এনটিআরসিএর নিয়োগ ও মহামান্য হাইকোটে ১৬৬টি মামলা অতপর---
মোঃ সাইফুর রহমান।।
শিক্ষা ক্ষেত্রে “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি”কে বাধ্যতামুলক করেছে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতিই পারে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রধান হাতিয়ার হলো কম্পিউটার।প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় কম্পিউটার ও আইসিটি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে । শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হলেও কম্পিউটার শিক্ষকের অভাবে এসব ল্যাব অচল হয়ে পড়ে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষক না থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনটিআরসিএ ও মাউশির সমন্বয় হীনতা।কোন সমন্বয় না করেই একেক সময় একেক ধরনের পরিপত্র জারী করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ই নভেম্বর,২০১৫ সালে একটি পরিপত্র জারী করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএ কে দেয় । যা আগে সনদ প্রদানের ক্ষমতা ছিল এনটিআরসিএর হাতে আর নিয়োগ দানের ক্ষমতা ছিল প্রতিষ্ঠানের কমিটির হাতে । এ পরিপত্রে বলা হল-এনটিআরসিএ প্রতিবছর প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে শুন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করে ,পিএসসির আদলে (প্রীলিমিনারী,লেখিত,ভাইভা) একটি নিবন্ধন পরিক্ষার গ্রহনের মাধ্যমে উপজেলা,জেলা ভিত্তিক শুন্যপদে মেধার ভিত্তিতে ১জন প্রার্থীকে সুপারিশ করবে।
সনদের মেয়াদ হবে ৩ বছর।কিন্তু ১-১২ তমের সার্টিফিকের মেয়াদ ছিল আজীবন। এনটিআরসিএ ২০১৬সালে প্রথম চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ।এতে করে ১ম -১২ তম নিবন্ধন সনদ অর্জনকারী অনেকেই সনদের বৈধতা হারায়।সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার পদে ,ছয়মাস মেয়াদী কম্পিউটার ডিপ্লোমা সনদধারীরা আবেদনের সু্যোগ হারায়। তারা আদালতের দ্বারস্থ হলে আবেদনের সুযোগ পায় এবং মহামান্য হাইকোট ছয়মাস মেয়াদী ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষে রায় দেয় ।প্রথম চক্রে কম্পিউটার পদে ১০৯৫ টি শুন্যপদের মধ্যে মাত্র ৩৪৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছে এবং অবশিষ্ট ৭৫১টি পদ রায় থাকা শর্তেও নিয়োগ না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেছে এনটিআরসিএ।অপরপক্ষে ২০১৬ সালে নিবন্ধিত পার্থীরা তাদের সনদের বৈধতা ফিরে পেতে আরও মহামান্য হাইকোটে ১৬৬টি মামলা দাখিল করে এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ।
২০১৫ সালের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী ১৩ তম ও ১৪ তম নিবন্ধন পরীক্ষা সম্পন্ন করে এনটিআরসিএ ।কিন্তু এনটিআরসিএ পরিপত্র অনুযায়ী ১৩তমের নিয়োগ দিতে তালবাহানা শুরু করলে তারা আদালতের আশ্রয় নেয় এবং দাবী অনুযায়ী তারা রায় পায়, কিন্তু এনটিআরসিএ আপিল করে যা বর্তমান চলমান । ১৪ই ডিসেম্বর,২০১৭ সালে মহামান্য হাইকোট ৭ টি নির্দেশনা দিয়ে ১৬৬টি মামলার মিমাংশিত রায় প্রদান করে। তার ১ নং নির্দেশনা ছিল-নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ বহাল থাকবে এবং ২নং-রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০দিনের মধ্যে উত্তীর্ণদের নিয়ে জাতীয় মেধা তালিকা করতে হবে।
এনটিআরসিএ রায় অনুযায়ী জাতীয় মেধা তালিকা তৈরি করে এবং ছয় মাস মেয়াদী কম্পিউটার ডিপ্লোমা সহ সকল নিবন্ধনধারী স্থান পায়। এনটিআরসিএ গত ২৪ই জানুয়ারী,২০১৯ ইং তারিখে ২য় চক্রে ৩৯৩১৭ জন প্রার্থী সুপারিশ করে।কিন্তু এ নিয়োগে জাতীয় মেধা থেকে সুপারিশ পেয়েও যোগদান করতে পারেনি প্রভাষক “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি” ও কম্পিউটার অপারেশন এবং সহকারি শিক্ষক “ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির”সুপারিশকৃত প্রার্থীরা।কেননা ২৯ই জানুয়ারী,২০১৯ইং তারিখে এনটিআরসিএ একটি নোটিসে জানায় ‘জনবল কাঠামোও এমপিও নীতিমানা-২০১৮” অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকায় ০৬(ছয়) মাস মেয়াদী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নিবন্ধনধারীরা যোগদান করতে পারবে না।যদিও জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার-২০১৮ জারীর আগে পাশকৃতদের বাদ দেওয়ার কথা নয়।
কারন বিভিন্ন নিবন্ধন পরীক্ষার সার্কুলার ও মহামান্য হাইকোটের রায় অনুযায়ী তাদের যোগ্যতা সঠিক ছিল।উল্লেখ্য ১ম হতে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রভাষক আইসিটি ও কম্পিউটার অপারেশন পদে ৬(ছয়) মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের সু্যোগ ছিল। তাই ১৩ ও ১৪ তমদের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের নীতিমালা প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয়।অবাক করার বিষয়, ছয়মাস মেয়াদী ১৩ ও ১৪ তম প্রভাষক,আইসিটি প্রার্থীরা পাস করে নিয়োগের আগেই অযোগ্য ঘোষিত হয়েছে। এ পর্যন্ত এনটিআরসিএ সহকারী শিক্ষক,কম্পিউটার পদে,১৯০৯০টি ও প্রভাষক,আইসিটি পদে ৩৫৫৬টি এবং কম্পিউটার অপারেশন পদে ৯১৬ টি সহ মোট ২৩৫৬২টি সনদ প্রদান করে ।কিন্তু এমপিও ও নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০ (ত্রিশ) হাজারের উপরে এবং নীতিমালা অনুসারে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একজন আইসিটি শিক্ষক বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।প্রতি ক্লাসে ৫০ জনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকলে আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া বিধান রয়েছে। এ হিসাবে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা) ৪০ (চল্লিশ) হাজারের উপরে আইসিটি শিক্ষক প্রয়োজন কিন্তু এনটিআরসিএ ছয়মাস মেয়াদী সহ আইসিটি পদে সর্বমোট সনদ দিয়েছে মাত্র ২৩৫৬২টি।সেখানে কিভাবে এনটিআরসিএ ছয়মাস মেয়াদীদের বাদ দিয়ে শুধু কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রীধারীদের দিয়ে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পুরণ করবে? ছয়মাস মেয়াদীরা পিএসসি আদলে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ,জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও কেন নিয়োগ বঞ্চিত হবে? মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ তে যোগাযোগ করা হলে এক পক্ষ আর এক পক্ষের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএর সমন্বয় হীনতা এবংবার বার নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে এ সংকটের শুরু হয়েছে। ছয়মাস মেয়াদী ডিপ্লোমাদের আদালতের রায় থাকা শর্তেও নিয়োগ বঞ্চিত হচ্ছে ।
তাই আজ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার পদ শুন্য থাকা শর্তেও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীরা তাদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসসহ সব ধরনের আইসিটি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার-২০১৮ এর কারনে হাজার হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।তাই নীতিমালা সংশোধন করে ,বিষয়টি সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি
লেখক, সহকারী শিক্ষক (গণিত) বাহুবল,হবিগঞ্জ।