কারিগরিতে সাত মাসে ৭ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীও এমপিওভুক্ত হয়নি
সাত মাসে ৭ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীও এমপিওভুক্ত হয়নি
কারিগরি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে হয়রানি ও ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এমপিওভুক্ত হওয়া ‘সাধারণ স্কুল ও কলেজের’ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও কারিগরি সেক্টরে সাত মাসে ৭ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীও এমপিওভুক্ত’ হতে পারেননি। শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করেও অনেক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। আবার অনেক শিক্ষক শর্তসাপেক্ষে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শর্ত পূরণ করা হলে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। যোগ্যতার ঘাটতির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাচ্ছে না।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪৮৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী সংযুক্ত ভোকেশনালে ৯ জন, এছাড়া স্বতন্ত্র কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯ জন পর্যন্ত জনবল পাবেন। এতে অন্তত ৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা, কিন্তু এমপিওভুক্ত হয়েছেন মাত্র ৩৯৮ জন। আর আবেদন করেছেন ৩ হাজার ২ জন শিক্ষক-কর্মচারী। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও আবেদন করেননি ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির ঘোষণা দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৯ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১ হাজার ৬৩৩ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ ৯৮২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করে। এই ২ হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর আবেদনের সুযোগ পান।
শিক্ষকেরা বলছেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১০ থেকে ১৫ বছর পূর্বে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা নিয়োগ পেয়েছেন ২০১০ সালের বিধিমালায়। কিন্তু ২০১৮ সালের বিধিমালায় অনেক পদ বাদ দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতাও বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়ার পরও এখন এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। ৩১ ধরনের কাগজপত্র যুক্ত করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, করোনার সময় এসব কাগজ সংগ্রহও দুরূহ হয়ে পড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, অধ্যক্ষসহ প্রভাষক পদগুলোতে কর্মরত শিক্ষকেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০-১৫ বছর আগে সনদ অর্জন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বিষয়ে আপত্তি দিয়েছে। ফলে এসব প্রার্থীর এমপিওভুক্তি আটকে যাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের এমপিওভুক্তিতে আপত্তি জানাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর প্রার্থীদের বিভিন্ন সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারির সময় বোর্ডসহ পাবলিক বিশ্বদ্যািলয় বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সার্টিফিকেট যাচাইয়ে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণেও এমপিওভুক্তি বিলম্ব হচ্ছে।
বাংলাদেশ বেসরকারি কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নানা ধরনের ভোগান্তি হচ্ছে। ফলে শিক্ষকেরা যথাসময়ে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে। আশা করছি, শিক্ষকদের দ্রুত এমপিওভুক্তির জন্য অধিদপ্তর কাজ করবে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন আন্দোলনের পরে এমপিওভুক্তি পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষকেরা। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য নেমে পড়েছেন। কিন্তু কারিগরি ৩৮টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও শিক্ষকেরা আবেদন করেননি। অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতির অনাগ্রহের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে, নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে অনেকটা স্পষ্ট করা হবে। কাজ চলছে। আশা করছি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই সংশোধিত নীতিমালা চূড়ান্ত হবে এবং এসআরও হিসেবে জারি হবে। তখন অনেক সমস্যারই সমাধান হবে বলে তিনি জানান। সূত্রঃ ইত্তেফাক