কোরবানি হোক শুদ্ধ নিয়তে বিশুদ্ধ সম্পদ থেকে
মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী।।
ঈদুল আযহার দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় ইবাদত হচ্ছে পশু কোরবানি। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- 'আল্লাহ তায়ালার নিকট কোরবানির দিন মানবজাতির কোরবানি অপেক্ষা অধিকতর পছন্দনীয় কোনো আমল নেই। বিচারদিনে কোরবানির পশুকে তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত করা হবে। পশুর রক্ত যমিনে পড়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার নিকট তা বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়, সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কোরবানি করো।' (সহিহ তিরমিযি: ১৩৯১)
কোরবানিসহ আমাদের প্রতিটি ইবাদত ও পুণ্যকাজ শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 'কোরবানির জন্তুর গোশত, রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছেনা, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া' (সূরা আল-হজ্জ, আয়াত: ৩৭) রাসূল সা. এর প্রশিদ্ধ হাদীস- 'আমলের কর্মফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল'- ইবাদত গ্রহনযোগ্য হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে শরিয়তের মূলনীতি। তাই কোরবানিদাতার জন্য সর্বাগ্রে আবশ্যক হচ্ছে- বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি করা। আমাদের অনেকেই লোক দেখানো, লোকলজ্জা, সম্মান অর্জন, প্রতিযোগিতা, রেওয়াজ, গোশত খাওয়া, ইত্যাদি উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন। মনে রাখতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতিরেকে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কারোও কোরবানি হলে তা কস্মিনকালেও কবুল হবেনা বরং অনেক ক্ষেত্রে তা শিরক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে আমলনামায় তা পুণ্যের পরিবর্তে মহাপাপ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আমাদের সালাত, কোরবানি, দান-সদকা তথা প্রতিটি কাজ হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কী চমৎকারভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন- 'বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব।' (সূরা আল-আনয়াম, আয়াত: ১৬২)
কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য আরেকটি আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে পবিত্র সম্পদ থেকে কোরবানি করা। পবিত্র রিযক আহারের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- 'হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক দিয়েছি, তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর।' (সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ১৭২) এ আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইবনে কাছির রাহি. লিখেছেন- দুয়া ও ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- 'হে মুমিনগণ, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি হালাল ও পবিত্র ব্যতিত কোনোকিছু গ্রহন করেন না।' (সহিহ মুসলিম: ২২১৫)
হালাল উপার্জন, ভক্ষণ ও ব্যয় সম্পর্কে এটিই ইসলামের বিধান। কোনো ব্যক্তি যদি বিশাল পাহাড় পরিমাণ সম্পদ দান-সদকা করেন বা হাজার হাজার পশু কোরবানি করেন আর তার সম্পদ হয় হারাম উপার্জনের, তবে তা থেকে অণু পরিমাণও পুণ্য অর্জন হবে না। অঢেল অবৈধ সম্পদ পুণ্য কাজে ব্যয় করে ন্যূনতম সম্পদ পবিত্র বা বৈধ করার কোনোও সুযোগ ইসলামে নেই বরং পরকালে এর জবাবদিহিতা করতে হবে এবং কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- 'কিয়ামতের দিন কোনও বান্দা পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে পা নাড়াতে পারবেনা, তন্মধ্য থেকে একটি হচ্ছে- ধনসম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে' আসুন, কোরবানিসহ আমাদের প্রতিটি নেক কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করি। শুদ্ধ নিয়ত ও বিশুদ্ধ সম্পদ হোক আমাদের পাথেয়।