আলোচনায় শীর্ষ পাঁচ সিইসি
নিউজ ডেস্ক।।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এখন সার্চ কমিটি কাজ করছে। ইতিমধ্যে সার্চ কমিটির কাছে ৩০ জনের বেশি ব্যক্তির নাম জমা পড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছে অনুসন্ধান কমিটি এবং আগামী শুক্রবারের মধ্যে এই নাম সরাসরি অথবা ই-মেইলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া শনিবার এবং রবিবার অনুসন্ধান কমিটি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বসবে। যার ফলে এখন রাজনৈতির মাঠে নতুন সিইসি কে হতে পারেন এটি নিয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম মতামত দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, অনুসন্ধান কমিটির কাছে আওয়ামী লীগ নাম প্রস্তাব করবে। গতকাল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এই নাম প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আরো কিছু রাজনৈতিক দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে সিইসি নিয়ে নাম দেবে। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে যে, তারা অনুসন্ধান কমিটির কাছে কোনো নাম দেবে না। এরকম একটি বিষয়ের মধ্যে সার্চ কমিটি আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে ১০টি নাম দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সার্চ কমিটির বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে, সুশীল সমাজের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের কারা থাকবেন এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায় এবং সুশীল সমাজের আড্ডায় যে সমস্ত নামগুলো ঘুরে ফিরে আসছে তাদের মধ্যে রয়েছে,
১. আলী ইমাম মজুমদার: আলী ইমাম মজুমদার এখন পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আলোচনায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন। বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, বিগত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার কারণে তার একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং তার একটি নিরপেক্ষ ইমেজ রয়েছে। তাছাড়া ব্যক্তিত্ববান হওয়ার কারণে তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
২. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আগ্রহ রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগ আমলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন। পরে তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর এখন তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ব্যক্তি জীবনে একজন সৎ এবং চৌকস অফিসার হিসেবে তার সুনাম আছে। তবে একটি বিষয়ে অনেকে তার ব্যাপারে আপত্তি তুলতে পারে, সেটি হলো আওয়ামী লীগ আমলে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন।
৩. ইকবাল করিম ভূঁইয়া: ইকবাল করিম ভূঁইয়া সাবেক সেনাপ্রধান এবং সততা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ছিলেন। তার একটি পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে। কিন্তু সেনাপ্রধানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন যে, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য এরকম একজন ব্যক্তি প্রয়োজন।
৪. বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী: বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান বিচারপতি হিসেবে আলোচিত ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ নেই। আর এ কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হন তাহলে হয়তো তাকে নিয়ে খুব একটা বিতর্ক তৈরি হবে না।
৫. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ: একটি মহল নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ অনেকটাই আওয়ামী বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্লাটফর্মে তাকে সরব দেখা যাচ্ছে এবং এ সমস্ত স্থানে তিনি সরকারের সমালোচনা করছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ'র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তারপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগার হয়ে যান এবং পরবর্তীতে তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। সেখান থেকে দায়িত্ব শেষ করার পরে তিনি পরিবর্তিত অবস্থান নিয়েছেন। তাকে আওয়ামী লীগ চায় কিনা সেটি যেমন প্রশ্ন, আবার অন্যান্য দলের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু আছে সেটি একটি প্রশ্ন।
মোটামুটি এই পাঁচজনের নামেই নতুন সিইসি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধান কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন। তারা যে ১০ জনের নাম দেবেন তারা সেটি দেবেন তাদের নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি বিবেচনায় এবং ওই অনুসন্ধান কমিটির সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে। কাজেই তাদের বিবেচনায় এই নামগুলো থাকবে কি থাকবে না তা বলা সমীচীন হবে না। তবে জাতীয়ভাবে এই পাঁচটি নাম বিভিন্ন মহলে ঘুরে ফিরে আসছে।