ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি
এই করোনাকালে সবকিছুই যখন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা দরকার, তখন জীবন রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের দাম সর্বোচ্চ চারগুণ বেড়েছে। সরকার নির্ধারণ করে দেয়ার পরও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেড়েছে দেড় থেকে দুইগুণ, ভিটামিনজাতীয় ওষুধের দাম তিন থেকে চারগুণ, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগের ওষুধের দাম দেড় থেকে দুইগুণ বেড়েছে।
পাশাপাশি বেড়েছে সর্দি-জ্বর, মাথাব্যথা, কাশির ওষুধের দামও। বাদ পড়েনি অ্যান্টিবায়োটিক ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার ওষুধও। করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে রেমডিসিভির। ঔষধ প্রশাসন এর দাম ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এছাড়া করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফেভিপেরাডিনের নির্ধারিত মূল্য ২০০ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ১৯৯৪ সালের এক সরকারি আদেশ অনুযায়ী মাত্র ১১৭টি ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকার। জানা যায়, এই ১১৭টি ওষুধের অর্ধেকই এখন আর ব্যবহৃত হয় না। ফলে কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো। তারা কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেয় ওষুধের দাম।
দুর্ভাগ্যজনক যে, এ পরিস্থিতি রোধে নেয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। আমরা বলব, এ ব্যাপারে সরকারের নির্বিকার থাকার সুযোগ নেই। ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে ঝুঁকছে ঝাড়ফুঁক আর টোটকা চিকিৎসার দিকে। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।
চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, এক্ষেত্রে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নিরসনে উদ্যোগী হওয়া। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের সুস্থতার জন্য জীবনরক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
এজন্য যদি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে দ্বিধা করলে চলবে না। বস্তুত ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা থাকা উচিত সরকারের। উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণের অধ্যাদেশে যে কোনো ওষুধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের হাতেই ছিল। এ বিধান আবার ফিরিয়ে আনা জরুরি।