আগের ছাপানো প্রশ্নেই এইচএসসি পরীক্ষা
নিউজ ডেস্ক।।
প্রায় এক বছর আগে ছাপানো প্রশ্নপত্রেই নেয়া হবে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা। আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এই পরীক্ষা। এতে অংশ নিচ্ছে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী। তবে আগের ছাপানো প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হলেও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে মৌখিক নির্দেশনায়। কেননা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার যে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে তা ১০০ নম্বরের প্রশ্ন এবং এসব প্রশ্ন উত্তর দিতে নির্ধারিত সময়ও তিন ঘণ্টা। যেহেতু সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের উপর এবারের এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে সেকারণে প্রশ্নের মান (নম্বর) ও সময়ও কমানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নে নম্বর ও সময় নিয়ে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, উত্তর দিতে হবে কক্ষ পর্যবেক্ষকদের মৌখিক নির্দেশনায়।
প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় এইসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে পরীক্ষা প্রায় সাত মাস পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও যত বছর এই পরীক্ষা নেয়াই সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছিল অটোপাস। চলতি বছরও এই পরীক্ষা এপ্রিলে নেয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। তাই চলতি বছরের এই পরীক্ষা গত বছরের নভেম্বর/ ডিসেম্বর মাসে ছাপানো প্রশ্নেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ দিকে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগের ছাপানো প্রশ্নে। এতে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলেও হল পরিদর্শক বা কক্ষ পর্যবেক্ষকদের মৌখিক নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের উত্তর দিচ্ছে। এসএসসির প্রশ্নেও মান ও নম্বর বণ্টনও আগের নিয়মেই করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা যেহেতু অর্ধেক সময়ে (দেড় ঘণ্টায়) নেয়া হচ্ছে সে ক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে অর্ধেক সংখ্যার প্রশ্নের।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, আগের ছাপানো প্রশ্নে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হলেও উত্তর দিতে হবে কক্ষ পর্যবেক্ষকদের মৌখিক নির্দেশনায়। সূত্র আরা জানায়, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ ২৫টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে ১২টির। সময় ১৫ মিনিট। তত্ত্বীয় পরীক্ষায় ৮টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে মাত্র দু’টি প্রশ্নের। উত্তর দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
একইভাবে মানবিক ও ব্যবসা শাখার জন্য ৩০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে ১৫টির। সময় দেয়া হবে ১৫ মিনিট। তত্ত্বীয় পরীক্ষায় ১১টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে তিনটি প্রশ্নের। সময় এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট। পরীক্ষা শুরুর আগে কক্ষ পর্যবেক্ষকগণ উচ্চ স্বরে প্রতিটি কক্ষে বিষয়টি পরীক্ষার্থীদের অবহিত করবেন। আগের ছাপানো প্রশ্নের পূর্ণমান ছিল ১০০ নম্বর এবং সময়ও নির্ধারিত ছিল তিন ঘণ্টা। কিন্তু এখন নতুন সিদ্ধান্তে অর্ধেক নম্বরে এবং অর্ধেক সময়ে এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয় গতকাল বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নিজেও সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, প্রশ্নপত্রে যা-ই লেখা থাকুক না কেন পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে কক্ষ পর্যবেক্ষকদের মৌখিক নির্দেশনায়। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে তাই নতুন করে পুরনায় প্রশ্নপত্র ছাগানোর সুযোগ নেই। এই অবস্থায় নতুন সিলেবাসের আলোকে এবং অর্ধেক নম্বরের বা অর্ধেক সময়ের প্রশ্ন নির্ধারণ করেই উত্তর দেবে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও এইচএসসি ভোকেশনাল ও বিএম পরীক্ষায় সারা দেশের ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ছাত্র সাত লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ জন ও ছাত্রী ছয় লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন। দুই হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
সূত্র আরো জানায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। চার হাজার ৬৫৮টি প্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী এক হাজার ৫১৫টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এদের মধ্যে ছাত্র পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ১১৩ জন ও ছাত্রী পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৪ জন। অন্য দিকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য আলিম পরীক্ষায় এক লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেরে অধীনে এইচএসসি বিএম ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় এক লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন।
৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নকলমুক্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশে আয়োজনের লক্ষ্যে আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠ ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য ২৫ নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।