আমাদের কিছু ধারণাই বদলে দিবে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা
"আসলে আমাদের কারোরই দোষ না, এটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি।’’ আমাদের চারপাশ থেকে এই কথাটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি কিংবা না জানি, পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হোক, পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হোক, ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স না পেলে কিংবা শিক্ষার সাথে জড়িত যেকোনো বিষয়ে আমরা নিজেরা ব্যর্থ হলেই আমরা প্রায়ই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দোষারোপ করতে থাকি, যদিও আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক ততটাও মন্দ নয়, যতটা আমরা আমাদের ধারনায় বানিয়ে ফেলেছি। তাই আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই মৌলিক চিন্তা ধারনায় যদি একটু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি তাহলেই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের কাছে অনেকটা প্রিয় হয়ে উঠবে।
আমাদের সকলের কাছে একটা ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর একদম পরিষ্কার থাকতে হবে, প্রশ্নটি হলো- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য কি?
অনেকেই মনে করেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য মহারত্ন জিপিএ ৫ কিংবা A+ ঝুলিতে রাখলেই সে সুশিক্ষিত। আবার অনেকে এই বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করে দাবি জানান যে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কখনোই মহারত্ন জিপিএ ৫ কিংবা A+ পাওয়া নয়, বরং একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা। কিন্তু আদর্শ মানুষ বলতে কী বোঝায়? সেটা আমি, আপনি জানলেও একজন ক্লাস ওয়ানে পড়া বাচ্চা কিভাবে জানবে?
তাই আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য হলো একজন সচেতন , মানবিক এবং কর্মঠ ব্যক্তি হিসেবে দেশের সকল মানুষকে তৈরি করা।
এখন অনেকে আপত্তি করে বলতেই পারে- ক্লাস ওয়ানে পড়া সেই বাচ্চাটি সচেতন, মানবিক ও কর্মঠ ব্যক্তি কী? সে সেটি বুঝবে কী করে? তখন আমি বিজয়ীর সুরে তাদের জানাবো যে, যখন বাচ্চাটি তার গনিত, ইংরেজী কিংবা বাংলা বইটি পড়বে তখন সে অবশ্যই এই বিশেষ গুণগুলি অর্জন করতে শিখবে। শুধু প্রয়োজন তাকে বইয়ের বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানানো। যেটা আমাদের কখনোই শেখানো হয় না। উদাহরণ হিসেবে আমি বলবো-পাঠ্য বইয়ে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ের কথা। পরীক্ষায় যদি প্রশ্ন আসে, আমাদের চারপাশের পরিবেশকে কীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়? তাহলে উত্তরে একদম প্রথমে আমরা লিখি, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না, আর এর জন্য পরীক্ষায় ভালো মার্কসও পেয়ে থাকি কিন্তু আসলেও কী বাস্তবে আমরা এটি করি? উত্তর আসবে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস বলে-আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যবই, এই বিষয়ের মাধ্যমেই পরিবেশের প্রতি সচেতন করে তুলতে চায়।
কিন্তু আমরা কি আদৌ সচেতন হই? বিদেশ থেকে ঘুরে এসে বলি কত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ আর আমাদের দেশের কী অবস্থা! যদিও দেশের এই অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। আমাদের কিছু নেতিবাচক ধারনার কারনেই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযুগী করতে পারছি না। এজন্য প্রয়োজন আমাদের সকলের সচেতনতা ও গভীর আন্তরিকতা।
এরপর আসি মানবিক হওয়ার শর্তে- আমাদের বাংলা বই কিংবা ইংরেজী বইয়ের এত দারুণ সব গল্প, কবিতা হয়তো শুধু পরীক্ষায় ১০০তে ১০০ পাওয়ার জন্য রচিত হয়নি। আমি বিশ্বাস করি পাঠ্য বইয়ের এই কালজয়ী গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রচনা সবকিছুই আমাদের মানবিক হতে সাহায্য করে। যা কিনা আমরা বুঝতেই পারি না। শুধু দোষারোপ করে চলি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে।
আর বাকী থাকে কর্মঠ বিষয়টি। আমার মনে হয়, গনিত বিষয়টি আমাদের কর্মঠ হতে সুন্দরভাবে সাহায্য করে থাকে। কীভাবে? একটু যদি চিন্তা করি তাহলে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে সত্যি। একটা অংক একবার করে না মিললে আমরা বারবার চেষ্টা করি, যেখানে রবার্ট ব্রুসও আমাদের কাছে চেষ্টায় হার মানে। এভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের ধৈর্য্য ও কাজের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আমরা আমাদের অজান্তেই কর্মঠ মানুষ হয়ে গড়ে উঠি।
তাই আমরা যদি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে একটু চিন্তা করি, তাহলে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবেই হবে।
নাম: অনন্যা সাহা
শ্রেণি: দশম, বিজ্ঞান বিভাগ
আট্টাকা কে, আলী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ফকিরহাট, বাগেরহাট।