এসএসসি এইচএসসি বন্ধু গ্রুপ খুলে প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ইসমাইল হোসেন রিগ্যানইসমাইল হোসেন রিগ্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্কুল-কলেজের ব্যাচভিত্তিক একটি গ্রুপের সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইসমাইল হোসেন ওরফে রিগ্যান। পরে ওই গ্রুপের কয়েকজন অ্যাডমিনের একজন হন। গ্রুপের সদস্য বন্ধুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইসমাইল হোসেন নিজেকে পরিচয় দিতেন বড় ঠিকাদার হিসেবে।
আস্থা অর্জনে ফেসবুক পোস্টে আলিশান অফিস আর বাড়ির ছবি দিতেন। ঠিকাদারিতে বন্ধুদের বিনিয়োগ করে বেশি টাকা আয়ের প্রলোভনও দেখাতে থাকেন। ইসমাইলের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে বিনিয়োগও করেন।
শুরুতে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা ভালো লাভ পাওয়ায় অন্য বন্ধুরাও ইসমাইল হোসেনের ব্যবসায় টাকা ঢালেন খোঁজখবর না নিয়েই। কেউ এক–দুই লাখ টাকা আবার কেউ অর্ধলক্ষ টাকাও বিনিয়োগ করেছেন। শুরুর কয়েক মাস বিনিয়োগের বিপরীতে প্রতি এক লাখে পেয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। পরে লাভ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে ফেসবুক বন্ধুরা জানতে পারেন, ইসমাইল হোসেন তাঁদের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ইসমাইল তাঁর ফেসবুক বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, রাজশাহীসহ সারা দেশের ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের বন্ধুরা। প্রতারণার শিকার হওয়া এসব লোকজনের মধ্যে আইনজীবী, ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও ব্যাংক কর্মকর্তাও আছেন।
ইসমাইলের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গত মাসে ৯টি মামলা হয়। আরও অনেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলা হলেও তদন্তে নেমে পুলিশ ইসমাইলের কোনো টাকা ও সম্পদের হদিস পাচ্ছে না। এদিকে তাঁকে দেশে এনে বিচারের দাবিতে গত অক্টোবরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ইসমাইল হোসেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ অলিপুর পাটোয়ারি বাড়ির মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারির ছেলে।পড়ালেখা স্নাতক পর্যন্ত। তিনি ২০০২ সালের এসএসসি ও ২০০৪ সালের এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সারা দেশের এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। ২০১২ সালে গ্রুপটি খোলা হলেও ২০১৭ সালের দিকে এটির অ্যাডমিন হন ইসমাইল।
সেখানে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে প্রায়ই ছবি পোস্ট করতেন। বড় প্রকল্পের কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত দাবি করে বিনিয়োগের জন্য বন্ধুদের আহ্বান করতেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ইসমাইল ওই গ্রুপে একটি পোস্ট দেন। চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত খুলশী এলাকায় ২ হাজার ২৮৯ বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট কিনে থাকতেন। পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে গ্লোবাল করপোরেশন নামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলেন। এ কারণে সহজে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন সবার কাছে।
ইসমাইল যে স্কুলভিত্তিক গ্রুপে ছিলেন, সেই গ্রুপেরই এক সদস্য ফারুক আহমেদ ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, কয়েক দফায় বন্ধু ইসমাইলকে তিনি ৬৪ লাখ টাকা দেন। বিনিময়ে লাখে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে লাভ দেওয়া বন্ধ করে দেন ইসমাইল। লাভ দূরে থাক, ব্যবসার জন্য তাঁর দেওয়া সব টাকা এখন হাওয়া হয়ে গেছে বলে জানান ফারুক আহমেদ।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. সোহাগ বলেন, ২০১৮ সাল থেকে নিজেদের স্কুল–কলেজভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ইসমাইলকে চেনেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ১০ লাখ টাকা দেন ইসমাইলকে। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে আরও ১০ লাখ টাকা দেন। তাঁর আরেক বন্ধু সাঈদসহ মোট ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। টাকা দেওয়ার পর থেকে লাখে পাঁচ হাজার টাকা করে লাভ পান। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আর পাচ্ছেন না।
বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য নগদ টাকা ছাড়া ভাড়া গাড়িও নিয়েছেন ইসমাইল। অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি ভাড়া দিতেন ইসামইল। দুবাইয়ে পালানোর আগে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া গাড়িগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে। ইসমাইল হোসেন ফেসবুক বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে ইসমাইল হোসেন সপরিবার দুবাইয়ে চলে যান গত সেপ্টেম্বর মাসে।
স্কুলভিত্তিক ফেসবুক খুলে অনেকে প্রতারণা করছে এমন অভিযোগ করেছে অনেক ভুক্তভোগী শিক্ষাবার্তার কাছে। এইসব প্রতারনার হাত থেকে সকলকে সচেতন থাকতে ভুক্তভোগীসহ অনেকে অনুরোধ করেছেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়