করোনা ভাইরাসঃঃ আমাদের শিক্ষণীয়
করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন'' পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ হোম কোয়ারেন্টিইনে বা শেষ আশ্রয়স্থল নিজ গৃহে । মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে অসংখ্য মহামারি বা প্রলয়ের ঘটনা থাকলেও পৃথিবীর সকল মানুষ একই সাথে বিনা যুদ্ধে বা বিনা উস্কানিতে ঘরের ভিতরে লুকানোর ঘটনা মনে হয়, গত হাজার বছরে ইতিহাসে এই প্রথম। যখন উন্নত দেশগুলি চিকিৎসা বিজ্ঞানে মরণব্যধি ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাফল্য দাবি করছে, তখন ক্ষমতাধর দেশগুলির কর্নধার বিশেষ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, রাজপরিবারের উত্তরাধীকারি প্রিন্স চার্চিল, রাশিয়া সরকারে উচ্চ পর্যায়ের কয়েক জন সদস্য সহ অনেক ক্ষমতাধর ব্যাক্তি তখন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ইতোমধ্যে গত হয়েছে ইরানের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, ক্ষমতাধর অনেক ব্যাক্তিসহ প্রায় তেইশ হাজার মানুষ। আমরাও করোনাভাইরাসের মৃত্যুর ভয়ে ''ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলছি''। এ সময়ে চীনে আবার দেখা দিয়েছে নতুন ভাইরাস "হান্টা"। অন্যদিকে দেশের দিকে ধেয়ে আসছে আরেক মহামারি পঙ্গপাল। ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ''আমাদের সকল প্রচেষ্টা শেষ, এখন তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। সমাধান একমাত্র আকাশে যিনি আছেন তাঁরই হাতে''। উন্নত দেশগুলির যখন এ অবস্হা, তখন ভেবে দেখুন আমরা কতটুকু সুরক্ষিত আছি । আমার একটি গল্প মনে পড়েছে। এক শিকারীকে জঙ্গলের এক সিংহ তাড়া করছে, শিকারী দৌড়ে একটি বড় গাছের ডালে আশ্রয় নিয়েছে। কিছুক্ষণ পর সিংহটি চলে গেল। শিকারী লোকটি ভাবলো বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু হটাৎ তাকিয়ে দেখতে পায় যে ডালে বসা আছে সে ডালের গোড়া দুটি ইঁদুরে প্রায় কেটে ফেলছে। নিচে যেখানে পড়তে যাচ্ছে সেখানে একটি বড় অজগর সাপ তারদিকে হা করে আছে। কি উপয় এখন? নিশ্চিত মৃত্যু। কোরানুল কারীমে আল্লাহপাক বহু জায়গায় মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন ''তোমরা যেখানেই থাক মৃত্যু তোমাদের কে পাবেই! '' তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালাতে চাও! সে মৃত্যুর সাথে অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। তারপর তোমাদেরকে সেই মহান রবের দরবারে ফেরৎ পাঠানো হবে। তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয জানেন এবং আমল ও কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন(৬৮-সূরা জুমঅাঃ০৮)। মৃত্যুর যন্ত্রনা অবশ্যই আসবে। অথচ এ হতে তোমরা অব্যহতি চেয়ে আসছো (৫০-সূরা-ক্বা-ফঃ ১৯)। তাহলে এ থেকে বাচাঁর উপয় কি? বাচাঁর একমাত্র উপায় করোনাভাইরাসকে ভয় নয়। ভয় ও ভরসা করুন, করোনার মালিকের উপর। যিনি বলেছেন'' আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন বিপদ আসেনা এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সু-পথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত''(৬৪-সূরা তাগাবুনঃ ১১)।এখন ভাবতে হবে এ মহামারি যিনি দিয়েছেন, তিনিই বাচাঁতে পারেন। তিনি আরো বলেছেন ''এমন কোন বিষয় নেই যা আমি কোরআনে উল্লেখ করিনি''(৬-সূরা আনআমঃ৩৮)। আমি এ কোরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত উপস্হিত করেছি যাতে ওরা উপদেশ গ্রহন করে (৩৯-সূরা যুমারঃ২৭)। কোরআনতো বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ (৬৮-সূরা কালামঃ৫২)। সুতরাং আল-কোরআনই একমাত্র এ মহামারির ভ্যাকসিন। কারন মানুষের সর্দি, কাশি, ঠান্ডা,হাঁচি ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ সিনা থেকে উৎপন্ন হয়। 'আর কোরআন তেলাওয়াতে ঈমান বাড়ে ফলে তারা একমাত্র আল্লাহ উপর ভরসা করে' (৬-সূরা অনফালঃ ০২)। কোরআন ও ঈমান থাকে মানুষের সিনায় তাই রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। কোরআনের ভিতরে আল্লাহপাকের শিখানো অনেক দোয়া (আয়াত) রয়েছে যা মহামারি ও রোগের চিকিৎসা ও নিরাময়কারী। রাসূল (সঃ) বলেছেন 'সূরা- ফাতেহা হল মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষুধ। কোরআনে জযতুন, ডুমুর, কালোজিরার কথা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য বলা হয়েছে। মহামারির আর এক ভ্যাকসিনের নাম হাদিস। "তোমরা খাবারের আগে হাত ধুয়ে নেও''। এতে পেটের রোগ সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। আরো বলেছেন পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। তগদীরের উপর বিশ্বাস বা ভাল মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, এ বিশ্বাস ঈমানের ৭টি ভিত্তির অন্যতম। তাই জীবনে প্রথম আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন কর্ম ব্যস্ততার মাঝে দীর্ঘ সময় পরিবার পরিজনের কাছে থাকার।
এ অবসর সময়ে কোরআন ও হাদিস চর্চা করুন এবং আল্লাহপাক বিধান অনুযায়ী নিজের জীবনে কাজে লাগালে সকল প্রকার মহামারি থেকে দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির নিশ্চয়তা সম্ভব।
লেখকঃ বদরুল আমিন ,
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার,
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) ।