অনিশ্চয়তায় ৫৮ ছাত্রীর শিক্ষাজীবন
নিউজ ডেস্ক।।
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫৮ ছাত্রীর শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না শ্রেণিকক্ষে। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ফি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১৩ জন, ৭ম শ্রেণির ১৮ জন, ৮ম শ্রেণির ১৬ জন এবং ৯ম শ্রেণির ১১ জন ছাত্রী রয়েছে। ৫৮ ছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার দায় কে নেবে, এমন প্রশ্ন এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
বুধবার (১ জুন) দুপুরে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কের উপর দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এসময় পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ শিক্ষাজীবন নিশ্চিতের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিভাবক মো. শহীদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘৫৮ শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ তাদের ভর্তি অবৈধ উল্লেখ করে স্কুলে আসতে ও অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় অংশ নিতে বাঁধা দেয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, ওই সব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বছরের অর্ধেক সময় অতিবাহিত হবার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
শিক্ষার্থী সায়েরা হাসিনা ও জাফরিন সুলতানা বলেন, ‘বছরের মাঝখানে এসে আমাদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এতদিন আমরা এই স্কুলে লেখাপড়া করেছি। এখন আমরা স্কুলে যেতে পারছি না। এখন তো আমরা অন্য স্কুলেও ভর্তি হতে পারব না। আমাদের অপরাধ কি? আমাদের লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে।’
অভিভাবক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত ৫ এপ্রিল শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়রা আক্তার আকস্মিকভাবে বদলী হয়ে যান। তিনি ৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি অনুমোদন করেন। তিনি চলে যাওয়ার পর শাহানাজ রেজা এ্যানি নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর ওই ৫৮ শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত ছাত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’
অভিভাবক আরিফা পারভিন বলেন, ‘আগামী ২ জুন থেকে বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয়েছে। সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি গ্রহণ করা হলেও ওই ৫৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার ফি গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, সাবেক অধ্যক্ষ ৫৮ শিক্ষার্থীর নাম ভর্তি রেজিস্ট্রারে তুলে না যাওয়ায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা তাদের পরীক্ষার ফি গ্রহণ করছি না।’
এ ব্যাপারে জানতে বর্তমান অধ্যক্ষ শাহানাজ রেজা এ্যানির মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়রা আক্তার বলেন, ‘যে ৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে, এটা দুঃখজনক। আমি ব্যাংকে চিঠি দিয়ে ভর্তির টাকা নিতে নিষেধ করলেও কিছু শিক্ষক ও কর্মচারীর যোগসাজশে এ কাজটি হয়েছে। আমি এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করেছিলাম। কিন্তু বদলী জনিত কারণে এটি আর এগোয়নি।’
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘যে ৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের কথা বলা হচ্ছে তারা এ স্কুলের শিক্ষার্থীই না। স্কুলে তাদের কোনো কাগজপত্র জমা নেই। হাজিরা খাতায় তাদের নাম নেই। তারা অবৈধভাবে স্কুলটিতে ক্লাস করছিল। এ ব্যাপারটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’