দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে: হাইকোর্ট
শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল কীটনাশক। সেসব তালগাছের কিছু ছবি দেখে হাইকোর্ট বলেছে- আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। একটা পশুরও তো মায়া থাকে! এটাকে হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নেই। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই মন্তব্য করে।
‘৫০ তালগাছে কীটনাশক, দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে গণমাধ্যমে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের পরদিন গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেয় এই আদালত। ওইদিন এই বেঞ্চ তার আদেশে রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার জন্য কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও করখণ্ড দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শাহরিয়ার আলমকে তার ব্যাখ্যা দিতে ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে তলব করে।
তাছাড়া বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করে গাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় শাহরিয়ার আলম রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে হাজির হয়ে তাল গাছের বিষয়ে তার ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে আদালত এদিন শুনানির শুরু থেকে বিকেলে কোর্ট নেমে যাওয়া পর্যন্ত শাহরিয়ার আলমকে দাঁড় করিয়ে রাখে। এদিকে বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ ঘটনায় তাদের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন ছবিসহ দাখিল করেন।
কীটনাশক দেয়া গাছগুলোর মৃতপ্রায় ছবি দেখে আদালত বলে, আপনারা হয়ত মনে করবেন যে তালগাছের মত ছোট্ট একটা বিষয়ও হাইকোর্ট দেখে? হ্যাঁ, আমাদের দেখতে হয়। কারণ, সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় জাগ্রত বিবেক। আমরা তাল গাছগুলোতে বিষ দেয়ার সংবাদ দেখে আহত হয়েছি। একটা গাছ বড় হতে ১২-১৪ বছর সময় লাগলো। আর সেই গাছগুলোতে বিষ দিয়ে দেয়া হলো! একটা পশুরও তো মায়া থাকে! বিষ দেয়া তালগাছগুলোর ছবি দেখে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। এটাকে হালকা ভাবে দেখার সুযোগ নেই। সেই লোককে হাজার সালাম জানাচ্ছি, যিনি এই গাছগুলো লাগিয়েছেন।
আদালত বলে, আইন-আদালত দিয়ে দেশের কোটি-কোটি মানুষকে ভালো করা সম্ভব না, যদি না আমরা নিজেরাই মানবিক ও সচেতন না হই। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আদেশে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধিকে তালগাছের সংবাদ সংক্রান্ত কথোপকথনের রেকর্ডসহ হাইকোর্টে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়। আর এবিষয়ে করা জিডি’র পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা ওইদিন হাইকোর্টে হাজির হয়ে জানাতে বাগমারা থানার ওসি’র প্রতি নির্দেশ দেয়। আদেশে শাহরিয়ার আলমকে ২৩ ফেব্রুয়ারি আবার হাইকোর্টে হাজির থাকতে বলা হয়। আর এসংক্রান্ত সংবাদটির সত্যতা নিশ্চিতের হলফনামা আদালতে দাখিলের জন্য সময় দিয়ে পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে উচ্চ আদালত।
আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো: জাহিদুল হক জাহিদ, প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার। আর রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।
প্রসঙ্গত গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ লাগিয়েছিলেন। সেসব তালগাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তালবীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি। ফলে বোঝা যায়, কী নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তালগাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো মারতে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
এই বিভাগের আরও খবর