করোনায় ডেন্টাল চিকিৎসা
অনলাইন ডেস্ক ঃ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসের চরিত্র বিশ্লেষণ করে নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অনেক ডেন্টাল ক্লিনিকে এখন রোগী দেখা শুরু হয়েছে। যদিও ভাইরাসটির চরিত্র বদলের সঙ্গে হিমশিম খাচ্ছে গবেষণা।
তাই আরও কিছুদিন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ক্লিনিকে না আসার বিষয়ে বলা হচ্ছে। তবে ডেন্টাল ক্লিনিকগুলো সাধ্যমতো সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে রোগীদের সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা প্রদান শুরু করেছে, সে ক্ষেত্রে অধিক নিরাপত্তার জন্য রোগীদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। টেলিফোনের মাধ্যমে সময় নিশ্চিত ও যথাযথ ইতিহাস প্রদানের পাশাপাশি পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসতে হবে।
অধ্যাপক ডা. শামসুল আলম
চেয়ারম্যান, দাঁত সংরক্ষণ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
কোভিডকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। প্রথমদিকে মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা স্পস্ট হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অধৈর্য হয়ে উঠেছি। পর্যটন কেন্দ্র, সামাজিকতা, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, জনসমাগম সব ক্ষেত্রেই আমরা দুঃসাহস দেখাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই; আমাদের সচেতনতায় করোনার ভয়াল আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। করোনা রোধে প্রতিটি স্তরে সতর্ক থাকতে হবে, তা না হলেই বিপদ। বেশিরভাগ কোভিড রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও যারা জটিলতায় পড়ছে তারা বা তাদের পরিবার অনুভব করছে এর ভয়াবহতা, আর আমরা কেউ জানিনা আমাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের কতটা রক্ষা করবে।
কোভিডকালে মুখের যত্ন কেন জরুরি
* সঠিক নিয়মে মুখের যত্ন দাঁতের সিংহভাগ রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে, ফলে ক্লিনিকে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
* মুখের রোগের সঙ্গে ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগসহ অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণের যোগসূত্র পাওয়া গেছে; কোভিড রোগীদের এ ধরনের রোগ থাকলে জটিলতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই মুখের সংক্রমণ থেকে যেন কোভিড রোগীর জটিলতা না বাড়ে সেদিকে সতর্ক থাকা জরুরি।
* করোনাভাইরাস প্রবেশের সবচেয়ে বড় পথ মুখ গহ্বর, নিয়মিত মুখের যত্ন ও চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার মুখের মধ্যকার ভাইরাসকে অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
* দীর্ঘমেয়াদি মুখের রোগ মানসিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে; যা কোভিডকালীন নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রাখে।
অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল
অধ্যক্ষ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, মহাসচিব, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি
অপচিকিৎসা নিয়ে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ডেন্টাল সার্জনরাও ভয়াবহ কোভিড-১৯ মহামারী বিস্তার রোধকল্পে WHO (World Health Organizations)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছিলেন, যা এখন গাইডলাইন অনুযায়ী সীমিতভাবে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া দেশে লকডাউন সচেতনতা এবং ঝুঁকিনিরোধী সুরক্ষাসামগ্রীর দুষ্প্রাপ্ততাও প্র্যাক্টিস বন্ধের অন্যতম কারণ ছিল। তখন কেবল সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো সীমিত পরিসরে চাকরিজীবী চিকিৎসকরা এ সেবা কার্যক্রম চলমান রেখেছিলেন। অবশ্য এ সুযোগে বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লক্ষাধিক কোয়াক বা হাতুড়েরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের অপচিকিৎসা অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে মানুষ শুধু যে করোনা সংক্রমণের শিকার হচ্ছে তাই নয়, অপচিকিৎসা নিয়ে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। এ কোয়াক প্র্যাক্টিস বন্ধে সংশ্লিষ্টরা একেবারেই নির্বিকার।
বর্তমানে সারা দেশে প্রায় সাড়ে বার হাজার ডেন্টাল সার্জন আছেন; যারা মূলত প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। একটি ডেন্টাল ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ এবং অনেকেই ব্যাংক বা অন্যান্য ঋণের ওপর নির্ভর করে থাকেন। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের বিস্তার রোধে প্র্যাকটিস বন্ধ থাকার কারণে পেশার সবাই বিশেষ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন এবং প্রায় সবার জন্যই তা অসহনীয় হয়ে পড়েছে।
সেজন্য আমরা বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন জানিয়েছি, জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এ বিপদগ্রস্ত পেশাজীবীদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সরকারিভাবে সঙ্গত পরিমাণে অর্থ সাহায্য প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করার। অবশ্য এ ব্যাপারে সর্বশেষ সময় পর্যন্ত আমরা কোনো রেসপন্স পাইনি।
যদিও করোনায় অসুবিধায় পড়া ডেন্টাল সার্জনদের প্রতি বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি সহমর্মিতা প্রকাশ ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। সীমিত সামর্থ্য সত্ত্বেও এ পর্যন্ত আবেদিত ২৭২ জন ডেন্টাল সার্জনকে সমপরিমাণ (১০ হাজার টাকা মাত্র) ভাবে সর্বমোট ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মাত্র বিনাশর্তে, এককালীন এবং অফেরতযোগ্য অনুদান BEFTN-এর মাধ্যমে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ অনুদান প্রদানে এগিয়ে এসেছেন আমাদের বিত্তবান ও চিত্তবান ডেন্টাল সার্জনরা। বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি অনুদান দাতা ও গ্রহীতা সবার প্রতি সমান কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাবোধ ধারণ করে।
আমাদের স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এ সহযোগিতা বিন্দুসম। অনুভবের বিষয় হচ্ছে, এ বিন্দুর মাঝেই রয়েছে সিন্ধুর গভীরতা। এ বিন্দুই হোক সোসাইটির মানবিকতার পথ বেয়ে সরকারি প্রণোদনার কেন্দ্রবিন্দু।
অধ্যাপক ডা. ইব্রাহিম খলিল
বিভাগীয় প্রধান, সিটি ডেন্টাল কলেজ
কোভিডকালীন ডেন্টাল চেম্বারের প্রস্তুতি
আমরা প্রত্যেকেই বিশেষ করে মুখ ও দন্ত বিশেষজ্ঞরা যারা আমেরিকান ব্যুরো অফ স্ট্যাটিকস দ্বারা জরিপকৃত ও প্রণীত- ‘কোভিড ঝুঁকি’ নিরিখে সর্বোচ্চ ঝুঁকিযুক্ত পেশার সঙ্গে জড়িত। পেশার তাগিদে জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছি। ইতোমধ্যে কোভিড প্রতিরোধক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আমাদের সময় পার করছি। এমন কি ভ্যাকসিন নিয়ে ও স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো নিশ্চয়তা কোনো পর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিকভাবে আমরা এখনও কোভিড মোকাবেলায় নিজেদের উপযোগী বা প্রস্তুত করতে পারিনি। তার কারণ হল- আমাদের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা নানাবিধ ঘাটতিসহ গবেষণাবান্ধবহীনতা অন্যতম।
* বিশ্বের অন্য অনেক দেশে বাংলাদেশের BMDC-এর মতো অথরিটিগুলো চিকিৎসকদের চিকিৎসা-শিক্ষার মান সমুন্নত রাখার ওপর গুরুত্বারোপের ফলে চিকিৎসা পেশা সংশ্লিষ্টরা আইনগত ও নীতিগতভাবে নিজেকে আপগ্রেডেশনে তথা গবেষণা-শিক্ষার সঙ্গে নিয়োজিত রাখে কিন্তু আমাদের এ দেশে এ রকম চর্চাহীনতাই কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধের মতো জরুরি বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনে বা গবেষণা বিষয়ে বই-পুস্তক বা জার্নাল পড়ার আগ্রহের তীব্র অভাব এ পেশার মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে। সহজ-নিরাপদ অথচ করোনার বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর তরলীকৃত ০.৪ শতাংশ পভিডন আয়োডিন নেজাল ও থ্রোট স্প্রে যা একাধারে ৩ ঘণ্টা সংক্রমণ রোধ করে এবং একনাগাড়ে ২ বছর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে ব্যবহারযোগ্য।
* বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, মার্কেটগুলোতে ঢোকার পথে ডেটল সেভলনের মতো সাধারণ অ্যান্টিসেপটিক সলিউশনের স্প্রে করা হয়। যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ তো করেই না বরং মানুষের ওপর সরাসরি প্রয়োগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবাই। এসব সমাধানের সহজ উপায় কার্যকর সোপিওয়াটার যা এদেশেই আবিষ্কার। এর স্প্রে নিরাপদ।
ডা. অনুপম পোদ্দার
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, পেরিওডন্টোলজি অ্যান্ড ওরাল প্যাথলজি বিভাগ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ
ডেন্টিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীর করণীয়
সংক্রমণের তীব্রতা ভেদে লাল, হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে বিভক্ত। করোনাকালীন যারা প্র্যাকটিস করতে যাবেন, তাদের করণীয় ব্যবস্থা এরূপ হতে পারে-
* অঞ্চলগুলো বিশ্লেষণে লাল অঞ্চল, যেখানে করোনার প্রকোপ অত্যধিক বেশি; হলুদ অঞ্চলে লাল অঞ্চলের চেয়ে সংক্রমণ তুলনামূলক কম; আর সবুজ অঞ্চলে সংক্রমণ খুব-ই কম বা সংক্রমণ নেই। অঞ্চল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চেম্বারের অবস্থান ও রোগীর বাসা- উভয়-ই বিবেচনায় আনতে হবে।
* ডেন্টিস্টদের আমরা তিন গ্রুপে ভাগ করতে পারি। প্রথম গ্রুপ- সুস্থ ও সবল ডেনটিস্ট, যাদের বয়স ৬৫ বছরের নিচে; ২য় গ্রুপ- যে কোনো বয়সের ডেন্টিস্ট, যারা ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত; ৩য় গ্রুপ- যাদের বয়স ৬৫ বছরের উপর।
* চিকিৎসাগুলোকে ভাগ করা যায়, প্রথমত- টেলিমেডিসিন চিকিৎসা, দ্বিতীয়ত- জরুরি দন্ত চিকিৎসা, তৃতীয়ত- নন-অ্যারোসল জেনারেটিং চিকিৎসা ও চতুর্থত- অ্যারোসল জেনারেটিং চিকিৎসা।
* লাল অঞ্চলে প্র্যাকটিস করা সব ডেন্টিস্ট, যাদের বয়স ৬৫ বছরের উপর অথবা যে কোনো বয়সের ডেন্টিস্ট, যাদের ঝুঁকিপূর্ণ রোগ বিদ্যমান আছে, টেলিমেডিসিন ছাড়া অন্য যে কোনো চিকিৎসাসেবা দেয়া তাদের জন্য উচিত নয়।
* সুস্থ ও সবল ডেন্টিস্ট লাল অঞ্চলে শুধু কন্সালটেশন ও জরুরি দন্ত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন।
* হলুদ অঞ্চলে যাদের বয়স ৬৫’র উপর ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগ বিদ্যমান আছে, তারা কন্সালটেশন করতে পারেন। যারা সুস্থ ও সবল ডেন্টিস্ট তারা জরুরি দন্ত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন ও নন-অ্যারোসল জেনারেটিং চিকিৎসাগুলো করতে পারেন। তবে তারা অতি সতর্কতার সঙ্গে যথাযথ পিপিই ও অ্যারোসল জেনারেটিং চিকিৎসার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে ওই চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন।
* সবুজ অঞ্চলে ৬৫ বছর বয়সের উপরের ডেন্টিস্ট ও যারা ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত, তারা কন্সালটেশন ও প্রয়োজন বোধে নন-অ্যারোসল জেনারেটিং চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন। তবে তাদের অ্যারোসল জেনারেটিং চিকিৎসাগুলো পরিহার করতে হবে।
* ডেন্টিস্টদের বাসায় পাল্স অক্সিমিটার ও কনট্যাক্টলেস ইনফ্রারেড থার্মোমিটার/নরমাল থার্মোমিটার থাকতে হবে। দিনে অন্তত দু’বার তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে ও দু’ঘন্টা পর পর অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতিদিন দু’বার রক্তচাপ পরিমাপ করা উচিত।
* বাসায় অন্তত দৈনিক ৪০ মিনিট হাঁটার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনা মহামারীর জন্য বাইরে গিয়ে হাঁটা সম্ভব না হলে বাসায় যোগ ব্যায়াম বা অন্যান্য ব্যায়াম করতে পারেন।
* দিনে ২-৩ বার ২০-৩০ মিনিট শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারলে ভালো। শ্বাসের ব্যায়াম যন্ত্রবিহীনও করা যায় অথবা স্পাইরো মিটারের সাহায্য নিয়েও করা যায়।
* রোগী দেখা শুরু করার আগে ও পরে ২ শতাংশ পভিডোন আয়োডিন মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করতে হবে। ৩০ সেকেন্ড মুখে ও ৩০ সেকেন্ড গলায় রেখে কুলকুচি করে ফেলতে হবে। এতে মুখে করোনাভাইরাসের লোড কমাতে সাহায্য করবে।
* পরিমিত ঘুমাতে হবে। কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা প্রতিদিন।
* প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
* প্রতিদিন কিছু সময় গায়ে সূর্যের আলো লাগাতে হবে।
* প্রচুর পরিমাণ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
* ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট যেমন- ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-সি ও জিঙ্ক ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত।
* সকাল ও বিকাল দু’বেলা গরম পানির ভাপ নিতে হবে। বিশেষ করে চেম্বারে যাওয়ার আগে ও চেম্বার শেষ করে আসার পর হলে বেশি ভালো।
* দু’বেলা গরম আদা ও গরম মসলা চা পান করতে হবে।
* সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ লিটারসহ প্রতিদিন ৪-৫ লিটার পানি পান করতে হবে।
* প্রতিদিন কালিজিরা ও রসুন গ্রহণ করে উপকার পাওয়া যায়।
* ধূমপান ও অ্যালকোহল পান অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
* বাসায় ও চেম্বারে হ্যান্ড হাইজিন ও রেস্পিরেটরি হাইজিনের সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
* ডেন্টিস্ট যাদের রক্তের গ্রুপ অ, তারা একটু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
* বাসায় বয়স্ক ব্যক্তি বা ঝুঁকিপূর্ণ রোগী থাকলে বিশেষ সতর্কতামূলক নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ
রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা
সদস্য সচিব, বিএফডিএস
টেলিডেন্টিস্ট্রি’র সুফল-কুফল
যুক্তিসঙ্গত কারণে করোনা সংক্রমণের অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দিকনির্দেশনায় কোভিড সময়ের শুরু থেকে ডেন্টাল রোগীদের অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া টেলি-পরামর্শের মাধ্যমে ঘরে থেকে প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা নিতে জোরালো উৎসাহ দেয়া হচ্ছিল। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশের প্রায় ১২ হাজার বৈধ ডেন্টাল চিকিৎসক বিনা শর্তে সামাজিক দায়বদ্ধতায় টেলিডেন্টিস্ট্রি সেবা প্রদানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ডেন্টাল সায়েন্স-এর মতো কার্যকর সংগঠনগুলো বিভিন্ন প্রচার মিডিয়াতে চিকিৎসকদের নামসহ ফোন নম্বর প্রকাশ করেছিল, যাতে সহজেই দেশের মানুষ টেলিডেন্টিস্ট্রির সুবিধা পায়।
টেলিডেন্টিস্ট্রি’র সুফল : করোনার শুরুতে নির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনার অভাবে টেলিডেন্টিস্ট্রিকেই নিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছিল, তা না হলে ডেন্টাল রোগী ও ডেন্টিস্টদের একটি বড় অংশ কোভিড আক্রান্তের আশঙ্কা ছিল। রোগীরা ঘরে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক কষ্ট লাঘবের সুযোগ পেয়ে বাইরে গিয়ে ভাইরাসের সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে অনেকটা মুক্ত থাকত।
টেলিডেন্টিস্ট্রি’র কুফল : মুখের মধ্যে অধিকাংশ রোগ যেমন- দাঁতে ব্যথা, মাড়ি দিয়ে রক্তপড়া, আক্কেল দাঁতের জটিলতা, মুখ ফুলে যাওয়া ও ক্ষত ইত্যাদিতে শুধু ওষুধের মাধ্যমে কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না; প্রয়োজন পড়ে কার্যকর চিকিৎসা। বৃহৎ স্বার্থে শুরুতে কেবল টেলিমেডিসিনকে প্রাধান্য দেয়া হলেও এখন রোগীদের স্বার্থে তেমনটি হচ্ছে না। প্রতিটি ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে নানা ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্ব এখন উদ্বিগ্ন। টেলিডেন্টিস্ট্রি’তে সাময়িক কষ্ট লাঘবে এখন অনেকে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পুরনো ব্যবস্থাপনায় নিজে বা অন্যকে ওষুধ খেতে উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যাচ্ছে, যা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
কোনো রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়া ওষুধের মাধ্যমে কষ্টকে দমিয়ে রাখলে রোগের মাত্রা ও জটিলতা বাড়তে থাকে, ফলে চিকিৎসাব্যবস্থা হয়ে ওঠে সময় সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও প্রশ্নবিদ্ধ।
ডা. নিতীশ কৃষ্ণ দাস
সহকারী অধ্যাপক, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
করোনাকালীন মুখের যত্নে করণীয়
* মুখের লালার গুণগত ও পরিমাণগত মান ঠিক রাখা। লালা কমে গেলে শ্বাসনালির আর্দ্রতা কমে এর ইনফেকশন বেড়ে যায়। সহজে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ক. সেজন্য পরিমাণমতো পানি খেয়ে মুখের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে হবে।
খ. নাক বন্ধের সমস্যা থাকলে সেটার চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ নাক বন্ধ থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার কারণে মুখের আর্দ্রতা কমে যাবে।
* মাউথওয়াশ ১ শতাংশ পভিডোন আয়োডিন দিয়ে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড কুলিকুচি করতে হবে।
* ন্যাজাল স্প্রে-.৪ শতাংশ পভিডোন আয়োডিন ন্যাজাল স্প্রে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। ইংলান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এক ধরনের ন্যাজাল স্প্রে তৈরি করেছে যার উপাদান Carragenan ও gellan- যা বিশেষভাবে কার্যকর।
* ব্রাশ করা টুথপেস্টের উপাদান ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনা থেকে প্রতিরোধ করতে পারে।
২ মিনিট ব্রাশ আর ৩০ সেকেন্ড মাউথওয়াশ, করোনার সংক্রমণ করবে হ্রাস।
শিক্ষাবার্তা/ বিআ