অধ্যক্ষ হতে মরিয়া সেই নাছিমা, আতঙ্কিত শিক্ষকরা!
সিলেটঃ সিলেট সরকারি কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাছিমা হক খান এবার অধ্যক্ষ হতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে। তাঁকে কলেজের অধ্যক্ষ না করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন প্রতিবাদী শিক্ষকরা। কোনো কলেজে উপস্থিত না থেকে পদোন্নতি নেওয়া এবং তাঁর পদমর্যাদার পদ না থাকায় তাঁর যোগদানের আবেদনও ফিরিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী অধ্যক্ষ।
২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর কলেজের অধ্যক্ষ অবসর-পরবর্তী ছুটিতে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান নাছিমা হক। তিনি কলেজে যোগ দেওয়ার পর পরই নানা অনিয়ম শুরু হয়। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে আছে। কারও কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে তাঁর আগমনের সংবাদে শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত বছরের ১৫ মার্চ নাছিমা হকের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও অনিয়মের অভিযোগ এনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেন শিক্ষকরা। ওই অভিযোগপত্রে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ১৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন। শিক্ষকরা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার পর তিনি একটি অনার বোর্ড তৈরি করতে ব্যয় দেখান ৩৬ হাজার টাকা। অথচ যে স্টিকার লাগানো হয়, তার মূল্য মাত্র ৫০০ টাকা। করোনার কারণে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।
অথচ ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা তহবিল থেকে দুটি চেকে ৪ লাখ ৪ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। করোনাকালে কলেজ এবং শিক্ষার্থী পরিবহনের বাস বন্ধ থাকলেও তিনটি গাড়ি বাবদ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় শিক্ষকদের ওপর চটে যান নাহিনা হক। তিনি বিভিন্ন সময়ে কলেজের ১৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত এসিআরে নেতিবাচক মন্তব্য লেখেন। এ ছাড়া নারীকর্মীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করান। এ কারণে কয়েকজনের চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি সাময়িক স্থগিত আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এসিআর বিষয়ে শুনানিকালে গত বছরের ২০ অক্টোবর নাছিমা হককে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি করেন। বদলির পর তিনি ওই কলেজে যোগ দেননি। এমনকি তিনি সিলেট সরকারি কলেজেও নেই।
কলেজ সূত্র জানায়, যে কোনো পদোন্নতি নিতে হলে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু নাছিমা হক আগের কর্মস্থলে কর্মরত দেখিয়ে পদোন্নতি নেন। পদোন্নতি পেয়েই নাছিমা হক গত ৬ এপ্রিল যান। সিলেট সরকারি কলেজে। তখন কলেজে অধ্যাপক পদ না থাকায় এবং আদেশে কর্মস্থল ভুল থাকায় তাঁর আবেদন ফিরিয়ে দেন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ। তিনি যোগদানপত্র গ্রহণ না করে লিখিত ব্যাখ্যা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাঅধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দেন।
গত ১৭ এপ্রিল কলেজের অধ্যক্ষ বদলি হয়ে যাওয়ার সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক আশিফা আক্তার মিতুর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। অধ্যক্ষ চলে যাওয়ার পর নাছিমা হক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এক আবেদনের মাধ্যমে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ তাঁর কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ জানান এবং তিনি কলেজে উপস্থিত না থেকেও কর্মরতদের মধ্যে সিনিয়র দাবি করে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে বর্তমানে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, সিলেট সরকারি কলেজ থেকে তাৎক্ষণিক বদলির পর নাছিমা হক আর কলেজে আসেননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, বদলি, পদোন্নতি এসব বিষয় দেখে মন্ত্রণালয়। আমাদের কাছে দুদক থেকে দেওয়া তাঁর (নাছিমা হক খান) অনিয়মের একটি অভিযোগ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পেয়েছি। এই বিষয়টা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।
নাছিমা হক বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। যাঁরা ক্লাসে সময়মতো আসেন না, যাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আমি রিপোর্ট করেছি। অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।'
কলেজে যোগদান না করে পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি বলেছি। কলেজের কিছু শিক্ষক আমার পেছনে লেগেছেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়