ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা: থেমে নেই নিষিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি থেমে নেই। একটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি দুটি একাডেমিক ভবন ছেড়ে দিয়েছে। উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য। সহকারী রেজিস্ট্রার সপ্তাহে এক দিন অফিস করেন। স্বাভাবিক পাঠদান বাদ দিয়ে তাঁরা অনলাইনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পরও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে জানুয়ারি মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুই থেকে তিন সিজনে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে—উইন্টার, স্প্রিং ও সামার। জানুয়ারি থেকে ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও এ বছর স্প্রিং সিজনে প্রায় সব আসনেই শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি বিভাগ থেকে জানা যায়, স্প্রিং সিজনের জন্য জানুয়ারি থেকেই ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় সব আসন পূর্ণ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিভাগে যোগাযোগ করা হলে একজন নারী কর্মকর্তা জানান, সামার সিজনে এখনো ভর্তি শুরু হয়নি। স্প্রিং সিজনে ভর্তি হওয়া যাবে। তবে জানুয়ারি থেকে এই ভর্তি শুরু হওয়ায় প্রায় সব আসন পূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো. নুরুন্নবী মোল্লা প্রথমে ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করেন। ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ফোন দেওয়া হয়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকায় সব আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারিনি। ভর্তি বিভাগকে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাকে অনেক বিষয় দেখতে হয়। তবে তাদের বিষয়টি নিয়ে আমি জানতে চাইব। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা বড় একটি ধাক্কা। আশা করি খুব দ্রুতই এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। এ সময় এমন বিতর্কিত কাজ করার কোনো মানে হয় না।’
সামার সিজনে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশা বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তির বিষয়ে খোঁজখবর নিতেই প্রতিষ্ঠান দুটির ভর্তি বিভাগ থেকে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটির খাতায় এমন অনেক ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীর নাম ও মোবাইল নম্বর দেখা যায়। প্রতিষ্ঠান দুটির ভর্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সামার সিজনের ক্লাস শুরু হবে জুলাইতে। এপ্রিল থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।
ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসার শারমিন জাহান জানান, মে মাস থেকে ভর্তি কার্যক্রম চালু হবে। ভর্তি ফিসহ মোট খরচের তথ্যও তিনি জানান। ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজস্ব ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বিষয়টি দেখিয়ে ইউজিসি থেকে সময় চেয়ে আবেদন করা হবে, আশা করি শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।’ ক্লাস কোথায় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমবিএ, বিবিএসহ সব বিভাগের ক্লাসসহ একাডেমিক কার্যক্রম অস্থায়ী ক্যাম্পাসে হবে।
জানতে চাইলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এম ওয়ালিয়ুল বারী বলেন, ‘আমাদের এখন ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ আছে। শুধু শিক্ষার্থীদের নাম ও মোবাইল নম্বর রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে এলে আমরা কী করব? আমরা শুধু কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভর্তি নিয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তিও দিইনি। যেকোনো সময় নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারব।’
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবদুল মতিন বলেন, ‘আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তখন যেন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যায়, এ কারণে তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর রাখা হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয়ে ইউজিসি দৃশ্যমান কিছু দেখতে চেয়েছে। আমাদের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে। এক মাস পর সেখানে ক্লাস করানোর উপযোগিতা দেখাতে পারব। দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় তলা নির্মাণ হবে। তবে ইউজিসির বন্ধের বিজ্ঞপ্তিতে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।’
ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার পদ শূন্য। উপাচার্য দেশের বাইরে। সহকারী রেজিস্ট্রার সপ্তাহে এক দিন অফিসে আসেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী প্রায় এক শ।
প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, ‘করোনাকালে আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। এরপর ইউজিসি নিজস্ব ক্যাম্পাসের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা দুটি ভাড়া ভবন ছেড়ে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের অনলাইনেই ক্লাস করানো হয়। কেবল ল্যাব ক্লাসগুলো সশরীরে হয়।’
ইউজিসি সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘নির্দেশনা অমান্য করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা সেই পথে যেতে চাই না। এতে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেমন বিপদে পড়বেন, তেমনি পুরনো শিক্ষার্থীরাও আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগবেন। তবে দুর্বলতাকে কেউ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দীর্ঘ ১২ বছর পরও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় এমনিতেই তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শুধু সরকার বা ইউজিসির একক প্রচেষ্টায় এসব বিষয় সমাধান করা সম্ভব নয়।
সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পরও কেন শিক্ষার্থীরা সেখানে ভর্তি হতে যাবে?’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়