করোনা আবহে শিক্ষা
বিপদের মুখেই শক্তি-সামর্থ্যরে আসল পরিচয় মেলে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সমাজ কিংবা ব্যক্তি পরিসর- সব ক্ষেত্রেই এ সত্যটি সমানভাবে প্রযোজ্য।
দেশে এমন কোনো মানুষ নেই, যার জীবন অথবা ভাবনা করোনার আচমকা ছোবলে থমকে যায়নি। ঘোর অনিশ্চয়তা গোটা মানবজাতিকে গ্রাস করেছে। বিশ্বের এমন কোনো প্রান্ত নেই, যেখান থেকে সহসা স্বস্তির আভাস মিলেছে।
জলবায়ু, তাপমাত্রা, সময় কিংবা বয়স- কোনো পরিপ্রেক্ষিতেই এ ঝড়ো আগ্রাসনকে রুখে দেয়ার আশ্বাস দেয়নি। উন্নত রাষ্ট্রগুলো প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে এখন খানিকটা গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের নিজস্ব ব্যবস্থা, শিক্ষা, সামর্থ্য; সর্বোপরি, সামাজিক শৃঙ্খলা বিপর্যয় মোকাবেলায় স্বকীয়তার প্রমাণ রেখেছে।
আমরা সেসব মানদণ্ডে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কতটা সক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছি, চাহিদার বিপরীতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণের জন্য ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই অনেক শিক্ষণীয় উপকরণ পাওয়া যাবে। তবে যে বিষয়ে হয়তো সবাই একমত, তা হল- আপৎকালীন মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথেষ্ট উজ্জ্বল কিংবা সংবেদী মনে হয়নি।
অনেক ক্ষেত্রেই পেশাদারিত্ব, দায়বদ্ধতা এমনকি দেশপ্রেমের অভাবও অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যবিভাগের সমন্বয়হীনতা, অভ্যন্তরীণ বিরোধ, ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা অথবা স্বার্থদ্বন্দ্ব কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটুভাবে সামনে এসে পড়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও কেন এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ‘পরিণত’ হতে পারেনি, তা অনুসন্ধান করতে গেলে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনার পথরেখায় প্রথমেই এসে পড়বে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা; যা তত্ত্বগতভাবে মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ তৈরি করে।
এক কথায়, সমাজ দেহের আদলটাকেই গঠন করে দেয়।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ’৭৫-পরবর্তী সময়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা। আদর্শবর্জিত, অপরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রশ্রয়ে গোটা শিক্ষাকাঠামো বৈষম্যদুষ্ট ও কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়ে। গ্রাম-শহর ও ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শিক্ষার মাধ্যমভিত্তিক বিভাজন সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বৈষম্যকেও উসকে দেয়।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো বিদেশি ভাবধারায় চলতে থাকে। ফলে একটি ভোগসর্বস্ব, স্বার্থপর নগরকেন্দ্রিক এলিট শ্রেণির উদ্ভব ঘটে যায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় অবহেলায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আশ্রয় বাংলামাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নকল, শিক্ষাবাণিজ্য ও সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়।
মানহীন শিক্ষায় জারিত মূল্যবোধহীন নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে থাকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী। অবশিষ্ট অংশের গন্তব্য হয় মাদ্রাসা বা কারিগরি শিক্ষা; যার অবস্থা আরও শোচনীয়। মনোযোগ ও তদারকির অভাবে দেশের শিক্ষা এভাবেই পার করেছে দশকের পর দশক দিশাহীন ভবিষ্যতের পথে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এ পরিচর্যাহীন শিক্ষাব্যবস্থা থেকেই বেরিয়ে এসেছে দেশের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, আমলা, সাংবাদিক কিংবা আজকের প্রতিষ্ঠিত যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিগত দশকে শিক্ষার চরিত্র, গতি-প্রকৃতি বদলে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। নারী ও শিশু শিক্ষাকে সর্বজনীন করা, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নিয়ে আসা, বিশ্বজনীন জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার পরিধি বিস্তৃত করা, কারিকুলাম পরিবর্তন করা; বিশেষ করে, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির সংশ্লেষ শিক্ষাজগতে একটা নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে; কিন্তু কোভিড-১৯ জীবনের সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে।
শিক্ষার কাঠামোগত সংস্কারেও তাড়না জুগিয়েছে বিশ্বজয়ী এ অণুজীব। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, শিষ্টাচার, সামাজিক দূরত্ব- এখন শিক্ষাঙ্গনে বহুল চর্চিত বিষয়। দক্ষতা, জ্ঞান ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পরিবর্তিত বাস্তবতায় অপরিহার্য।
শোনা যাচ্ছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ও আদর্শের আলোকে শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও পরিমার্জন করে ২০২২ সাল নাগাদ ১ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে। যুগের চাহিদা, এমন কী করোনাকালের শিক্ষাও এ বিশ্বজনীন কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
শিক্ষাবলয়ে কোভিড-পর্বের সেরা সংযোজন অনলাইন শিক্ষা। চারপাশে নেতিবাচক গুঞ্জন। অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া যখন চালু হয়েছিল, এমনই নানা সমালোচনা শোনা গিয়েছিল শুরুতেই। কোনো একটা ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষ যখন অভ্যস্ত হয়ে যায়, সেখান থেকে সে সহজে বেরিয়ে আসতে চায় না। এটাই হয়তো মানবমনের ‘স্থিতিজড়তা’।
প্রযুক্তিনির্ভর অন্যান্য ব্যবস্থার মতোই হয়তো অনলাইন শিক্ষাটাও এক সময় ‘অতি স্বাভাবিক’ একটি কার্যক্রম হয়ে উঠবে। এর মানে অবশ্যই অফলাইন শিক্ষাকে স্থায়ীভাবে দূরে ঠেলা নয়। অবশ্যই অফলাইন-অনলাইন পদ্ধতির মিশ্রস্রোত শিক্ষাকাঠামোয় প্রাণ ফিরিয়ে দেবে।
এটা ঠিক যে, অনলাইন শিক্ষার জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা এখনও দেশের সর্বত্র নেই। তবে যে দেশে মোবাইল ফোনের সংযোগ প্রায় শতভাগ, টিভি ষাট ভাগ, ডিজিটাল ডিভাইসের প্রবেশগম্যতা সব উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত- সেখানে রাষ্ট্রের সমর্থনে প্রান্তিক শিক্ষার্থীর কাছে প্রযুক্তির এ সেবা পৌঁছে দেয়া অসাধ্য হবে না।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সক্রিয় থাকবেন অদৃশ্য বাহনে, কন্টেন্টের মাধ্যমে। জেলা-উপজেলায় গড়ে উঠবে ইন্টারনেট প্লাটফর্ম। মফস্বলের ছাত্রছাত্রীরা সেরা শিক্ষককে খুঁজে নেবে। মূলস্রোতে সংযুক্ত হবে দেশের বিপুল তারুণ্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংযোগ সময়কে সহজেই সংরক্ষণ করা যাবে।
শিক্ষা বদলে যাবে দক্ষতায়। সনদসর্বস্ব শিক্ষা এখন মূল্যহীন। ছকেবাঁধা শিক্ষকের কমফোর্ট জোন থেকে শিক্ষকও নিজেকে সরিয়ে নেবেন। কোচিং-গাইড নির্ভরতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবলুপ্ত হবে। শিক্ষা একপেশে, নিরানন্দ হবে না। মুখস্থবিদ্যা শিক্ষার্থীর অবলম্বন থাকবে না। ছাত্রছাত্রীর মননশীলতার বিকাশ হবে অনায়াস, স্বাচ্ছন্দ্য ও টেকসই। সেভাবেই অফলাইন শিক্ষার পাশে অনলাইনের প্রাসঙ্গিকতা কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।
এ কথা ভুললে চলবে না- মানসম্পন্ন শিক্ষার যে এজেন্ডা সমকালীন বিশ্বের প্রথম অগ্রাধিকার, তা বাস্তবায়নের গুরুত্ব করোনাকালীন বাস্তবতায় নতুন মাত্রা লাভ করেছে। প্রযুক্তিনির্ভর বা মূল্যভিত্তিক শিক্ষার মতো যে কোনো দক্ষতা অর্জন করতে গেলে ব্যবস্থাপনার যে অঙ্গটি অপরিহার্য ও নির্ণায়ক ভূমিকা রাখে, নিঃসন্দেহে তা শিক্ষক।
আর প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকের মান ও নিষ্ঠার ওপরই ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। কিন্তু দেখা গেছে, এ দেশে অন্তত স্বাধীনতা-উত্তরকালে শিক্ষকতাই চাকরির বাজারে সর্বশেষ পছন্দ।
মেধাবী, প্রস্তুত ও নিবেদিত শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের ভূষণ। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগকালই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিয়োগের আগেই প্রার্থীর মানসিক গড়ন, শারীরিক ঝোঁক যাচাই করা দরকার। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষকতা নয়। একবার অন্যায্যভাবে কেউ নিযুক্ত হলে পরে তাকে শাস্তি দেয়া যায়; কিন্তু ক্ষতিপূরণ করা যায় না।
শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ মেধাকে শুধু তত্ত্বে নয়, কার্যক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা জরুরি। তাকে সম্মান দিতে হবে। আকর্ষণীয় বেতন দিতে হবে। মর্যাদা দিতে হবে। মুখে ‘মেরুদণ্ড’ বলে সামাজিক পরিসরে তাকে অবহেলা করা যাবে না। দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনাও জরুরি।
ভালো শিক্ষকের অভাবে ক্লাস আকর্ষণ হারায়। শিক্ষার্থীর মননে সৃষ্টির তাড়নাও জাগে না। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন বা উত্তরপত্র মূল্যায়নের মতো স্পর্শকাতর ধাপেও ন্যায়বিচার হয় না। অন্যদিকে, শিক্ষকের মূল্যায়ন হওয়াটাও খুব জরুরি। এ মূল্যায়নটি করতে পারে শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও নিরপেক্ষ তদারকি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে।
নিয়মিত বিভাগীয় পরীক্ষায় শিক্ষকের গবেষণা, কর্মমূল্যায়ন ও শারীরিক সামর্থ্য পরীক্ষা করে পরবর্তী পেশাগত পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে। শিক্ষকের মান যদি কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় না পৌঁছায়, তবে রাষ্ট্র তাকে অন্যত্র নিযুক্ত করতে পারে। শিক্ষাজগতে কোনো অফিসার বানানোর প্রয়োজন নেই বলেই মনে হয়। ‘শিক্ষকসুলভ কমিটমেন্ট’ না থাকলে তাকে কোনোভাবেই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগে জায়গা দেয়া উচিত হবে না।
শিক্ষককে কোনো অবস্থায়ই ৩ বছরের বেশি সময় এক কর্মস্থলে কর্মরত রাখা উচিত নয়। নিয়মিত বদলি যে কোনো পেশাজীবীর কাজে বৈচিত্র্য আনে, উদ্যম বাড়ায়। কর্মকালীন প্রশিক্ষণ শিক্ষকের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে; কিন্তু সে প্রশিক্ষণ দায়সারা গোছের হলে শুধু রাষ্ট্রের অপচয় বাড়ে। শিক্ষকের জন্য ‘সংযোগ সময়’; বিশেষ করে, কলেজশিক্ষকদের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রয়োজন দেখি না।
শিক্ষক যদি যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে যান এবং বিভাগীয় পরীক্ষায় তার উৎকর্ষ যাচাই করার সুযোগ থাকে, তখন কলেজে অলস সময় না কাটিয়ে তিনি কন্টেন্ট প্রস্তুতিতে তা ব্যয় করতে পারেন। তবে শেষ কথা হল, শিক্ষার দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। বহুধা বিভক্ত বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার যত দ্রুত অবসান ঘটবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।
কারিগরি শিক্ষার উন্নতিতে রাষ্ট্রের অনেক মনোযোগ চোখে পড়ে। এ রুগ্ন ধারাকে প্রাণবন্ত করার কৃতিত্ব এ সরকারের। এখন প্রায় ২০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী কারিগরি শিক্ষাবৃত্তের আওতায়। ৬৪০টি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে কারিগরি দুটি বিষয়ে এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ও মাদ্রাসায় আবশ্যিক বিষয় হিসেবে কমপক্ষে একটি কারিগরি বিষয় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দক্ষ প্রবাসী শ্রমিকের চাহিদা মেটানোর জন্য এ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে; কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরিচালিত বিএম কোর্সটি দক্ষতা উন্নয়নে কিংবা শিক্ষার্থীর ন্যূনতম চাহিদা পূরণে কতটা সক্ষম হচ্ছে, তা অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।
ক্লাস, পরীক্ষা, মূল্যায়ন কিংবা ব্যবস্থাপনা- সব ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত অনিয়ম ও অব্যবস্থার অভিযোগ এখন গা সওয়া। খোদ রাজধানীর বুকেও এমন প্রতিষ্ঠান বিরল নয়; যেখানে শুধু নম্বরফর্দ জোগাড় করেই শিক্ষাক্রম শেষ করা হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনায় প্রজাতন্ত্রের পদস্থ কর্মচারীরা বহাল থাকেন। লেখাপড়ার মান দূরে থাক, রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে কি না, তা তদারকির জন্যও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যান না। মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নেও সরকারের যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ করা যায়।
মাদ্রাসাগুলোয়ও যোগ্য-দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে, ঘাটতি রয়েছে উপযুক্ত তদারকিতে। গণিত, ভাষা ও তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান এ মুহূর্তে দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য অপরিহার্য। মাদ্রাসা এখানে ব্যতিক্রম নয়। সমসময়ের এ দক্ষতা অর্জনে সামান্য অবহেলাও এ সময় কাঙ্ক্ষিত নয়।
গণছুটি শেষ হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও খোলেনি। পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতির কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ নেই। ভয়াল ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখনও নাগালের বাইরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, কোভিডের সঙ্গেই আমাদের আরও বেশ কিছুকাল বসবাস করতে হবে।
এমন বাস্তবতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিষ্প্রাণ, শিক্ষাবিমুখ হয়ে থাকবে অনির্দিষ্টকাল- এটি জীবন্ত কোনো ব্যবস্থার ধর্ম হতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- সে ক্ষেত্রে ঝরে পড়া বা বাল্যবিবাহের মতো বিলুপ্তপ্রায় উপসর্গগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তাই কোভিডের সঙ্গে অভিযোজন কৌশল রপ্ত করার কোনো তাৎক্ষণিক বিকল্প নেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় থাকায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমটি অলীক কল্পনা বলে মনে হয়নি। হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো কোভিড শিষ্টাচারগুলো প্রাত্যহিকতার অংশ হয়ে উঠবে অবলীলায়; কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি শুধু সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না, এখানে অবকাঠামোগত সক্ষমতার প্রশ্নটিও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
একটি শ্রেণিকক্ষে ৩০-৪০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রীর সংস্থান স্বাস্থ্যবিধির পরিপন্থী। হয়তো নতুন শিফট খোলা বা নতুন নিয়মে ছাত্রভর্তির অনুমতি মিলবে, নতুবা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি হবে অতি দ্রুত, আপৎকালীন বাস্তবতায়। প্রাণবন্ত তারুণ্যে আবার মুখর হয়ে উঠবে শিক্ষাঙ্গনগুলো নতুন পোশাকে, নতুন সাজে, নতুন ছকে। মনুষ্যত্ব নির্ভর সংবেদী তারুণ্য মানসম্পন্ন শিক্ষায় সমৃদ্ধ হবে। বিপর্যয়ের এ ধ্বংসস্তূপ থেকে সৃষ্টি হতে পারে নতুন জীবনবোধ, নতুন উপলব্ধি; যা হয়তো বদলে দিতে পারে আমাদের অনাগত সময়ের পথচলা।
অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
সূত্র: যুগান্তর