গোদাগাড়ীতে সিরাজ কি প্রভাষক না প্রতারক?
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের প্রতারক প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে পিয়ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে ৩ লাখ টাকা এবং ঢাকায় বিভিন্ন সময় বড়, বড় মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলা বিভিন্ন মৌসুমি জিনিস কিনে দেয়ার নাম করে আরও ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গোদাগাড়ীর টক অফ দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে।
প্রতারনার স্বীকার হয়ে চাকুরী না পেয়ে, সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন গরীব চা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জনি। জনি কলেজের পাশে একটি ছোট দোকানে চা বিক্রি করতো। প্রভাষক চা পান করতে গিয়ে প্রতারনার ফাঁদ পাতে গরীব জনির সাথে।
গত ১৯ জুন প্রতারণার স্বীকার হাবিবুর রহমান জনি কলেজ অধ্যক্ষ ও গর্ভনিং বডির সভাপতির নিকট প্রভাষক সিরাজুলের বিরুদ্ধ লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম জনিকে কলেজে পিয়ন ( এমএলএস) পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে ২০১৬ ইং সুকৌশলে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এবং বিভিন্ন সময়ে ঢাকা পাঠানোর মিথ্যা কথা বলে বড়, বড় মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলা, ফল, ফলারি বাবদ তার নিকট হতে আরও দেড় লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন প্রতারক প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম। ৬ বছর পার হলেও জনিকে প্রতারক চাকুরী দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না বলে লিখিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন। জনি আরও উল্লেখ করেন, তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তার সাথে শুধু প্রতারণা করেছেন। তিনি একজন শিক্ষক নামধারী প্রতারক এবং শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক। টাকা ফেরতসহ তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।
কলেজ গর্ভনিং বডির সদস্য ও রাজাবাড়ীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম কলেজে পিয়ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে ২০১৬ ইং সালে জনির নিকট হতে ৩ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহন করেছেন।
সে সাথে বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় বড়,বড় মাছ, মাংশ,আম, গম, ছোলাসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে সিরাজুলকে দিয়েছেন এতে তার দেড় লক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জনি আমার কাছে স্বীকার করেছে। আমি তাকে বলেছি এ একটা শিক্ষক নামধারি প্রতারক, সে তোমাকে চাকুরি দেয়ার ক্ষমতা রাখে না, তুমি চাকুরি পাবে না তার উপর চাপ সৃষ্টি করে টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা কর। তার বিরুদ্ধে জনি কলেজ অধ্যক্ষ ও সভাপতি নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যপারে প্রতারক প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি আপনাদেরকে দিয়েছেন। টাকার বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। তবে মাছ, মাংশ, আম, গম, ছোলা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কলেজে দেখা করতে বলেন।
ওই সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন গনিত বিভাগে প্রভাষক নিরেন্দ্রনাথ সাহা তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই সময় সিরাজ সাহেবকে চাকুরীর নাম করে টাকা নিতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি টাকা নিয়েছেন সুযোগ সুবিধাও নিয়েছেন। একাধিকবার জনিকে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেছি। অভিযোগে আমাকে স্বাক্ষী করার বিষয়টি আমার জানা নেই।
রাজাবাড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সেলীম রেজা এ প্রসংগে বলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে জনি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। সাক্ষী হিসেবে কলেজের ৩ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেছি, তারা বলেছে সিরাজুল সাহেবকে টাকা নিতে নিষেধ করেছিলাম তার পরেও সে নিয়েছেন। টাকা ফেরত দিতে বলেছি কিন্তু এখনও দেন নি। অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমি সিরাজুল সাহেবকে দ্রুত টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে নেয়ার কথা বলেছি। তা না হলে বিষয়টি গর্ভনিং বডির সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে জানানো হবে। কিন্তু তা না করে গত শনিবার সিরাজুল জনির নিকট গিয়ে হাতে পায়ে ধরে তাকে দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি, রাজশাহী জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মোঃ শাহাদুল হক বলেন,
অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি, সিরাজুল সাহেব তার ভাইকে দিয়ে আমাকে মোবাইল করাইয়ে ছিলেন যেন তার চাকুরীর সমস্যা না , আমি তাকে বলেছি আপনার ভাই সিরাজগঞ্জ থেকে এখানে চাকুরি করছেন, গরীব মানুষের নিকট একের পর এক প্রতারনা করবে এটা মেনে নেয়া যায়, তাকে ভালভাবে টাকা পরিশোধ করতে বলবেন না হলে চাকুরি ছেড়ে চলে যেতে বলবেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।