তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে সেই নোটিশের আর অগ্রগতি নেই, পরবর্তী সময় তাকে রামুতে পদায়ন করা হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়