কুবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিতের ৭ মাস
কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন স্থগিত হওয়ার ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন নির্বাচন নিয়ে নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ। ফলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আদৌ হবে কিনা এ নিয়ে রয়েছে সংশয়। নির্বাচন হলেও কারা নির্বাচন আয়োজন করবেন, তা নিয়েও সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে নেই কিছু উল্লেখ৷ শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্যমান দলগুলো, বলছে সংগঠনটির জন্য হলেও পূর্ববর্তী কমিটিকে দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলছেন, সবাই একমত হয়ে একসঙ্গে বসলে নির্বাচন দেয়া সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ১১তম কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলামের কমিটি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে। এই নির্বাচন কমিশনে আরও ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ড. মো. ওয়ালী উল্লাহ ও মো. আবু বকর ছিদ্দিক। এই নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। নির্বাচনকে অনিয়মতান্ত্রিক দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬ জন শিক্ষক সে সময়কার নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের (নন্দী-বিদ্যুৎ) প্রতি অনাস্থা জানান।
গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই অনাস্থা নিষ্পত্তি করতে সংগঠনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবে। কিন্তু সে সময় জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম। এই প্রেক্ষিতে সেই জরুরি সাধারণ সভায় যোগ দেয়নি অনাস্থা জ্ঞাপন করা শিক্ষকরা।
১০৬ জন শিক্ষকের অনাস্থা নিয়েই পূর্ব নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন শুরু করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই নির্বাচন কমিশন ২৪ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত কোথায় নির্বাচন হবে তা জানাতে পারেনি শিক্ষকদের। সেই ঘটনার রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ভোটগ্রহণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ফলে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
এরপর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন করার আয়োজনের জন্য আহ্বান করেন। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি নন্দী-বিদ্যুৎ কমিটির।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নন্দী-বিদ্যুৎ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক তারা সাধারণ সভা আহ্বান করার ক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হবে কি-না? হলেও কারা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন? সে বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কোনো নির্দেশনা নেই।
এ ব্যাপারে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করতে গেলে সর্বশেষ কমিটিকে (নন্দী-বিদ্যুৎ) উদ্যোগ নিতে হবে। সবকিছুর সাইনিং পাওয়ার এখনো তাদের কাছে। তারা দায়িত্ব নিয়ে বিভাগের সব শিক্ষককে একত্র করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব না হলে বিগত বছরগুলোতে যারা নেতৃত্বে ছিল তারাও যদি দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিবাদমান দলগুলোকে নিয়ে সভা করে নির্বাচন দিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি ভাগ রয়েছে। দুটো ভাগই বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে পরিচালিত। একটি কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং আরেকটি কেন্দ্রীয় অনুমোদনহীন। এছাড়া বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা সাদা দল নামে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দুই বঙ্গবন্ধু পরিষদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে নির্বাচন স্থগিত হলেও তারাও চাচ্ছেন শিক্ষক সমিতি নির্বাচন হোক।
কেন্দ্রীয় অনুমাদনহীন বঙ্গবন্ধু পরিষদের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা তো চাই নির্বাচন হোক। স্থগিত হওয়া নির্বাচনেও আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম। তবে কোন্দলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। যেই উদ্যোগ নেক আমরা নির্বাচন করতে আগ্রহী।
কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদের বর্তমান সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি প্রয়োজন। আমরা সেই প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পেরে বিগত কমিটিকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেই। নির্বাচনের জন্য যারাই আহ্বান করবে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক।
শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বেশ কয়েক বছর পর থেকেই গণতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এই শিক্ষক সমিতির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্জনও রয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত গত নির্বাচনটি ভণ্ডুল হয়েছে। ভণ্ডুল হওয়া নির্বাচনেও আমরা অংশ নিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, যে বা যারা এই নির্বাচন ভণ্ডুল করেছে তারাও কোনো উদ্যোগ নেয়নি, বিগত কমিটিও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন। এটা না থাকার ফলে শিক্ষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেহেতু পূর্ববর্তী কমিটি এখনো দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি তাই তাদেরকেই দায়িত্ব নিয়ে সব শিক্ষকদের সমন্বয়ে সভা ডেকে নির্বাচন দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা নির্বাচনে আসতে আগ্রহী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, সবাই বললে তো হবে না। আমরাও চাই নির্বাচন হোক। সংগঠনটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও নির্বাচন দরকার। নির্বাচন যখনি হয় তখন আমাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এখন সবাই যদি একমত হয় তাহলে নির্বাচন দেব। এর আগেও নির্বাচন দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্যায়ভাবে তা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এরপরও আমরা বৃহত্তরও স্বার্থে সভা ডেকেছি। সভায় অন্যরা আসেনি। তাই সবাই এখন একমত হয়ে একসঙ্গে বসলে নির্বাচন দেয়া সম্ভব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়