অবসরে ঘুরে আসি চট্টগ্রামের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান
।৷ ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন।।
ঘুরতে কে না ভালোবাসে ! ছুটির দিনগুলোতে পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াতে যাবার কথা ভাবছেন ? যারা দুই তিন দিনের জন্য চট্রগ্রামে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা খুঁজছেন, তাঁরা জেনে নিন চট্রগ্রামে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গার নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য ।
ফয়েজ লেক : ফয়েজ লেক চট্টগ্রামের পাহাড়তলি রেলস্টেশনের অদূরে খুলশী এলাকায় অবস্থিত একটি মানবসৃষ্ট হ্রদ। বা কৃত্রিম হ্রদ। বাঁধটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকের পাহাড় শ্রেণী থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লেক সৃষ্টি করেছে। ভূতাত্বিকভাবে এইসব পাহাড় শ্রেণী দুপিটিলা স্তর সমষ্টির শিলা দ্বারা গঠিত। ফয়েজ লেক একটি চমৎকার বনভোজন ও বিনোদনের জায়গা যা হাজারো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। লেকটি ১৯২৪ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানির তত্বাবধায়নে খনন করা হয়।
এই লেকটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল রেল কলোনিতে বসবাসকারী লোকদের কাছে পানি পৌঁছানো। সেসময় এটি পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে লেকটিকে ব্রিটিশ রেল প্রকৌশলী ফয়েজ এর নামে নামকরণ করা হয় যিনি এর নকশা তৈরিতে সহায়তা করেন। ৩৩৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই লেকটি পাহাড়ের এক শীর্ষ থেকে আরেক শীর্ষের মধ্যবর্তী একটি সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্ট। বাঁধটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকের পাহাড় শ্রেণী থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লেক সৃষ্টি করেছে। ভূতাত্বিকভাবে এইসব পাহাড় শ্রেণী দুপিটিলা স্তর সমষ্টির শিলা দ্বারা গঠিত।
এই লেকে দেখার মতো রয়েছে অনেক কিছু। শিশুদের জন্য যেমন নানা রকম রাইডের ব্যবস্থা আছে তেমনি বড়রাও খুজেঁ পাবেন লেক, পাহাড় সব মিলে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। অঞ্চলের চারদিকে পাহাড় আর মাঝখানে রয়েছে অরুনাময়ী, গোধূলী, আকাশমনি, মন্দাকিনী, দক্ষিনী, অলকানন্দা নামের হৃদ। হ্রদের পাড়ে যেতেই দেখা মিলবে সারি সারি নৌকা। নৌকায় যেতে মিনিট দশেক লাগবে। তার পরই দেখা মিলবে চমৎকার রিসোর্ট; দুই দিকে সবুজ পাহাড়, মাঝে মধ্যে দু-একটি বক এবং নাম না জানা হরেক রকম পাখি। এর সাথে রয়েছে মনোরম পরিবেশে হরিণ বিচরণ স্থান ফয়েজ লেকের মূল আকর্ষণ নিঃসন্দেহে লেকের সৌন্দর্য ও তার পার্শ্ববর্তী পাহাড়। বহুদিন আমিও এই লেকে আসিনি। ছাত্রজীবনে প্রায়ই দলবেঁধে ঘুরতে যেতাম। এখন সেই সুবিধা নেই। প্রবেশ পথে দিতে হয় টাকা। হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক।
মেহেরপুর-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন চট্টগ্রাম আসেন ব্যক্তিগত সফরে পরিবারসহ। তাঁকে চট্টগ্রাম শহর দেখানোর সুযোগে বহুদিন পর আবারও সেই চিরচেনা ফয়েজলেক ভ্রমনে বের হই। বর্তমানে হ্রদটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড একটি চিত্তবিনোদন পার্ক স্থাপন করেছে যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য লেকে নৌকা ভ্রমন, ল্যান্ডস্কেপিং, রেস্তোরা, ট্র্যাকিং এবং কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। দর্শনার্থীরা হ্রদটির নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগের জন্য নৌকাভ্রমণে যেতে পারেন। এজন্য বিভিন্ন আকারের ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিড বোট আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পানও আছে লেকে। চিত্তবিনোদন পার্কে রয়েছে উ”চ গতির রোলার কোস্টার ও বাম্পার বোট। এখানে একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র আছে যেখানে বিভিন্ন বয়সী ও রুচির মানুষের জন্য কিছু না কিছুর ব্যবস্থা আছে। মানুষ ফয়স লেকে মজা ও উত্তেজনার পাশাপাশি প্রশান্তি অনুভব করতে পারে।
‘সি ওয়ার্ল্ড’ হচ্ছে ফয়স লেকের একটি ওয়াটার থিম পার্ক। স্প্লাশ পুল, ওয়াটার কোস্টার রাইড এবং আধুনিক ওয়াটার পার্কের বিভিন্ন রাইড আছে সি ওয়ার্ল্ডে। শহরের সিটি গেট সংলগ্ন সড়ক দিয়ে গেলে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে সি ওয়ার্ল্ডে। তবে মূল প্রবেশ পথে সি-ওয়ার্ল্ডে গেলে নৌকায় চড়ে পৌঁছুতে হয় সি ওয়ার্ল্ডে। ফয়েজ লেকের পাশেই অবস্থিত চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা। এছাড়াও দর্শনার্থীরা কটেজ ভাড়া করে থাকতে পারেন। ফয়স লেকের আশেপাশের মনোরম পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রতি বছর দেশি বিদেশি বহু পর্যটক ছুটে আসেন। আমরাও গিয়েছিলাম সেটি দেখার জন্য।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত : চট্টগ্রাম শহরে বসবাসকারী মানুষের শ্বাস নেয়ার একটি বিশেষ ¯’ান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে একটি হলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অব¯ি’ত পতেঙ্গা সৈকত। ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া কর্ণফুলী নদী, রাঙামাটি এবং চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতের কাছে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। নগরবাসী তাদের একঘেয়ে জীবনে থেকে মুক্তি নিয়ে এখানে বঙ্গোপসাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ সৈকতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে সমুদ্র সৈকতজুড়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে কংক্রিটের দেয়াল এবং বড় বড় পাথর রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সৈকতে ওয়াকওয়ে, সুন্দর ও সুপরিসর আসন, খেলার মাঠ, সাগরে সাঁতারের পর গোসলের ব্যবস্থা, আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা,, কার পার্কিং এবং জাহাজে নিরাপদে ওঠানামার জন্য জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান।
সপ্তাহের প্রতিদিন বিকেল বেলায় ও ছুটির দিনে পতেঙ্গা সৈকতে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। সূর্যোদয় দেখার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠেই সৈকতে চলে আসতে হবে। বিকেলের দিকে মন চাইলে পানিতে নেমে আনন্দের মাত্রা আরও বাড়ানো যায়। তবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ’ খুব বেশি নয় এবং এখানে সমুদ্রে সাঁতার কাটা ঝুঁকিপূর্ণ। স্পীড-বোটে চড়ে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সী-বাইক এবং ঘোড়া পাওয়া যায়। এজন্য অবশ্য ঘণ্টাপ্রতি নির্দিষ্ট হারে ভাড়া গুনতে হয়। সমুদ্রে জাহাজের চলাচল কিংবা মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানও দেখা যাবে। সাধারণত বিকেল গড়াতে থাকলে জোয়ার আসতে শুরু করে। জোয়ার শুরুর আগে বাঁধ অনেকটা তলিয়ে যায়। তীরে এসে পড়ে ঢেউ। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোরম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জোরদার করায় পর্যটকেরা নিশ্চিন্তে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারেন। খাবারের দোকানের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হল মসলা দিয়ে ভাজা কাঁকড়া যা শসা ও পেঁযাজ দিয়ে সাজানো এক প্লেট ছোলার সাথে পরিবেশিত হয়। সৈকতে একটি বার্মিজ মার্কেটও গড়ে উঠেছে। সেখানেও ঘুরে ফিরে পছন্দের কেনাকাটা সেরে নেয়া যায়।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি বিএনএস ঈসা খান এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক জেটি পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত । পতেঙ্গাতে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিও অবস্থিত । শাহ আমানত বিমানবন্দরগামী রাস্তার মুখে একটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে। পার্কটিতে ৭০ প্রজাতির প্রায় ১০০০ এর বেশি প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতি দেখতে চাইলে সকাল সকাল যাওয়াই ভাল হবে। কেননা বিকেলের পর থেকে এরা ঝোপের আড়ালে চলে যাবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসলে একইসাথে এসব স্পট ঘুরে দেখা সম্ভব। সবমিলিয়ে একটি বিকেল অনায়াসেই কাটানোর জন্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠতে পারে অনেকের পছন্দের স্থান। তবে পরিবেশ, নিরাপত্তার দিকটি আরো আন্তরিকতার সাথে দেখার অনুরোধ থাকবে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় অব¯ি’ত একটি বন্য প্রাণীর অভযারণ্য। চন্দ্রনাথ পাহাডের পাদদেশে ১৯৯৮ সালে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠিত হয। ৮০৮.০০ হেক্টর জমি নিয়ে এই বন্যপ্রাণ অভযারণ্যটি গঠিত। ১৯৯৬ একরের পার্কটি দুই অংশে বিভক্ত। ১,০০০ একর জাযগায় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ৯৯৬ একরজাযগা জুডছে ইকোপার্ক এলাকা। জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অভযারণ্য এবং পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা পার্কটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছপালা, হাজারো রকমের নজরকাড়া ফুলের গাছ, কৃত্রিম লেক ও নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা সহ ঝিরিপথের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা, পিকনিক স্পট, বিশ্রামের ছাউনি।
ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশের প্রথম এবং এশিযা মহাদেশের বৃহত্তম এ ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনটির অবস্থান। মূল ফটক পেরিয়ে একটু এগোলেই রয়েছে জাতীয কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ। কবি এসেছিলেন এ জনপদে। এরই বিস্তারিত লেখা আছে স্তম্ভটির পাশে সাঁটানো সাইনবোর্ডে। এর কিছুদূর এগোলে ম্যাপে পার্কটির দর্শনীয ¯’ান নির্দেশিত রয়েছে। সেখানে নির্দেশিত পথ ধরে দেড কিলোমিটার এগোলে সুপ্তধারা ঝর্ণার সাইন বোর্ড ‘সুপ্তধারা ঘুমিয়ে পড়ি জেগে উঠি ---’। এরপর প্রায এক কিলোমিটার পাহাড়ি ট্রেইল পেরিয়ে দেখা পাবেন অনিন্দ্যসুন্দর ঝর্ণা ‘সুপ্তধারা’র। আবার এক কিলোমিটার পর্যন্ত গেলে চোখে পডবে সহস্রধারা ঝর্ণার সাইন বোর্ড। এই এক কিলোমিটার পথে রয়েছে পিকনিক স্পট, ওযাচ টাওযার, হিম চত্বর। সেখানে সেট করা চেযারে বসে দূর সমুদ্রের রূপ চোখে পডবে।
সহস্রধারা ঝর্ণা দেখে এসে বোটানিকাল গার্ডেনের উত্তরে গেলে চোখে পড়বে পাহাড় আর পাহাড়। সহস্র ধারা ও সুপ্তধারা ঝর্ণা থেকে বহমান জলকে কৃত্রিম বাঁধ তৈরির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম লেক। এ পার্কটির মূল আকর্ষণ চন্দ্রনাথ মন্দির। টিকেট কাউন্টার থেকে মন্দির পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের পথ পায়ে হেঁটে অথবা গাড়ি ভাডা করে যাওযা যায। মন্দিরের নিচে থেকে পাহাড়ি পথে খাডা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে দেখা মিলবে মন্দিরের। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজায় মগ্ন থাকেন এখানে।
ফাল্গুনে শিবসংক্রান্তি পূজার সময দেশ বিদেশের বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের কীর্তনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো চন্দ্রনাথ । একই সাথে পাহাড়, ঝর্না আর হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক এটি। আয়তনের দিক থেকে প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই কৃত্রিম হ্রদটি। মিরসরাই উপজেলার ৮ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয় এই হ্রদটি। এটি মুলত একটি সেচ প্রকল্প। চারদিকে ছোট ছোট পাহাড় ঘেরাও এই হ্রদটির স্ব”ছ জল আর বৃক্ষের সবুজ খুবই চমৎকার দেখতে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একেবেকে চলে গেছে হ্রদটি। এখানে দেখতে পাবেন পাহাড়ি গুহা ও রাবার ড্যাম। আছে দারুণ ঝর্না।
মহামায়া লেক : একই সাথে পাহাড়, ঝর্না আর হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক।আপনি এই জাযগাটির আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক ঝর্ণায সতেজ হতে পারেন। মহামাযা হ্রদে খুব উত্তেজনাপূর্ণ কাযাকিং এবং সারা রাত থাকার জন্য একটি তাঁবু তৈরির সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নযন বোর্ডের নির্দেশে, মোহামাযা হ্রদের পানির একটি অংশ কাছাকাছি এলাকার সেচের জন্য ব্যবহার করা হয। অনেকের ধারণা নেই কত সুন্দর প্রাকৃতিক রূপে সেজে আছে চট্রগ্রামের মিরসরাই এর মহামায়া লেক। মহামাযা লেক বাংলাদেশের দ্বিতীয বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ। এর আযতন প্রায ১১ বর্গ কিলোমিটার। মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা ১১ বর্গ কিলোমিটারের কৃত্রিম লেক নিয়ে গঠিত মহামায়া লেক।
আপনি যদি এই যায়গায় না যান তবে মনে করবেন আপনার চট্রগ্রাম সফরটাই বৃথা! মহামায়া লেক একটি প্রাকৃতিক লেক বিশাল এলাকা জুড়ে পাহাড়ি লেকের পানি দিয়ে এই এলাকা গঠিত। এখানে রয়েছে অসাধারণ পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম এবং ঝর্ণা। আপনি বোটে করে লেক পার হয়ে দূর পাহাড়ে অব¯ি’ত ঝর্ণার শীতল পানির ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারেন। মহামায়া লেকের ঝর্ণার পানিতে গোসল করার অনুভূতি অসাধারণ। এই প্রকল্প বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে, এটি লেকের পানি থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার সেঁচের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে জল বিদ্যুৎ প্রকল্প করার জন্য এই প্রোজেক্ট হাত নিয়েছে।
নীলাভ জলরাশিতে ডিঙি নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে পানির কলকল ধ্বনিতে মুখরিত মহামাযা লেকে নৌভ্রমণ অন্যরকম আনন্দদাযক। মহামাযা লেকের চারপাশে পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা আপনাকে বিমুগ্ধ করবে। গৌধূলিলগ্নে সূর্য যখন অন্তিম নীলিমায ডুবে যায, তখনকার লেকের পরিবেশ খুবই চমৎকার। পিকনিকের জন্য মহামাযা দারুণ একটি জাযগা। এখানে এসে আপনি রান্নাবান্না করেও খেতে পারেন। তা ছাডা অনেকেই লেকের কোলে অব¯ি’ত বিস্তীর্ণ ভূমিতে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠে।
লেখক : শিক্ষাবিদ-নজরুল গবেষক।