কষ্টে দিন কাটছে ৫০০ শিক্ষকের
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশ পান সাতক্ষীরার এনামুল হক। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তাকে যে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করে, সেখানে গিয়ে জানতে পারেন পদই ফাঁকা নেই!
খোঁজ-খবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান এনটিআরসিএ-তে জনবলের চাহিদার যে তালিকা দিয়েছিলেন, সেখানে শূন্যপদের ভুল তথ্য দিয়েছেন। ফলে আটকে যায় এনামুলের নিয়োগ। পরে ওই প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করলেও হতে পারছেন না এমপিওভুক্তও। মিলছে না বেতন-ভাতাও। এতে গত ছয়মাস কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এনটিআরসিএর সনদধারী এ শিক্ষক।
জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ভুলটা আমার নয়। আমি সনদধারী। নিয়ম মেনে আবেদন করে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছি। ভুল করেছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান। তিনি যদি ভুলটা না করতেন, তাহলে মেধা অনুযায়ী আমি কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হতাম। প্রতিষ্ঠানে বলেও কাজ হচ্ছে না, এনটিআরসিএ-তে দাবি জানিয়েও সাড়া মিলছে না। এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।
শুধু এনামুল নয়, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়েও ভুল চাহিদায় নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন এমন দুই শতাধিক শিক্ষক। আর প্যাটার্ন জটিলতায় পড়ে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না আরও আড়াইশ শিক্ষক। সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচশো শিক্ষক প্রতিষ্ঠানপ্রধানের ভুলের খেসারত গুনছেন।
ভুক্তভোগীরা এনটিআরসিতে স্মারকলিপি দিয়ে সমস্যা নিরসনের অনুরোধ জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি। ছয়মাস ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এসব শিক্ষক। তারা দ্রুত শূন্যপদ থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৭ হাজার ৭৪ জন শিক্ষককে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। সুপারিশে প্রার্থীদের সুনির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য বলা হয়। তবে অনেক নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারেন তিনি ভুল চাহিদায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
অর্থাৎ সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠানে তাকে যে পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ, সেই পদ শূন্য নেই। প্রতিষ্ঠানপ্রধান শূন্যপদের চাহিদা দেওয়ার সময়ে ভুলে তালিকা দিয়েছেন। ফলে ভুল চাহিদায় নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। এছাড়া প্যাটার্ন জটিলতায় আড়াইশোর বেশি শিক্ষকের এমপিওভুক্তি আটকে গেছে।
ভুল চাহিদায় নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া রুকাইয়া পারভীন নামে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, ‘চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েও এমপিওভুক্ত শিক্ষক হতে না পেরে পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি আমরা। সমাজেও অপমানিত ও লজ্জিত হতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজনও কটু কথা শোনাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’
জানতে চাইলে এনটিআরসির সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘যেখানে ১০ জন শিক্ষক পদ রয়েছে, সেখানে তো ১৫ জনের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। জনবল কাঠামো মানতে হবে। ভুল পদে যাদের সুপারিশ হয়েছে, এমপিওভুক্ত হতে হলে তাদের সেখান থেকে সরে আসতে হবে। তাদের ব্যাপারে কিছু করা যায় কি না, সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’
ভুল চাহিদায় নিয়োগ পাওয়া এবং প্যাটার্ন জটিলতায় এমপিওভুক্ত হতে না পারা শিক্ষকরা মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বুধবার (২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এনটিআরসিএর সামনে এ কর্মসূচি পালন করবেন। এছাড়া এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহিল আজমকে স্মারকলিপি দেবেন।জাগো নিউজ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/২৭/০৩/২০২৪