এনটিআরসিএ'র মামলার জালে বিপাকে মেধাতালিকার ৫ লাখ প্রার্থী
নিউজ ডেস্ক।।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের ক্ষমতা গভর্নিং বডির কাছ থেকে শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকেই একটা হযবরল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিভিন্নক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় একের পর এক মামলার জালে পড়তে হচ্ছে এনটিআরসিএকে। এর ফলে আটকে যাচ্ছে একের পর এক নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিপাকে পড়ছেন মেধাতালিকায় থাকা ৫ লাখ প্রার্থী।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০০৫ সাল থেকে সার্টিফিকেট দিয়ে আসছিলো এনটিআরসিএ। সার্টিফিকেট থাকলেও নিয়োগের ক্ষমতা ছিলো গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালে এই পদ্ধতির পরিবর্তন আনে সরকার। ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে মেধা তালিকা করা হয় উপজেলাভিত্তিক। শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেয়ার আগে পাশ হয় নতুন আইনও।
কিন্তু এনটিআরসিএর হাতে নিয়োগের ক্ষমতা যাওয়ার পর থেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলে সংস্থাটি। একের পর এক সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ হন প্রার্থীরা। এ কারণে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের হয়। মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার শতাধিক। মামলার কারণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতেও পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষক শূন্যতায় ভুগছে।
সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের বিপরীতে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক ও জাতীয় সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান পেতে হয়। এরপর নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি বা সার্কুলারের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হয়। চূড়ান্ত ধাপে মেধা তালিকা অনুসরণ করে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে একজন শিক্ষককে উক্ত পদে সুপারিশ করা হয়।
এনটিআরসিএ প্রথম থেকে ১৪তম সমন্বিত মেধা তালিকা থেকে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রায় ৪০ হাজার পদে নিয়োগ দেয়। নিয়োগের পর একাধিক মামলা হয়। আদালতের রায়ে প্রথম থেকে ১৫তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রেও গরমিলের অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। এমনকি সন্দেহের বশেও তারা উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেন।
প্রার্থী কমানোর জন্য প্রথম থেকে তৃতীয়, প্রথম থেকে ষষ্ঠ বা প্রথম থেকে অষ্টম নিবন্ধন পর্যন্ত বাদ দেয়ার গুঞ্জন ওঠে। এসব কারণে চার শতাধিক রিট মামলা করেন প্রার্থীরা, যেগুলো নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। এছাড়া এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের উদাসীন ভাব রয়েছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তির কাজ শেষ হওয়ার আড়াই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০ এপ্রিল ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ৩ মে পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে শিক্ষকদের সুপারিশ করতে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করবে এমনই কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি। তারা বিভিন্ন মামলাসংক্রান্ত কারণে কালক্ষেপণ করে। প্রার্থীরা বলছেন, এই মামলাসংক্রান্ত জটিলতা তাদের অনেক পুরোনো।
তাছাড়া তাদের কিছু হুটহাট সিদ্ধান্ত ও মামলাগুলোকে অবহেলা করার জন্যই এই অবস্থার সৃষ্টি। আপিল ডিভিশনের চূড়ান্ত রায় পাওয়ার পর এখন আবার রায়ের কপির অজুহাত দিচ্ছে। এ রকম বক্তব্য তাদের কাছ থেকে অনেকবার পাওয়া গেছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করা যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সচিব ড. এ টি এম মাহবুব-উল করিম সোমবার (৫ জুলাই) বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আদালতের সার্টিফিক কপি পাওয়ার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।