এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর সুবিধা, আরও যা দরকার!
মাজহার মান্নানঃ উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা এসেছে– অবসরের ছয় মাসের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাওনা দিয়ে দিতে হবে। অবসরের টাকা উত্তোলনে যে বিড়ম্বনা, তা থেকে শিক্ষকরা পরিত্রাণ পেতে চলেছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। তদুপরি অবসরের টাকা পেতে ঘাম ঝরে যায়। অনেক শিক্ষক আছেন, জীবদ্দশায় অবসরের টাকার মুখ দেখতে পারেননি। বয়সের ভারে জীবন যখন এমনিতেই চলতে চায় না, তখন অবসরের টাকা পেতে হিমালয়সম বাধা জীবনকে যেন অর্থহীন করে তোলে। বাংলাদেশে একজন শিক্ষকের প্রাপ্তি খুবই কম। অবসরে গিয়ে এককালীন কিছু টাকার মুখ দেখতে পান তারা। কিন্তু সেটা পেতে যখন পাদুকা ক্ষয় হয়ে যায় এবং ঘুষ দিয়ে টাকা পেতে হয় তখন তা আনন্দময় নয়; হয়ে ওঠে বিষাদময়। ২০০৫ সাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা চালু করা হয়। শিক্ষক-কর্মচারীরা দুটি সুবিধা পেয়ে থাকেন।
একটি হলো সর্বশেষ বেসিকের ৭৫ মাসের টাকা (যদি চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হয়), যেটি পেনশন নামে পরিচিত। অন্যটি হলো কল্যাণ তহবিলের টাকা। তবে শিক্ষকরা এ সুবিধা বিনা শর্তে পান না। তাদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে প্রতি মাসে বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে ৬ শতাংশ অবসর ভাতা এবং ৪ শতাংশ কল্যাণ তহবিলের জন্য। আগে কাটা হতো ৬ শতাংশ। পরে ৪ শতাংশ যুক্ত করা হয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হওয়ার পর এই ৪ শতাংশ কাটা শুরু হয়। এই টাকা কাটা বিষয়েও শিক্ষকদের মাঝে রয়েছে অস্বস্তি।
যাহোক, শিক্ষক-কর্মচারীরা ১০ শতাংশ হারে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অবসরে গিয়ে তাদের সেই গচ্ছিত টাকা ফেরত পেতে বিড়ম্বনার শেষ নেই। পদে পদে হেনস্তা হতে হয়। তবে এটা স্বীকার করতে হবে, আগের চেয়ে এখন হয়রানি অনেকটা কমেছে। তার পরও অবসর ভাতা পেতে তাদের বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। সরকার কয়েক ধাপে ঘাটতি পূরণে অর্থ বরাদ্দ দিলেও সবার পাওনা পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। এখনও ঝুলে আছে লক্ষাধিক ফাইল। শিক্ষকদের অবসর সুবিধার গিঁট ছাড়ানোর যেন কেউ নেই। শিক্ষক-কর্মচারীদের হাহাকার যথাযথ কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছে না।
আদালতের নির্দেশনার পর বেসরকারি শিক্ষকরা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন। যেসব শিক্ষকের পাওনা দীর্ঘদিন ঝুলে আছে, দ্রুত তা পরিশোধ করা হোক। যারা নতুন করে আবেদন করবেন অবসরের সুবিধার জন্য, তাদের সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দেওয়া হোক, যেদিন তারা টাকা হাতে পাবেন। আবেদন সম্পূর্ণ হওয়ার পর তাদের মেসেজ দিয়ে টাকা প্রাপ্তির তারিখ জানানোর ব্যবস্থা করা হোক। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহি প্রয়োজন। আর যা না হলেই নয়, তা হলো, অবসর সুবিধা পেতে যে দুর্নীতি হয় তার কবর রচনা করা।
লেখকঃ শিক্ষক, ঢাকা
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০২/২০২৪