অন্য রকম শিক্ষাবর্ষ-২০২০
অনলাইন ডেস্ক ঃ
আনুষ্ঠানিক ক্লাস নেই, পরীক্ষা নেই এমনই অন্যরকম এক শিক্ষাবর্ষ পার করল দেশের শিক্ষার্থীরা। কিছু পর্যায়ে দূরশিক্ষণ ও অনলাইনে ক্লাস হলেও তা কতটা কার্যকর হয়েছে, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। করোনাকালে বছরের শেষ দিকে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা করা হলেও তা পারা যায়নি। নিয়মিত পাবলিক পরীক্ষাগুলোও নেওয়া যায়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। দেশের উপজেলা পর্যায়ে স্কুল-কলেজের দাপ্তরিক কার্যক্রম ছিল গতিহীন। সব মিলে শিক্ষায় পার হচ্ছে একটি অলস বছর। এ অবস্থায় আটকে থাকা কিছু পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি ও ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আশা দেখিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
করোনার ধাক্কায় তছনছ হয়ে পড়া শিক্ষা খাত নিয়ে সরকার-শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন বছরের অধিকাংশ সময়। গত ৯ মাস ধরে বন্ধ আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে সাড়ে ৩ কোটি ছাত্রছাত্রী বঞ্চিত আনুষ্ঠানিক শ্রেণি কার্যক্রম থেকে। ফলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ক্ষতিপূরণে তাদের আগের শ্রেণির পাঠ টেনে নিতে হচ্ছে পরের শ্রেণিতে। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়ছেন দীর্ঘ সেশনজটে। পিছিয়ে গেছে বিভিন্ন পরীক্ষা। প্রশাসনিক কার্যক্রমেও তৈরি হয়েছে ধীরগতি। এরই মধ্যে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। বছরের শেষ দিকে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য দিন তারিখ দিয়েছেন। এছাড়া ক্লাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গুচ্ছ পাঠচক্র তৈরির কথাও বলেছেন।
ভিন্ন রকম এ শিক্ষাবর্ষ নিয়ে শিক্ষা বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘করোনাকালে শিক্ষা খাতে যে সমস্যা ও সংকট তৈরি হয়েছে তা কাটানো খুবই কঠিন হবে। এ সমস্যার সর্বপ্রথম প্রভাব পড়বে ঝরে পড়ার হারে। এটি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। এর প্রভাব হিসেবে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ইত্যাদিও বাড়বে।’
আলোচ্য বছরে শিক্ষা খাতে অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতির পিতাকে নিয়ে কোমলমতি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি। এটি জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চে পৌনে ২ কোটি শিক্ষার্থীর পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় সেই কর্মসূচি স্থগিত করতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি আর এমপিওবিহীন শিক্ষকদের করোনাকালীন আর্থিক সহায়তার কাজটি করে প্রশংসা কুড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসএসসির ফল প্রকাশ, উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি, ভর্তির নীতিমালা তৈরিসহ কিছু কিছু পরীক্ষার রুটিন হয়েছে। চলছে নতুন কারিকুলাম তৈরির কাজ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আওতায়ও অনেকটাই আনা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস করার ডিভাইস বা মোবাইল ফোন প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট ডাটা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রেড সমস্যার সমাধানসহ শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত কয়েকটি সমস্যা সমাধান করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও প্রশংসা কুড়িয়েছে।
কিন্তু শিক্ষাভবনকেন্দ্রিক বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা এবং ভোগান্তির ঘটনায় ক্ষুব্ধ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। নীতিমালা তৈরির নামে ঝুলে আছে সাধারণ (শিক্ষক) কর্মকর্তাদের বদলি কার্যক্রম। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনে বই কেনা কার্যক্রমে উদ্ভূত বিতর্ক এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের অনুমোদনহীন সনদের বৈধতা দেওয়ার বিষয়টিও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে।
বিদায়ী বছরেও বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকরা রাজপথে ছিলেন। বিশেষ করে এবতেদায়ি শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করেন। করোনার কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধের পথে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আর খোলা সম্ভব না-ও হতে পারে।
তবে করোনাকালে শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে দুই মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ যথাযথ পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে ছুটি শুরু হয় শিক্ষাঙ্গনে। এর কিছুদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম চালু করে। এটি অনুসরণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে উভয় মন্ত্রণালয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে যা দেশের ইতিহাসে প্রথম।
শেষ পর্যন্ত শিক্ষায় ৩০ দিনের কর্মসূচি নিয়ে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম চালু রাখা হয়। আর প্রাথমিকে শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবার কোথাও অনলাইনে পাঠদান প্রক্রিয়া চালু রেখেছেন। যদিও উভয় স্তরে পরীক্ষা ছাড়া স্বয়ংক্রিয় পাস পেয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাবার্তা/ বিআ