কলেজ শিক্ষককে বেধড়ক পেটালেন ছাত্রলীগ নেতারা
জয়পুরহাটঃ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদাউস রনিকে বেধড়ক মারপিট করেছে ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ওই কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল থানা বাজার এলাকায় মারপিটের এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ওই কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নাসির উদ্দিন তাকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (উপজেলা হাসপাতালে) নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনসহ ক্ষেতলাল থানার সামনের সড়কে সমবেত হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
এ মানববন্ধনে কলেজের অধ্যক্ষ জিনাত রেহেনা, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আমিরুল ইসলাম ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক কেএম ফেরদৌস বক্তব্য রাখেন। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
পরে এ ঘটনায় ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মেহেদি আশিক রাজু ও যুগ্ম আহবায়ক জুল আরস শুভসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ক্ষেতলাল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ক্ষেতলাল সরকারি ছাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদাউস রনি টিফিনের সময় কলেজ থেকে বের হয়ে অনতি দূরে ক্ষেতলাল থানা বাজারে পৌঁছলে তাকে ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মেহেদি আশিক রাজু ও যুগ্ম আহবায়ক জুল আরস শুভ ডেকে নেন। এ সময় দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে বাধা দেওয়া নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগের আরও নেতাকর্মীসহ তারা তাকে চড়-থাপ্পড়সহ কাঠের বাটাম দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন।
কলেজের অধ্যক্ষ জিনাত রেহেনা বলেন, কলেজ চলাকালে একজন শিক্ষককে রাস্তায় ফেলে চড়-থাপ্পড়সহ কাঠের বাটাম দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনসহ মানববন্ধন করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক জুল আরস শুভ বলেন, তাকে মারপিট করা হয়নি। ভোটের সময় ক্ষেতলালের একটি ভোটকেন্দ্রে ওই শিক্ষক ভোটারদের আসতে দেননি। তিনি এমন আচরণ কেন করেছেন সেটা জানার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি; কিন্তু ওই ঘটনায় কোনো উত্তর না দিয়ে তিনিই আমাদের ধাক্কা মেরে উদ্ধত আচরণ করেন। তার আচরণের কারণে ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে কিছুটা শাসন করেছে। তাকে মারপিট করা হয়নি।
এ বিষয়ে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কলেজ শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদাউস রনি ছাত্রলীগ নেতা মেহেদি আশিক রাজু ও জুল আরস শুভসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০১/২০২৪