ইবিতে নিয়োগ বোর্ডে অশোভন আচরণ, এক শিক্ষকের পদাবনতি
ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসানকে প্রভাষক পদে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড চলাকালে বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রবিবার (১৮ই ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালে বিশেষজ্ঞ সদস্যসহ নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের অন্য সদস্যের সাথে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ বখতিয়ার হাসান (বিভাগের তৎকালীন সভাপতি) অশোভন আচরণ করেন।
এ বিষয়ে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের একজন বিশেষজ্ঞ সদস্যের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায় এবং সে মর্মে রিপোর্ট প্রদান করেন। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি গত ১২ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ২৬২তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়।
সিন্ডিকেট সভা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে Islamic University employees efficiency and discipline rules-এর ৩ (সি) ধারায় সংশ্লিষ্ট ৯ এর-৪ ধারার উপধারা (ফ) অনুযায়ী সিন্ডিকেট তাঁর বর্তমান পদ (সহযোগী অধ্যাপক) অবনমন করে প্রভাষক পদে প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ২২০০০- ৫৩০৬০/ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই আদেশ সিন্ডিকেট সভার তারিখ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি হতে কার্যকর হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, নিয়োগ বোর্ডে আমার কোনো মতামত না নিয়ে নিজেদের মত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। তাই আমি বোর্ড থেকে বের হয়ে আসি। এরপর আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আমার করা রিটটি বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা দুর্নীতি তদন্তাধীন রয়েছে। কিন্তু অনিমতান্ত্রিকভাবে আমার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তাকে এই শাস্তি দিয়েছে। এই বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই।
এদিকে ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট। রোববার বিকেলে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে নওগাঁ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি। এই দাবিতে রোববার দুপুর ২টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এ কর্মসূচিতে তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটি প্রত্যাহার চেয়ে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি বোরহান উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক রাফসান জানি, সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেন সহ সংগঠনটির অন্তত ৩০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ইবি ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বোর্ডে বিশেষজ্ঞ সদস্য ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান। এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও বিভাগের তৎকালীন সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. বখতিয়ার হাসান সদস্য হিসেবে ছিলেন।
বোর্ডে প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে বিভাগীয় সভাপতি ও অন্য সদস্যদের মতানৈক্য দেখা দেয়। পরে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর না করে বেরিয়ে যান বিভাগটির সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান। পরে বোর্ডে অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হন বলে লিখিত অভিযোগ করেন বিভাগটির সভাপতি। এ ছাড়া এই ঘটনায় ড. বখতিয়ারের বিরুদ্ধে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যের সাথে অশোভন আচরণের লিখিত অভিযোগ করেন বোর্ডের এক সদস্য। পরে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিবা/জামান-১৯.০২.২০২৪