কুটনীতিবিদদের দেশের রাজনীতিতে তৎপরতা
২০০৭ সালে কূটনীতিক হস্তক্ষেপ : ২০০৭ সালে বিএনপির মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। নির্বাচনের ১১ দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ইয়াজউদ্দিন আহমদকে ইস্তাফা দিতে বাধ্য করেন সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতি। এর পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা ছিল পর্দার আড়ালে এবং সামনে থেকে। এদের মধ্যে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ান ছিলেন সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। এর সাথে আরো সম্পৃক্ত ছিল কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তারা প্রায়ই বিবৃতি দিতেন।
এক তরফা নির্বাচন ঠেকাতে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘ প্রতিনিধি রেনাটা লক ডেসালিয়ান সতর্ক করে দেন যে, বাংলাদেশে যদি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, নানামুখী কূটনীতিক চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের পথ তৈরি হয় এবং তার মাধ্যমে সেনা-সমর্থিত নতুন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কূটনীতিকদের কথা কখনো মিষ্টি লাগে, কখনো তেতো লাগে। রাজনৈতিক দলগুলো দেখে যে, কূটনীতিকদের কথাগুলো তাদের পক্ষে গেল না-কি বিপক্ষে গেল।’
২০১৩ সালে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো রাজনৈতিক সমঝোতা করানোর জন্য ঢাকা সফর করেছিলেন। আওয়ামী লীগ তখন বিএনপি-জামায়াত জোট বাদ ছাড়াই সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। যদিও বিএনপি তখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় ছিল।
তারানকো চেয়েছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিকে যায়। যদিও তখন আওয়ামী লীগ সরকারের উপর বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের চাপ ছিল। কিন্তু ভারত আওয়ামী লীগ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে।
এজন্য শেষ পর্যন্ত অন্যসব চাপ আওয়ামী লীগ সরকার উপেক্ষা করতে পেরেছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শুধু কূটনীতিক চাপ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব তৈরি করা কঠিন। রাজনীতির মাঠে একটি দল কতটা কৌশলী এবং রাস্তার আন্দোলনে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা কতটা রয়েছে, সেটিও অনেক ভূমিকা রাখে। সূত্র : বিবিসি এইচএস