কে হচ্ছেন ডিএমপির পরবর্তী কমিশনার
অনলাইন ডেস্ক।।
আগামী ৩০ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দু'বছর দায়িত্ব পালন শেষ করতে যাচ্ছেন বর্তমান কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ এ পদটিতে কাকে পরবর্তীতে ৩৫ তম কমিশনার হিসেবে আসীন করা যায় সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারে তোড়জোর শুরু হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই কমিশনার হওয়ার দৌড়ে অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটলে ৩০ অক্টোবরের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে বর্তমান কমিশনারের। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে কাকে অধিষ্ঠিত করা হবে, এজন্য যোগ্য ও সঠিক নেতৃত্ব দানকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ দৌড়ে বেশ কয়েকজন এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
কমিশনার হওয়ার সম্ভাব্য প্রথম তালিকায় আছেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিনের নাম। গোপালগঞ্জের এই কৃতি সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯১ সালে ১২ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের উন্নীত হওয়ায় ওই বছরের ২০ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি ২০০৩ সাল থেকে রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৩১ মার্চ তিনি রাজবাড়ী জেলার সন্ত্রাস দমন ও মাদক উদ্ধারে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। ঝালকাঠিতে পুলিশ সুপার হিসেবে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে তিনি পরিণত হন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিসি), সিলেট জেলা পুলিশ সুপার, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ও রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে অত্যন্ত সুনাম ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
কমিশনার হওয়ার দৌড়ে অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলামের নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তিনি বর্তমানে নৌ পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়া জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আইপিজিএমআর বর্তমানে বিএসএমএমইউ থেকে ফার্মাকোলজি স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিএস ১২ তম ব্যাচের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে পুলিশ ক্যাডারের যোগ দেন তিনি। ইতোমধ্যেই তিনি পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দক্ষতা, সততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য তিনি ৬ বার আইজিপি ব্যাজ অর্জন করেন। এছাড়া প্রশাসনিক কাজের জন্য বিভিন্ন স্বীকৃতি ও অর্জন করেছেন।
পাশাপাশি, এসব নামের সঙ্গে কমিশনার হওয়ার দৌড়ে আরো একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি ক্রাইম এন্ড অপারেশন এম খুরশিদ হোসেনের নাম।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সন্তান ১২ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডারে প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবেও তার রয়েছে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।
পুলিশ কমিশনার হওয়ার দৌড়ে তুলনামূলকভাবে আরো একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি পুলিশের বিসিএস ক্যাডার ১৫ তম ব্যাচে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জঙ্গি দমনে মনিরুল ইসলামের অসাধারণ নৈপুণ্য রয়েছে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তিনি। জঙ্গী নিয়ন্ত্রণ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার তার উল্লেখযোগ্য। এ কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তার রয়েছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা।
এসব কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশ কমিশনারের দৌড়ে আরো একজনের নাম উঠে এসেছে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র হলেও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করে চমক দেখাতে পারেন। তিনি ১৭ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারের যোগদান করেন। বিসিএসে তিনি পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখে রেখেছেন। সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কাজে যোগদানের পর কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনি ৩ বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ (পিপিএম) পদক পেয়েছেন। এছাড়াও তার একক প্রচেষ্টায় রাজার বাগ পুলিশ লাইনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজধানীর বেদে সম্প্রদায় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।