গৃহশিক্ষকের স্মৃতিতে শেখ রাসেলের দুরন্তপনা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের শৈশবকালে দুরন্তপনা এবং মানবতাবোধের স্মৃতিচারণ করলেন তার গৃহশিক্ষিকা।
শেখ রাসেলর ৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ ওয়েবিনারে এই স্মৃতিচারণ করেন গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা। ‘শেখ রাসেল: দুরন্ত শৈশবে স্বপ্নের ডানা মেলে’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় অনলাইনে অতিথি হিসেবে ছিলেন- কথাসাহিত্যিক ও শিশু একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ, শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা, বিশিষ্ট অভিনেতা ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি।
শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষিকা অধ্যাপক গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘আমি যখন রাসেলকে পাই, তখন সম্ভবত তার সাড়ে ৬ বছর। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। তখন টিউশনির টাকা দিয়ে আমার চলতো।’
রাসেলের শিক্ষক হওয়ার স্মৃতিচারণ করে তিনি জানান, সে সময় তার মাস্টার্স পরীক্ষা ছিল। তাই তিনি আর নতুন করে কোনো টিউশনি করাতে চাচ্ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী যখন রাসেলকে পড়ানোর কথা বলেন তখন তিনি না করে দেন। কিন্তু রাসেলের মা তার কাছে ১৫ মিনিট চাইলে তিনি পড়ানোর আগ্রহটা বোঝেন এবং রাজি হন। এরপর তিনি গণভবনে যান রাসেলকে পড়াতে।
রাসেলের দুরন্তপনার কথা উল্লেখ করে গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘পড়ানোর ৯ দিনের মাথায় রাসেল প্রশ্ন করে, আপা আপনার কয় দিন হয়েছে পড়ানোর? তিনি বলেন- জানি না। তখন রাসেল বলে- আপনার ৯ দিন হয়েছে। এর আগে আমাকে যে সবচেয়ে বেশি দিন পড়িয়েছে সেটা ছিল ৭ দিন।’
পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাসেলের মধ্যে পিতা বঙ্গবন্ধুকে অনুকরণ করার একটা প্রবণতা ছিল। রাসেল স্কুলে চকলেট সবাইকে নিয়ে খেত। এই গুণটি বঙ্গবন্ধুর ছিল। রাসেল মিথ্যা বলতো না। এই গুণটিও বঙ্গবন্ধুর ছিল। বঙ্গবন্ধুকে বহিরাঙ্গণের অনুসরণের পাশাপাশি রাসেলের মননে, মানসিকতায়, চেতনায় যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল না এটা বিশ্বাস করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ ছিল রাসেল সেটা নিশ্চয় ধারণ করতো। সেটাকে অন্তরে শিশু বয়সে সবার অগোচরে লালনও করতো।’
পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাসেল হত্যার সিদ্ধান্ত একেবারেই পরিকল্পিত ছিল। এটা কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ছিল না।
শেখ রাসেলকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘যাকে শুভেচ্ছা জানাবো সেই তো নেই। সে যেখানে আছে সেখানে যেন ভালো থাকে এই দোয়াই করছি। ’
তিনি বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল, সেটা যে পৃথিবীর একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ছিল, শেখ রাসেলের স্মৃতিতে যেটা উঠে এসেছে তাতে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ সেই ৭৫ থেকে ২০২০। একটু যদি আমরা চিন্তা করে দেখি, সেই সময়ের প্রেক্ষাপট, একটা শিশু, জাতীর পিতার সন্তান, সেই পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো। শুধু রাসেল নয় প্রতিবন্ধী শিশুকেও হত্যা করা হয়। আর যারা এই হত্যাকাণ্ড করেছিল, তারা এর বিচার যাতে না হয় সে ব্যবস্থাও করেছিল।’