গোপালপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা বেহাল
টাঙ্গাইলঃ জেলার গোপালপুরে ভেঙে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার্থীশূন্য অনেক স্কুলে শুধু চেয়ার-বেঞ্চ শোভা পাচ্ছে। স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ শিক্ষকদের না থাকার কারণে বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে উপজেলার প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জানা যায়, গোপালপুর উপজেলায় ১৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি হিসাব মতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। বেসরকারি সংস্থার মতে করোনাকাল পার হওয়ার পর শিক্ষার্থী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু শিক্ষা বিভাগের হিসাব আগেরটাই দেখানো হচ্ছে।
সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি ও প্রান্তিক শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে দেশের প্রায় সবক’টি বিদ্যালয়ে সুদৃশ্য বহুতল ভবন নির্মাণ, ডিজিটাল ল্যাব তৈরি, অত্যাধুনিক শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, মানসম্মত ওয়াশরুম, দামি চেয়ার-বেঞ্চ-টেবিল আলমিরা, বৈদ্যুতিক পাখাসহ সকল উপকরণ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল বাদে কোনো স্কুলেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষার্থী নেই। কোনো কোনো স্কুলে ৫-৭জন শিক্ষার্থী নিয়মিত উপস্থিত থাকে। কোনো কোনোটিতে ৫০-৬০ জন করে কাগজে-কলমে ভর্তি দেখানো হলেও স্কুলে সারা বছর ক্লাস ও পাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নেয় ২০-২৫ জন।
কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। ডুবাইল দক্ষিণপাড়া এবং সেনেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীই নেই। হরিষা, সূতি লাঙ্গলজোড়া, পঞ্চাশ, হরিদেববাড়ী, ধোপাকান্দি, ধোপাকান্দি পশ্চিম পাড়া এবং পশ্চিম ডুবাইলসহ ৪৭টি স্কুলে খাতা-কলমে ২৫-৩০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে।
পৌরসভার ডুবাইল দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী নেই। তিনটি ক্লাসরুমেই তালা ঝুলছে। অফিস কক্ষে ৪ জন শিক্ষক অলস সময় পার করছেন। একজন আরেকজনের সঙ্গে গল্প করছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, দুই চারজন ছাত্র প্রতিদিনই স্কুলে আসে। স্কুলের পাশেই ফোরকানিয়া ও নূরানী মাদ্রাসা গড়ে ওঠায় অভিভাবকরা বাচ্চাদের সেখানে নিয়ে পড়াশোনা করান। এজন্য তাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গ্রামে স্কুল গমনোপযোগী শিশুর সংখ্যা ১২২ জন। এসব শিশুরা কেন বাড়ির পাশে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রেখে উচ্চহারে বেতন দিয়ে ওইসব মাদ্রাসায় বাচ্চাদের পড়ালেখা করাচ্ছেন এমন প্রশ্নে স্কুলের অপর তিন শিক্ষক জানান, করোনাকালে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও এসব মাদ্রাসা খোলা ছিল। ফলে শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ে। বহু চেষ্টা করেও তাদেরকে আর স্কুলমুখো করা যায়নি। স্কুলে অভিভাবক ও মা সমাবেশ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলেও ফলাফল শূন্য। এ ব্যাপারে স্কুল পরিচলানা কমিটিও কোনো সহযোগিতা করছে না।
গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার চালিয়ে স্কুলে ফেরানো যাচ্ছে না। শিক্ষা বিভাগের উদাসীনতা ও অভিযোগ আমলে না নেয়ায় গ্রামবাসী স্কুলে বাচ্চা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অনেক অভিভাবক। এদিকে অনেক স্কুলে যে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে সেখানকার শিক্ষকরা তা চালাতে জানেন না। কোনো কোনো স্কুলের ল্যাপটপ আলমিরায় দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ তা নিজের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানকে দিয়েছেন। গোপালপুর উপজলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, যেসব স্কুলে একদম শিক্ষার্থী নেই অথবা শিক্ষার্থী নামমাত্র, তাদেরকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। হোমভিজিট এবং মা সমাবশ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গোপালপুর উপজলা শিক্ষা অফিসার মফিজুর রহমান জিন্নাহ জানান, পড়াশোনার জন্য স্কুলে শিক্ষার্থী থাকা চাই।
সেই ছাত্রছাত্রীই যদি স্কুলে না থাকে তাহলে কেমন হবে? করোনার কারণে এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। শিক্ষকদের চাপের মুখে রাখা হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও প্রতিদিন স্কুল ভিজিট করছেন। শিক্ষা অধিদপ্তর গত ৬ই মার্চ এক ঘোষণায় জানিয়েছে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫০-এর নিচে সেসব স্কুলের সংখ্যা কমিয়ে ওই এরিয়ার মধ্যে অন্য একটি স্কুলের সঙ্গে একত্রীকরণ করা হবে। গোপালপুরে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পড়ালেখার পরিবেশ মানসম্মত না হলে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় একত্রীকরণের বলয়ে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়