কুষ্টিয়ার সন্তান সৌমিত্রের ভারতীয় হওয়ার গল্প
নিউজ ডেস্ক।।
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনয়শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৫ নভেম্বর, রবিবার বেলা বারোটা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলকাতার মিন্টো পার্কের বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে ভারতীয় সিনেমার আঙিনায়। তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন বাংলাদেশও। তার মৃত্যু অন্যদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সেখ হাসিনাও শোক প্রকাশ করছেন।
অভিনেতার জীবনদশায় বেশ কয়েকবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন। কখনো অভিনেতা, কখনো বা কবি-আবৃত্তিকার হয়ে। এখানকার শিল্প-সংস্কৃতিকে আজীবন ভালোবেসেছেন সৌমিত্র। এই দেশ ও দেশের মানুষকে ভেবেছেন সজ্জন।
বাংলাদেশ নিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষ দুর্বলতা ছিলো। কারণ এখানেই তার পিতৃভিটা। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে তার পরিবারের আদি বাড়ি ছিলো। সেখানকার ‘কয়া’ নামক একটি গ্রামে বাস করতো সৌমিত্রের পরিবার। তার পিতামহের আমলে তার পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে চলে যান। ব্যবসা-বাণিজ্য উদ্দেশ্য তারা সেখানে যান।
সৌমিত্রের বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের উকিল। প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন। এতে করে তাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। তাই পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যান তিনি। এরপরই বাংলাদেশর সৌমিত্র হয়ে যান কলকাতার বাসিন্দা।
বিশ্ব বিখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে বড়পর্দায় পা রাখেন সৌমিত্র। ১৯৫৯ সালে এই ছবিটি নির্মিত হয়। এরপর সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এর আগে রেডিওর ঘোষক ছিলেন সৌমিত্র এবং মঞ্চে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন।
সিনেমা ছাড়াও নাটক, যাত্রা ও টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। লিখেছেন নাটক-কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনাও করেছেন। আবৃত্তিকার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিলো।
সৌমিত্রের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো- অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে।
শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করে ভারত সরকার। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা/এসজেড