করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বিশিষ্টজনেরা কী ভাবছেন
করোনায় সারা বিশ্বে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশই ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে আসে। এসব ভ্যাকসিন নেওয়ায় অনেকেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশেও এসব ভ্যাকসিন নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দেশের কয়েকজন বিশিষ্টজন ইত্তেফাক অনলাইনকে তাদের মতামত জানিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী:
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা টিকা গ্রহণে সরকার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সেটি গ্রহণযোগ্য এবং সঠিক হয়েছে। এখন ভ্যাকসিন প্রয়োগে যে পর্যায়গুলো রয়েছে সেগুলোর দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। যদিও এসব ভ্যাকসিন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পৃথিবীতে অনেক দেশে করোনা টিকা নেওয়ার ফলে পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এসব কিছুর উপর ভিত্তি করে ও বিষয়গুলোর সমন্বয়ে অসুবিধাগুলো হচ্ছে। তবে এখানে অনেক গুজবও রয়েছে। এখন সরকারের প্রথম কাজ হবে টিকা গ্রহনে সাধারণ মানুষেদেরকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে তৈরি করা। এজন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কিছু কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।’
ডা. লেলিনের মতে, সমাজে যাদের গ্রহণযোগ্যতার বেশি এমন লোকদের দিয়েই এ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। ফলে তাদেরকে দেখে সমাজের সাধারণ জনগণও টিকা গ্রহনে আগ্রহ বাড়বে।’
এ বিশেষজ্ঞ আরও মনে করেন, ‘টিকা প্রদানে যে অনলাইন অ্যাপস ব্যবহার হবে সেখানে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। কারণ যারা টিকা গ্রহন করবেন তাদের একটা বড় অংশই ইন্টারনেট ব্যবহার বা অ্যাপস নিয়ে কোন ধারণা নেই। তাছাড়াও আমরা বিশ্বের অনেক দেশে থেকে এইরকম অনলাইন অ্যাপস ডাউনের কথা শুনেছি। এসব কারণেও টিকা প্রদানে ধীরগতি হতে পারে।’
লেলিন বলেন, ‘টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসনের উপর নির্ভর না হয়ে জনপ্রতিনিধিগণদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সবশেষে টিকা প্রদানের প্রথম ধাপটি পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।’
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে করোনা ভ্যাকসিনকে খুব স্বাভাবিকভাবে দেখছে। মানুষের মাঝে প্রশ্ন থাকবে, তবে ভ্যাকসিন সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। একইসঙ্গে ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্ত তথ্য সামনে নিয়ে এসে প্রচার করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে। ভ্যাকসিন সঠিক মূল্য, সার্বিক ব্যয়, ভ্যাকসিনের পিছনে মোট যা খরচ হয়েছে এ সম্পর্কে সচ্ছ ধারণা দিতে হবে সাধারণ মানুষেদেরকে। রাষ্ট্র কোষাগার থেকে কত খরচ হয়েছে এ হিসেব যদি পুরিস্কার থাকে তাহলে ভ্যাকসিন নিয়ে জনসাধারণদের মাঝে কোন বির্তক থাকবে না। আর যদি তথ্যের ঘাটতি থাকে তাহলে মানুষের মাঝে সন্দেহ থাকবে এবং ভ্যাক্সিন নিয়ে অনীহা সৃষ্টি হবে।’
টিকা প্রদানে কাদেরকে সামনে রাখা উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, সামনের সারিতে যারা কাজ করছেন তাদেরকেই আগে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, বয়জোষ্ঠ সার্বিকভাবে যারা আগে পাওয়ার প্রয়োজন তাদেরকেই দিতে হবে।
ঢাবি'র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী:
সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘সরকারকে প্রথমে যেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে সেটা হলো, যেসকল লোকজন টিকা প্রদানে সরাসরি যুক্ত থাকবেন তাদেরকে আগে টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
তারপর যারা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদেরকে দিতে হবে। ধারাবাহিকভাবে বয়স্ক লোকদের আগে দিতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে সাধারণ জনগণদের টিকা প্রদান করতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ:
এ বিশিষ্ট জনের মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্যোগগুলো নিয়েছেন খুবই ভালো। কোন সংকোচ না করে সর্বসাধারণেরকে টিকা গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা জেনেছি ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ভ্যাকসিন নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো ভালো।
আশা করি কোন অসুবিধা হবে না। তবে করোনায় সামনের সারিতে যারা কাজ করছেন তাদেরকে টিকা প্রদানে আগে রাখাতে হবে তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্যদেরকে টিকা দিতে হবে। তাছাড়াও করোনার মধ্যে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজন কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকেও টিক প্রদানে এগিয়ে রাখা উচিত।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ :
এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কোন দ্বিমত করা যাবে না। তারপর বয়সভিত্তিক বিবেচনা করতে হবে।
৫০ থেকে ৬০ বছর কোটায় যারা রয়েছেন তাদের আগে টিকা প্রদান করতে হবে। এরপর যারা করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদেরকেও টিকা নিশ্চিত করতে হবে।’সূত্র:ইত্তেফাক