‘ও মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও, আমি যে পথ চিনিনা গো...’
।। ড. হাসনান আহমেদ।।
ছোটবেলায় শেখা গানের কলি এখনও কিছু কিছু মনে পড়ে। একটা গানের প্রথম কলি হলো: ‘ও মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও, আমি যে পথ চিনিনা গো সঙ্গে কইরা নাও, মুর্শিদ...’। গানের কলিগুলো আজও পাথেয় বলে মনে হয়। এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেখি, আত্মরক্ষার সব পথ যখন সংকুচিত হয়ে আসে, তখন মুর্শিদের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া বিকল্প তো আর কিছু থাকে না।
এটা বাঙালি সমাজের শাশ্বত আকুতি ও রীতিনীতি। তাই আমার এই গানের কলির অবতারণা। শিক্ষকতা পেশায় থাকাতে অন্য কোনো খারাপ ধান্ধায় না জড়িয়ে জীবনের এইসব গান আঁকড়ে ধরে এদেশে জীবন সাগর পাড়ি দিচ্ছি। এই জীবন-গানের যতটুকু মনে পড়ে আজ গেয়ে শুনাবো।
যুগান্তর পত্রিকার উপসম্পাদকীয় শিরোনাম ছাড়াও বেশ কয়েকটা সংবাদ ক’দিন ধরে পড়ছি। ‘সুবর্ণচরে আবারও দলবদ্ধ ধর্ষণ পৈশাচিকতার শিকার মা-মেয়ে: আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার (৭.২.’২৪)।’ ‘কারা ওদের বখাটে বানাল? (উপসম্পাদকীয়, ৬.২.’২৪)।’ ‘জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চার দফা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের ডাক (৭.২.’২৪)।’ ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়নÑ প্রকল্পের অর্থছাড়ে অবৈধ লেনদেনের ছড়াছড়ি (৬.২.’২৪)।’ ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ভারত পাশে ছিল: পররাষ্ট্রমন্ত্রী (১০.২.’২৪)’। ‘চিকিৎসাব্যব¯’া সেবার জায়গা থেকে চলে এসেছে ব্যবসায় (১০.২. ’২৪)’ ইত্যাদি। এছাড়াও নিজের জীবন থেকে সদ্য নেওয়া একটা চলমান ঘটনার কিয়দংশ কেস-স্ট্যাডি হিসাবে এখানে তুলে ধরবো।
বারবার এসব শিবের গীত গাইতে জীবনের এই বেলাশেষে আর ভালো লাগে না। তবু না গেয়ে উপায়ও থাকে না। উপরে মাত্র কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করলাম। পত্রিকা পড়লেই হাজার হাজার এসব সংবাদ গোচরিভূত হয়। দেশের ভবিষ্যত ঠিকানা নিয়ে মনের কোনে সংশয় জাগে।
সব কিছুতেই প্রমাণিত হয় জনগোষ্ঠী ক্রমশই নৈতিকতা ও মানবিকতা হারিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জন-আপদে পরিণত হচ্ছে। দুর্নীতি প্রতিটা পর্যায়ে মহামারির মতো ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কথায় ভেজাল, চিন্তায় ভেজাল, কর্মে ভেজাল, ধর্মে ভেজাল, বিবৃতিতে ভেজাল, ভেজালের ঢেউ এদেশের ‘বেহেশতনামী বাগানের’ প্রতিটা জীবনের মন্দাকিনী তীরে আছড়ে পড়ছে। আবার ‘বেহেশতের এ বাগান’কে কোনো একজন বিচারপতি ‘জাহান্নামের’ সাথে তুলনা করছেন। তাই দেশ কেমন চলবে সবাই আমরা বুঝতে পারি। এ নিয়ে ভাবার কেউ নেই। দেখার কেউ নেই।
প্রত্যেকে যার যার ব্যক্তিগত কিংবা গোষ্ঠীগত ধান্ধায় মত্ত। যারা ভাবছেন, তাদের কথার কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না এবং পরিস্থিতি উন্নতির পরামর্শ কোনো আসরেই পাত্তা পাচ্ছে না। মানুষের জন্য সমাজ, রাষ্ট্র। মানুষই এর রক্ষাকর্তা, মানুষই সুরাসুর। সেই মানুষের বৃহদংশ দুর্নীতিবাজ, অমানুষ, মিথ্যাবাদি, স্বার্থপর, ধাপ্পাবাজ, চুগলখোর, ‘চাটার দল’, পশুসাদৃশ কৃতকর্ম ও চিন্তা-চেতনাসমৃদ্ধ হয়ে গেলে দেশ ও সমাজ চলে কীভাবে! পত্রিকার খবরগুলোতে তো এসবেরই প্রমাণ মেলে।
কেবল নির্বাচন হয়ে গেল। অবৈধ টাকা লেনদেনের আঁখড়া জমেছিল, একথা আমরা কে না জানি! এটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অবৈধ এসব লেনদেন প্রমাণ করে নিকট ভবিষ্যতে আমরা ভালো পথে চলবো না। শত শত কোটি টাকার লেনদেন করে যদি নির্বাচিত হই কিংবা কোনো পদে বসি, অবশ্যই কমপক্ষে তার পাঁচ-দশগুণ টাকা দায়িত্বে থাকাকালীন যে কোনো উপায়ে ফেরৎ নিতে চাইবো।
ধরার কেউ নেই, বলারও কেউ নেই। যিনি সে”চাবিপদ ডেকে আনতে চান, তিনিই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেন। আমি ক্ষুদ্র-নগণ্য মাস্টার মানুষ, স্মরণ করিয়ে দিতে পারি, প্রতিবাদের সক্ষমতা আমার নেই। তখনই বলতে হয়, এদেশে রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যবসা, যার কারণে দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষ বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশের নিয়ন্ত্রণব্যব¯’াগুলো ত্রুটিযুক্ত কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিকল হয়ে পড়ে আছে।
মনে পড়ে একই গানের কিয়দংশ, ‘অন্ধকারে পইড়া ডাকি আমায় নিয়া যাও, মুর্শিদ আমায় নিয়া যাও/ তুমি যে নিদানের বান্ধব বাঁচাইয়া দাও নাও, মুর্শিদ...’। আমাদের ‘করিতকর্মা রাজনীতিক ব্যবসায়ী’দের কাছ থেকে সমাজের প্রতিটা পেশার মানুষ অপকর্ম, অনাচার, জিব ঘোরানো-প্যাচানো, ডাহা মিথ্যার বেসাতি ইত্যাদিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাই সমাজ গেছে পচে। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের সময় সব দল এক। যদিও মুখের বচন‘উন্নয়ন’; নিরেট বাস্তবতা হচ্ছে অমানবিকতা, গলাবাজি, মিথ্যাচার, ধ্বংসের হাতছানি, আধিপত্যবাদের চাটুকারিতা, দেশ শোষণ, অবৈধ টাকার পাহাড় গড়া ইত্যাদি।
এ সমাজে সব অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতি তো ওপেন-সিক্রেট হয়ে গেছে। শুধু ‘ভাসুরের নাম’ মুখে বাধে বলে বলা নিষেধ। অসুবিধার মধ্যে এটুকুই যে, আমরা নিজের চিন্তা ও কর্মকে অস্বীকার করি, তার পরও টিকে থাকি; কারণ ‘হাম্ভিও কাঁঠাল খাইয়া, তুম্ভিও কাঁঠাল খাইয়া, তুম হামারা দোস্ত’ গল্পের বাস্তব প্রয়োগ হয়ে যায়।
এগুলো আত্মপ্রব না ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা সাধু সাজি, সাধু হই না। আমরা নিজেদের বড্ড চালাক-চতুর, খুব বুদ্ধিমান ভাবি। কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে নিজেকে এবং আমাদের ওপর নির্ভরশীল দেশ, সমাজ ও ব্যক্তিদের রক্ষা করতে পারিনে। দেশ ও সাধারণ মানুষ ভোগে । ইদানীং একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছে বলে বাতাসে চাউর হয়েছে। হয়তো ঘটনাটা ঠিক নয়, বাতাসেরই দোষ, দুর্গন্ধময় বাতাস। বিষয়টা এরকম ‘গুলি মারবো এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’।
কথাটা সম্ভবত পরলোকগত পীর হাবিবুর রহমানের লেখায় পড়েছিলাম। বিষয়টার বাস্তবায়ন এরকম: টাকা দেবো ‘অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে’, তৃতীয় পক্ষকে, পদ নেবো এদেশে। তাও অল্প টাকা নয়, শত শত কোটি টাকা। বড্ড লজ্জা ও বিপদের কথা! আমরা কি আমাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছি? স্বাধীনতাপ্রিয় দেশপ্রেমী শক্তিকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।
উপরের খবরগুলো এ-কথাই প্রমাণ করে, দেশে আইনের শাসনের দারুণ অভাব, শক্তিমানের দাপট বিদ্যমান, মনুষ্যত্ব বোধ ও নীতি-নৈতিকতা অপসৃত, লুটপাটের কৌশলে ক্ষমতাধররা টেইনিংপ্রাপ্ত, পক্ষপাতদুষ্ট সমাজ, দুর্নীতিবাজরা সুযোগের পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত। এমন হলে দেশ চলে কীভাবে? মুর্শিদের কাছে পথের সন্ধান চাওয়া ছাড়া গত্যন্তর কী?
বেশ কিছু পরিচিতজন, আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে। তাদেরকে দেখতে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। আরো শত শত রোগীর সন্ধান পাচ্ছি। প্রতিটা হাসপাতাল জনাকীর্ণ। অধিকাংশ রোগী জীবনঘাতি রোগে আক্রান্ত। ভেজাল বাতাস ও খাদ্যে ভেজালের ফলে অকালেই কিডনি ফেইলিউর, ক্যান্সারের মতো রোগে ভূগছে। রোগগ্রস্ত, পঙ্গু ও দুর্বল জাতিতে পরিণত হচ্ছি।
কে এদের খোঁজ নিচ্ছে? রোগের প্রতিবিধানের কোনো ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি কি-না? আমাদের চিন্তা ও কর্ম প্রতিবিধানের দিকে, না-কি সেখানের পরিবেশ ও অবস্থার সুযোগ নিয়ে যতটা পারা যায় উপায়-রোজগারের দিকে? এদেশের যত অপকর্ম ও পৈশাচিকতার সাথে যুক্ত কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের পোষ্যপুত্ররা। এদেশে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এদের ক্ষেত্রে আইনও অকার্যকর। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? জবাবদিহিতা নেই বলেই অনেক সুযোগসন্ধানি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এসে অপকর্ম করে। এর কি কোনো নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা করা যায় না? এবার নিজের সদ্য-অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কেস-স্ট্যাডির নামে তুলে ধরি।
ঢাকার অদূরে গাবতলী বাস টার্মিনাল পেরিয়ে আমীনবাজারের পশ্চিম দিকে ‘মধুর স্বাদে ভরা’ একটা হাউজিং প্রকল্প গড়ে উঠেছে। মালিক পক্ষের রেষারেষিতে প্রকল্প যথাসময়ে সরকারি অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। জমি বিক্রি প্রায় শেষ। কোর্টের রায় আসে জলাভ‚মি ভরাটের বিরুদ্ধে; যদিও ঢাকা শহরের বিস্তার লাভ ও বিশালতা জলাভূমি ভরাট দিয়েই হয়েছে ও হচ্ছে। তিন থেকে চার হাজার সাধারণ প্লটক্রেতা মহাবিপদে। অনেকেরই জীবনের সম্বল শেষ। আশার আলো এটুকুই যে আদালতের রায়ে প্লটক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার কথাও বলা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল মালিক বিদেশ পাড়ি দিয়েছে। বর্তমানে প্রজেক্ট-মালিকের অভাব নেই, হযবরল। ব্যবস্থা পনার নামে বিভিন্ন পক্ষের বেশ কিছু সুযোগসন্ধানী লোকজন প্রজেক্ট লুটপাট, জমিদখল ও অবৈধ রুজি-রোজগারের আঁখড়া জমিয়ে তুলেছে। এখানে আমারও একটা পাঁচ কাঠার প্লট আছে, মাসিক কিস্তিতে কিনেছিলাম। একাধিকবার বেদখলও হয়েছে। প্লট ক্রেতাদের সংগঠনের অভাব নেই, ঠিক এদেশের রাজনৈতিক দলের সংখ্যার মতো। কারো পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র নেই, প্লট প্রতিনিধি নির্বচনে কোনো গতিশীলতা নেই। অনেকের বিরুদ্ধেই তহবিল তসরুপ ও অবৈধ জমি দখলের অভিযোগ। কেউ কেউ পানি ঘোলা করে মাছ ধরে টাকা বানাচ্ছে।
সেখানে এদেশের অনেক কাক ময়ূরপু”ছ ধারণ করেছে। কারো ‘মুখে মধু, পেটে বিষ’। এমনই একটা জগাখিচুড়ি অবস্থায় প্লটমালিকদের একদল লোক আমাদের নয় জনকে অনুরোধ করলো: প্লট-প্রতিনিধি নির্বাচনে গতিশীলতা আনতে হবে, ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেম ও ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রজেক্টকে আইনের মাধ্যমে সাত বছরের মধ্যে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা অবৈতনিক কাজে বহাল হয়ে গেলাম। সকল পক্ষের সাথে মিলে লিখিতভাবে সকলের স্বাক্ষর নিয়ে উদ্দেশ্যের নীতিমালা তৈরি করলাম। সবাই সম্মত।
কয়েকদিনের মধ্যে মতলববাজ ও মিছরির-ছুরি লোকগুলো ঠুনকো অজুহাতে বিরোধিতা ও অপপ্রচার শুরু করলো। এদেশে ওদের পোয়াবারো। চামড়ার জিহ্বা ঘোরে ফেরে। আমরা তাদের শত্রু নই। তারাও এটা মনে মনে জানে। শত্রু হচ্ছে প্রতিনিধি নির্বাচনে গতিশীলতা আনার চেষ্টা। তাদেরকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করলেই তো হয়; আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কেন! শতেক বাহানা। বাইরে নিজেকে ফেরেশতা হিসেবে দেখানো; মনে ও কাজে টাকা হাতানো স্বভাব।
টাকা-পয়সা ও ব্যবস্থাপনায় কোনো জবাবদিহিতা নেই; প্রজেক্টের ‘মহান নেতারা’ কাজ করবে; তার জন্য আবার ‘ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল সিস্টেম’ ও ‘ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেম’ প্রতিষ্ঠা কেন! কন্ট্রোলিং সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টার সাথে তাদের শত্রæতা। তারা যেমন খুশি খাবে, গাইবে, নাচবে। আমার মতো একজন মাস্টার সাহেব ‘কন্ট্রোল সিস্টেম’ তৈরি করার কে!
এখন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সীমা-পরিসীমা নেই। ‘খলের ছলের অভাব হয় না’। সাধারণ প্লটমালিকরা এক দিকে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে; খলরা ক্ষমতাধর, লাঠিয়ালবাহিনীর নেতা, আত্মপ্রব ক, ডাহা মিথ্যাবাজ, প্রতারক, অপপ্রচারকারী, খাদকগোষ্ঠী আমাদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এখন যত নিন্দা ও দোষের দায়ভার আমাদের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে দুর্নীতিবাজরা অভায়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। সাধারণ প্লটমালিক নির্বিকার। ‘ক্ষমতাধরদের কাছে তারা ‘ঠেলার নাম বাবাজী’ হয়ে বসে আছে।
আমি পেশায় একজন সার্টিফায়েড ম্যানেজমেন্ট ও ফাইন্যান্সিয়াল কন্সালটেন্ট। আজ তেতাল্লিশ বছরে যেখানে গিয়েই দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করেছি, যথাযথ ম্যানেজমেন্ট ও ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করেছি, ছোট-বড় কোম্পানি বাদে সরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে আমাকে পাল্টা ‘দুর্নীতিবাজ পদবীর’ মালা গলায় পরে সম্মান বাঁচিয়ে নীরবে সরে আসতে হয়েছে।
এমনই হাজার হাজার ঘটনা আমি স্বচোক্ষে দেখছি। এদেশে মানুষের সামাজিক সুশিক্ষা, বিবেচনা বোধ বাড়েনি, কুটিল স্বার্থবাদী বুদ্ধি বেড়েছে। জিব ঘোরানো-ফেরানো, উল্টানোর জন্য কোনো শাস্তি পেতে হয় না। বিবেক, মনুষ্যত্ব ও পরিবেশ গেছে বেশী নষ্ট হয়ে। পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত ক্রমাবনতি হচ্ছে।
এদেশের কথায় আসুন। যখনই জবাবদিহিতা, রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল সিস্টেম এদেশে চালু করতে যাবেন, তখনই দেখবেন সকল দল এর বিরুদ্ধে কথা বলবে। তারা জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে চাইবে।
পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ জবাবদিহি সিস্টেম বহাল রাখতে চাইবে। বিভিন্ন অজুহাত দেখাবে। ‘সব শিয়ালের এক রা’ হয়ে যাবে। আপনি তখন অসৎ সম্প্রদায়ের কেউ বলে পরিগণিত হবেন। বলবে, আপনি কথা বলার কে? আপনি তখন একটা ফুটবল। একদল লাথি মেরে অন্য দিকে পাঠাবে, অন্য দল লাথি মেরে বিপরীত দিকে পাঠাবে। আপনার কোনো দল নেই, আপনি সত্য কথা বলার দলে।
সবার লাথি আপনার মাথায়। যতদিন এদেশে রাজনীতির জবাবদিহি সিস্টেম আইনের মাধ্যমে চালু না হবে, মানুষকে নীতিবান-স্বদেশপ্রেমী শিক্ষায় শিক্ষিত করে না তোলা যাবে, আমাদের দেশোন্নয়ন চাওয়া অধরাই রয়ে যাবে। তখনই গানটার শেষাংশ মনে পড়বে, ‘মাঝ দরিয়ায় উঠলে তুফান পথের লাগলে ভুল, আমি কোন নামেরি দোহায় দিয়া, হায়রে কোন নামেরি দোহায় দিয়া আমি পাইবো নদীর কূল, মুর্শিদ পথ দেখাইয়া দাও’।
লেখক-ড. হাসনান আহমেদ: অধ্যাপক, ইউআইইউ; সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ, প্রেসিডেন্ট, জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ।