আর কত ধৈর্য ধরলে শতভাগ উৎসব-ভাতা পাবেন শিক্ষকরা ?
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা আর প্রভাষকরা নবম গ্রেডে ২২ হাজার বেতন স্কেলে চাকরিতে যোগ দেন। এই শিক্ষকদের মূল বেতনের পুরোটাই সরকার দিলেও দুই ঈদে মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। ফলে চাকরিতে ঢোকার পর স্কুলে একজন শিক্ষক উৎসব ভাতা পান চার হাজার টাকা আর কলেজের শিক্ষক পান সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই সামান্য টাকায় কোনোভাবেই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। ফলে চার লাখ শিক্ষকের মনে নেই ঈদের আনন্দ। শিক্ষকদের জন্য এই ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা অত্যন্ত কষ্ট ও অনুতাপের। বর্তমান সময়ে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা উৎসব ভাতায় কিছুই হয় না। শিক্ষকদের মনের কষ্ট লাঘবে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। ’
সূত্র জানায়, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতার পেছনে সরকারের বছরে ব্যয় হয় ১২-১৩ হাজার কোটি টাকা। এখন যদি সব শিক্ষক-কর্মচারীকে শতভাগ উৎসব দিতে হয় তাহলে বছরে আরও ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে।
এ ছাড়া সরকারি বিধি অনুযায়ীই মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা এবং বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পান। তবে দুই ঈদের উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে রয়ে গেছে জটিলতা। শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ ঈদ বোনাস পান।
১৯৮০ সাল থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি শুরু করে। শুরুতে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দেওয়া হলেও ২০০৮ সাল থেকে শতভাগ বেতন দেওয়া শুরু হয়। শিক্ষকদের আন্দোলন ও দাবির মুখে ২০০৪ সালে তাত্ক্ষণিকভাবে থোক বরাদ্দ থেকে শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী অর্থবছরে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখে শতভাগ উৎসব ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু গত ১৮ বছরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে। সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে। এর সঙ্গে দুই ঈদে শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে হলে অতিরিক্ত আরো প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা লাগবে।
শতভাগ উৎসব ভাতার দাবির বিষয়ে এমপিও শিক্ষকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, উৎসব ভাতা সরকারের সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। আমি আপনাদের হয়ে দেন দরবার করবো, যা কিছু যৌক্তিক। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সরকার সবকিছু বিবেচনায় নেবে।
সূত্র জানায়, ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজধানী ও জেলা-উপজেলা সদরে বড় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বরাদ্দের বাইরে শিক্ষকদের বাড়তি কিছু ভাতা দেয়। বাকিগুলোতে সরকারি বেতন-ভাতাই ভরসা। এমনকি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়িয়ে আলাদা আয় করতে পারলেও অন্য শিক্ষকদের সে সুযোগ নেই। বেশির ভাগ শিক্ষকের সেই সুযোগ নেই।
মাউশি সূত্র বলছে, ‘শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে অতিরিক্ত এক হাজার ১০০ কোটি টাকা লাগলেও সেটি সরকারের জন্য বড় কোনো ব্যাপার নয়। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়বে, সরকারেরও ভাবমূর্তি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বর্তমান সরকার সরকারি কর্মচারীদের মতোই শিক্ষকদের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সংবেদনশীল দৃষ্টির কাছে আমরা এই শতভাগ উৎসব ভাতার দাবি এখনো নিয়ে যেতে পারেননি কর্মকর্তারা। ’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে পারলে আমরাই সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। আমাদের আন্তরিকতাও আছে। কিন্তু সরকারের সক্ষমতার ব্যাপারটিও দেখতে হবে। তারা এখন শতভাগ বেতন পাচ্ছেন। একসময় শতভাগ উৎসব ভাতাও পাবেন। ’
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘সরকার শিক্ষকদের প্রতি সব সময়ের জন্যই আন্তরিক। কিন্তু সরকারের সক্ষমতার ব্যাপারটিও বুঝতে হবে। করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সব জায়গাতেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তবে এ অবস্থা না থাকলে এত দিন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব-ভাতায় পরিবর্তন আসত। হয়তো সামনে সরকারের সক্ষমতা বাড়লে শিক্ষকরা শতভাগ উৎসব-ভাতা পাবেন। এ জন্য কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে না। সব বিষয়ই প্রধানমন্ত্রীর নজরে আছে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়