এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সর্বজনীন বদলি চালু করুন
ইয়াছমিন আক্তার।।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলিসহ কয়েকটি বিষয় পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি কয়েকটি বিষয় এখানে আলোকপাত করতে চাই।
বাংলাদেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একেবারেই শুরুর দিকে ম্যানেজিং কমিটি তথা গভর্নিং বডির মাধ্যমেই শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করা হতো। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে এবং বর্তমানে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত এমপিও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সব প্রক্রিয়া ও নীতিমালা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত। কাজেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভিন্নতা ও দুর্বলতা কোনোটার জন্যই শিক্ষকরা দায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন হয়।
কাজেই নীতিমালায় ভিন্নতা হতেই পারে। নীতিমালা সরকার প্রণয়ন করে। নিয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা থাকলেও সবাই এমপিওভুক্ত শিক্ষক। সরকার কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার ভিন্নতার কারণে একই পেশাজীবীদের সুযোগ-সুবিধার ও পেশাগত অধিকারের ভিন্নতা হতে পারে না। একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, একজনে বদলি পাবে আরেকজনে পাবেন না, এরকম দৃষ্টান্ত তৈরি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। কাজেই বর্তমান আলোচিত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়টি প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পেশাগত অধিকার।
কমিটির নিয়োগে সবাই নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করছেন এমন একটি অভিযোগ করতে দেখা যায় অনেকের। কেউ কেউ বলছেন, কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষকই নিজের এলাকায় অথবা পছন্দের এলাকায় নিয়োগ পেয়েছেন। শিক্ষকরা নিজে গিয়েই চাকরি নিয়েছেন। তাহলে তাদের বদলি কেন দরকার।
বাস্তবতা হলো, জীবিকার প্রয়োজনে অনেকেই নিজের এলাকার বাইরে অন্য জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। এখন অনেকেই শিক্ষকতার মাঝামাঝি অথবা শেষপর্যায়ে চলে এসেছেন। এ দীর্ঘ সময়ে এই শিক্ষকরা নিজের এলাকার বাইরে শিক্ষকতা করছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেও বদলির সুযোগ না পেলে, সেখানে অন্য সহকর্মীরা পেলে স্বাভাবিকভাবেই এ শিক্ষকদের মনঃকষ্ট ও পেশাগত হতাশা তৈরি হবে। যার প্রভাব পড়বে শিক্ষা কার্যক্রমে।
শিক্ষকদের মধ্যে কারও কারও স্বামী বা স্ত্রী দূরে চাকরি করেন। দূরে থাকার কারণে অনেক শিক্ষকই ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা, পড়াশোনা ও পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে পারেন না। কাজেই অল্প শিক্ষকদের বদলির প্রয়োজন হলেও বদলিটা এ শিক্ষকদের জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক দাবি। তাই মানবিক বিবেচনায় সব শিক্ষককেই বদলির আওতায় আনা দরকার।
এ ধরনের বদলির ক্ষেত্রে সমন্বয় করা অনেক কঠিন হবে এবং গুটিকয়েক শিক্ষকই বদলি হতে পারবেন। এতে করে শিক্ষকদের কষ্টের লাঘব হবে না। বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের ভিত্তিতেই বদলি দেওয়া প্রয়োজন। একটা নীতিমালাই যেহেতু করা হবে, এ ধরনের জটিলতা না রাখাই প্রত্যাশিত। ফলপ্রসূ বদলি নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে—
১. যেহেতু বিভিন্ন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, তাই একাডেমিক যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দূরত্ব ও স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থল বিবেচনায় নিয়ে স্কোরিংয়ের ভিত্তিতে বদলি করা যেতে পারে।
২. বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বদলির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যোগদানের দুই-তিন বছর পর পরবর্তী বদলির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
৩. সিটি করপোরেশন ও শহরমুখী বদলির চাপ এড়াতে শুধু নিজ জেলা অথবা উপজেলা এবং স্বামী অথবা স্ত্রীর কর্মস্থলে বদলির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
সর্বোপরি রাষ্ট্রের যে কোনো নীতি জনগণের কল্যাণেই করা হয়। কোনো নীতিমালা প্রণয়নে যদি অধিকাংশই বঞ্চিত হয়, তাহলে সেটা কোনো কল্যাণকর নীতিমালা নয়। আশা করছি বদলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদার ও মানবিক হবেন। সব শিক্ষকই বদলির সুযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট সবার ওপর একদিকে যেরকম আস্থা বাড়বে। একই সঙ্গে পাঠদানে শিক্ষকরা আরও বেশি মনোযোগী হবেন। এমপিভুক্ত শিক্ষকদের সার্বজনীন বদলি চালু করতে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, আচলছিলা উচ্চ বিদ্যালয়, মতলব, দক্ষিণ চাঁদপুর