ইউএনওর উদ্যোগে ঝরে পড়া রোধে স্কুলে পড়ছে অর্ধশত শিক্ষার্থী
কুড়িগ্রামঃ জেলার চিলমারীর চরাঞ্চলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের আলোর পথ দেখাতে এগিয়ে এসেছেন উপজেলা প্রশাসন। নিয়েছেন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। গড়ে তুলেছেন ভিন্ন এক স্কুল। স্থানীয়রা ও ইউএনওর প্রচেষ্টায় প্রায় চার শতাধিক পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী একটি স্কুল। বর্তমানে স্কুলটিতে অর্ধশত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
স্কুলটি সরকারীকরণের দাবি জানিয়েছে ওই এলাকার মানুষ। তারা বলেন, স্কুলটিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা সরকারীকরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।
উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের আমতলার চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে গড়ে তোলা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির নাম দেওয়া হয়েছে আমতলা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে কয়েক বছর আগে জেগে ওঠে আমতলা নামের চরটি। দীর্ঘ একটি সময় নদী ভাঙন না থাকায় স্থায়িত্ব হয়েছে। বর্তমানে চরটিতে প্রায় চার শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। চরটি স্থায়ী হওয়ায় ২০১৭ সালে একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে অস্থায়ীভাবে পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের কথা জানতে পেরে গেল বছরের শেষের দিকে আমতলার চর পরিদর্শন করেন চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান। এরপর ওই চরের একটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘরে স্থানীয়দের নিয়ে পরামর্শ করে গড়ে তোলেন ভ্রাম্যমাণ বা অস্থায়ী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে বিদ্যালটির নামকরণ করেন আমতলা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনে আমতলা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরে অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে নেওয়া হয়েছে ওই এলাকার দুজন নারী শিক্ষক। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে স্কুলটি। এ ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চলে। সামান্য পারিশ্রমিকে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন নাজমা আক্তার ও আঁখি আক্তার। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।
নামজা আক্তার জানান, সামান্য সম্মানী নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। মূলত ওই চরের শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ গড়ে তুলতে তিনি মেধা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইউএনও স্যারের উদ্যোগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমরা চেষ্টা করছি শিশুদের শিক্ষা প্রদানের। দ্রুত স্কুলটি সরকারীকরণের দাবি তার।
স্কুলের কয়েকেজন শিক্ষার্থী বলে, জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে আসছি। আগে তো স্কুল ছিল না পড়ালেখাও করিনি। আর এখন এই চরের সবাই স্কুলে আসে। প্রতিদিন সকালে আসি দুপুর পর্যন্ত ক্লাস করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কোনো শিশু যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় তাই আমরা চেষ্টা করছি এবং ওই এলাকায় বিদ্যালয় নেই তাই সেখানে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়