ঈদের ছুটি: জনবল সঙ্কটে বিপাকে রোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ঈদের ছুটিতে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট জনবল সঙ্কটের কারণে; এসময় স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা মানুষরা পড়ছেন বিপাকে। বিশেষ করে জরুরিভাবে কোনো পরীক্ষা করতে এসে বেশি সমস্যায় পড়ছেন তারা।
বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাবএইড, আনোয়ার খান মডার্ণ, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে রোগী-হাসপাতাল স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
প্রতি মাসে সুগার পরীক্ষা করেন গ্রিনরোডের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। রোজার মাসে তা করা হয়নি বলে সোমবার (ঈদের দিন) সুগার টেস্টসহ আরো তিন-চারটি রক্তের পরীক্ষা করার জন্য যান ল্যাবএইড হাসপাতালে। প্রথমে কার্ডিয়াকে গেলেও সেখানে কাউন্টারে কোনো লোকের দেখা পাননি তিনি। শেষে ল্যাবএইড’র স্পেশালাইজড নামের অন্য হাসপাতালে গিয়ে কাউন্টারে লোকের দেখা পান। রিসিট কেটে স্যাম্পল দিতে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থেকেও দেখা পাননি কারও। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
ইসমাইল বলেন, সকাল নয়টার সামান্য আগে খালি পেটে এসেছি কয়েকটি রক্তের পরীক্ষা করতে। ওইপাশের হাসপাতালে কাউকে পাইনি। এখানে কাউন্টারে লোক পেলেও স্যাম্পল দিতে বসে আছি প্রায় আধঘণ্টা। কেউ নেই। তাছাড়া যে টেস্টের রিপোর্ট সকালে দিয়ে সন্ধ্যায় পাই, আজ ওরা বলেছেন দুদিন পর দেবেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাসপাতালের দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। বেশ অপেক্ষার পর কার্ডিয়াক হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ অহিদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, কার্ডিয়াকের কাউন্টার এবং স্যাম্পল কালেকশন বুথগুলো বন্ধ। তবে পাশের হাসপাতালে কাউন্টার খোলা এবং স্যাম্পলও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কাউন্টার ও বুথ বন্ধ কেন- জবাবে অহিদুজ্জামান বলেন, ঈদের কারণে বেশিরভাগ লোক ছুটিতে এবং হাসপাতালে ইলেকট্রিকের কাজ হচ্ছে, তাই বন্ধ। তবে ল্যাব খোলা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬০ জন বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, ডাক্তারের সিরিয়াল নিচ্ছিলেন এক নারী কর্মী। নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি জানান, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তেমন কোনো ডাক্তার এখানে চেম্বার করবেন না। তাহলে ভর্তি রোগীদের দেখছেন কারা? এর জবাবে তিনি বলেন, সেটা আমি বলতে পারবো না।
এই হাসপাতালেই কথা হয় এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে। স্বপন নামের ওই ব্যক্তি বলেন, আমার রোগী আইসিইউতে ভর্তি। সোমবার থেকে প্রফেসর ছুটিতে গেছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা রোগী দেখছেন। তাদের সংখ্যাও কম। আইসিইউতে যেতে পারি না সবসময়। ফোনে রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে ডাক্তাররা বিরক্ত হন, ঠিকমতো কথা বলেন না। রোগীর অবস্থা ভালো না, তাই টেনশনে আছি।
কেবল ল্যাবএইড নয়, রাজধানীর বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল ও শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিত্রও একই। ঈদের দিন এবং আজ সরেজমিন খোঁজ নিয়ে একই তথ্য জানা গেছে।
চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ হাসপাতালের বড় অংশই ঈদের ছুটিতে রয়েছেন। মেডিক্যাল অফিসার ছাড়া প্রায় সকল সিনিয়র চিকিৎসকরাও ছুটিতে। এদের অনেকে আবার ঢাকা ও দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে গেছেন। আগামী শনিবার নাগাদ সবাই কাজে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
মিরপুর পল্লবী থেকে শওকত হোসেন এই হাসপাতালে মাকে জরুরিভাবে ডাক্তার দেখাতে এনে জানলেন, সিনিয়র কোনো ডাক্তার নেই, ছুটিতে। তার মা পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা পেয়েছেন। জ্ঞান নেই মায়ের। তিনি বলেন, এখানে ডাক্তার পেলাম না। অথচ বেসরকারি হাসপাতালে অন্তত ডাক্তার পাবো, আশা করেছিলাম। কী আর করা, এখন আগারগাঁওয়ের নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যাব। জানি না, ওখানে ডাক্তার পাবো কিনা!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিউটি অফিসার বলেন, ঈদের সময় বেশিরভাগ জনবল ছুটিতে। তাই একটু সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে আমরা ভর্তি রোগী ও আগত রোগীদের সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। মেডিক্যাল অফিসাররা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
শনিবার নাগাদ সার্ভিস পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলেও জানান এই ডিউটি অফিসার।