অর্থনৈতিক সঙ্কটে বেসামাল মানুষ ছাড়ছে শহর
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। বাড়ছে বাড়িভাড়া, যাতায়াত ভাড়া ইত্যাদি। অপর দিকে কমছে আয়। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই শহর ছাড়ছেন। বিশেষ করে যাদের আয় বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই, তাদের অনেকেই এখন গ্রামমুখী। অনেক পরিবার আছে যারা কেবল উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে ঢাকায় রেখে বাকিরা গ্রামে চলে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই এভাবে দুই-চারটি পরিবার চোখে পড়ছে যারা শহর ছেড়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবার আছে যারা কম ভাড়ায় ঢাকার আশপাশের গ্রামগুলোর কোনো বাড়িতে উঠছে।
রাজধানীর ডেমরার পাইটি গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা খাতুন জানান, কয়েক মাস আগেও তারা রাজধানীর মুগদায় থাকতেন বেশি ভাড়ার বাসায়। এখন আর সম্ভব নয়। চাকরি হারানো, কম বেতনে চাকরি করা ইত্যাদির পরে জমানো টাকাও শেষ হয়ে যায়। আশা ছিল মহামারী করোনা পরবর্তীকালে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তাদের জন্য কোনো কিছুই স্বাভাবিক হয়নি। শেষমেশ বাধ্য হয়েছেন শহরের বাসা থেকে গ্রামে গিয়ে থাকতে। তিনি বলেন, এভাবে অনেক পরিবার আছে যারা শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা মোশাররফ জানান, তিনি পল্টনের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রতিষ্ঠানটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপরই চাকরি হারান মোশাররফ ও তার এক সহকর্মী। এরপর আশায় ছিলেন নতুন কোনো চাকরি খুঁজে পাবেন। কিন্তু কয়েক মাস হয়ে গেলো কোনো চাকরির সন্ধান নেই। যেখানেই যাচ্ছেন, উল্টো ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছে তাদের ছাঁটাই চলছে। চাকরি না পেয়ে তার আর ঢাকায় থাকা হচ্ছে না। হয়তো এই মাসেই ২৫ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে এই শহর ছাড়তে হবে তার। মোশাররফ বলেন, গ্রামে গেলে অন্তত বাসা ভাড়াটা তো বাঁচবে। তিনি বলেন, যেকোনো এক কেজি সবজি এখন ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামে অন্তত এই সবজি কিনে খেতে হবে না।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শামীম বলেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটে এখন দিশেহারা। যা উপার্জন তা দিয়ে কোনোভাবেই ঢাকায় থাকা সম্ভব নয়। খাওয়া-দাওয়া প্রায় অর্ধেক করে ফেলেছেন। আগে যেখানে এক কেজি কিনতেন, একই জিনিস এখন কিনছেন আধা কেজি। তিনি বলেন, এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি। টয়লেট টিস্যু থেকে শুরু করে সব জিনিসেরই দাম বেড়েছে। কিন্তু উপার্জন তো বাড়েনি।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ফুটপাতে যারা ব্যবসা করেন তারা দিশেহারা। কোনোভাবে টিকে আছেন। পরিবার-পরিজন গ্রামে রেখে এখানে ব্যবসা করছেন দু’বেলা খাওয়ার জন্য। কিন্তু তাতেও ভাগ বসাচ্ছে চাঁদাবাজরা।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মো: বাহারানে সুলতান বাহার গতকাল বলেন, মানুষের উপার্জন ও খরচ মিলে বেসামাল অবস্থা। যা উপার্জন করছে তা দিয়ে ঢাকায় টিকে থাকা যাচ্ছে না। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি অনেকেরই নেই। যে কারণে মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর অনেক বাড়ি একের পর এক খালি হচ্ছে যাচ্ছে। নতুন ভাড়াটে পাচ্ছে না বাড়িওয়ালারা। বাহার বলেন, এই অবস্থায় একজন সংগঠক হিসেবে বলতে পারি, ‘রাষ্ট্র যদি দেখে আমাদের।’ এর বাইরে কিছুই বলার নেই।