এখন থেকে বাংলায় রায় হবে উচ্চ আদালতের
অনলাইন ডেস্ক ||
সেই বৃটিশ আমলের আইন নিয়ে আমরা চলছি তো চলছিই। খুব প্রয়োজনে কখনো কখনো আইন পরিবর্তন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রায়গুলো লিপিবদ্ধ হয় ইংরেজী ভাষাতেই। ফলে সাধারণের কাছে এর বোধগম্যতা সহজ হয় না। এর প্রেক্ষিতে এবং সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করতে সোচ্চার হওয়ার প্রেক্ষিতে অনেকদিন থেকেই বলা হচ্ছিলো-আদালতের রায়গুলোও যেন বাংলায় পাওয়া যায়।
অবশেষে এর বাস্তবায়ন করলো উচ্চ আদালত। এখন থেকে আদালতের রায়গুলো সহজেই বাংলা ভাষা পড়তে পারবেন সাধারণ মানুষ। এই সহজীকরণটা করেছে “আমার ভাষা” সফটওয়্যার। যদিও এটা অনুবাদ সফটওয়্যার। তবে যেকোন কাজ শুরু হওয়াটাই জরুরি। কারণ শুরু হলেই অদূর ভবিষ্যতে তার গতি বাড়ে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে ভারতের সহযোগিতায় তৈরি করা ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ সংক্রান্ত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার “আমার ভাষা” এর উদ্বোধন করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারের উদ্বোধন করেন। ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমার ভাষা” সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইংরেজিতে প্রদত্ত রায়গুলো সহজেই অনুবাদ করা যাবে। এই সফটওয়্যারে বিচারপ্রার্থী এবং সাধারণ জনগণের কাছে আদালতের রায়গুলো আরও সহজবোধ্য হবে।
বিচার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায় বাংলা ভাষায় অনুবাদের এই প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এদেশের বিচারপ্রার্থী মানুষের ‘একসেস টু জাস্টিস’ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই “আমার ভাষা” সফটওয়্যারটি প্রথম পর্যায়ে কেবল উচ্চ আদালতের রায়সমূহ বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে নিম্ন আদালতের রায়ও বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রে এই সফটওয়্যার ব্যবহৃত হবে। ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরে এসে বাংলাদেশের সকল আদালতের সকল কার্যক্রম বাংলা ভাষাতেই হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিক শাষণ-শোষণের গ্যাড়াকলের সেই শেকড় কাটতে আমরা প্রতি পদে পদেই ব্যর্থ হচ্ছি বলেই বোধ করি।
আইন বিষয়ে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত বাংলা পরিভাষা ও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে উচ্চ আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার প্রচলন করার বাস্তবসম্মত অসুবিধা এখনও রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আইনবিদরা আশার আলো দেখছেন ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে।
আরো আশা জাগানিয়া খবর হলো এই যে, আগামীতে দেশের আদালতসমূহে এরকম কোন অনুবাদ সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে না। কারণ সরকার আদালতসহ রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন করে একুশের চেতনাকে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে সচেতন মহল প্রায়ই সোচ্চার হন। কিন্তু কার্যত: কোন ফল দেখা যায় না। অন্তত এই ভাষার মাসে ছোট হলেও একটি উদ্যোগের বাস্তবায়ন হলো এই “আমার ভাষা” সফটওয়্যারের ব্যবহার। এরকম উদ্যোগেই অচিরেই সর্বস্তরের বাংলা ভাষা প্রচলিত হবে…