অদৃশ্য ওরা দখলে নিচ্ছে আমার দেশ
।। ফিরোজ আলম ।।
সারা পৃথিবীর মানুষ আজ আতংকিত ওদের নিষ্ঠুর আচরনে। আমাদের ১৮ কোটি মানুষ ও আজ আতংকিত ওদের ভয়ে। অদৃশ্য ওরা (করোনা ভাইরাস) দখল করে নিয়েছে আমাদের পৃথিবী ।বাদ দিচ্ছেনা সবুজ শ্যামল মায়া ঘেরা এদেশকেও।এদেশ সহ সারা পৃথিবীকে মৃত্যু উপত্যকা করেও এখন ও থামছেনা ওরা(করোনা ভাইরাস)।ওদের যেন ঘুম নেই,নেই ক্লান্তি।
এ ভূখন্ডের মানুষের মরণ ঘুম কেড়ে নিতে হবে এ যেন তাদের পণ।তাদের ভয়ে আর গ্রাসে মৃত্যু উপত্যকাই এখন আমার দেশ।প্রতিদিন শতের কাছাকাছি কিংবা শতাধিক মানুষের লাশের গন্ধ আজ দৃশ্যমান।এখানকার বাতাস এখন বিষাক্ত, বাতাসের অদৃশ্য গতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে লক্ষ কোটি ভাইরাস। ওদের ভয়াল গ্রাসে চারদিকে প্রিয় মুখ গুলোর লাশ তৈরি করছে শুধু কান্না,আর্তনাদ আর নিস্তব্ধতা।
এদেশের উর্বর মাটিকে বিষাক্ত মনে হচ্ছে ওদের কালো থাবায়।বাসযোগ্যহীন মনে হচ্ছে আমার স্বদেশকে।জীবনের ঝলমলে উৎসব যেন আজ বহু প্রতিক্ষায় অপেক্ষমান।একটু বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য আমাদের ভাঙাচোরা ফুসফুস সীমাহীন কাতরাচ্ছে।হাসপাতালগুলি যেন ভরসাহীন আর মৃত্যুর গন্তব্য মনে হচ্ছে। কারন হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পাঁচ দিনের মধ্যে মারা গেছে। আর ৫ থেকে ১০ দিনের ভেতরে মারা গেছে ১৬ শতাংশ।মনে করিয়ে দিচ্ছে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ।জীবন ও মরনের একমাত্র সিদ্ধান্ত দাতা তিনিই।
সূরা হজ্জের ৬৬ নং আয়াতে আছে,আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি-অকৃতজ্ঞ!
সূরা লোকমানের ৩৪ নং আয়াতে আছে,কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।
সূরা আলে ইমরানের ১৪৫ নং আয়াতে আছে
"নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না। "
সূরা আলে ইমরানের আয়াত ১৮৫ নং আয়াতে আছে
"প্রতিটি প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। মহাবিচার দিবসে তোমাদের সবাইকে কর্মফল পুরোপুরিই দেয়া হবে। "
সূরা আম্বিয়ার ৩৪ নং আয়াতে আছে
‘হে নবী! তোমার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। তোমার মৃত্যু হলে ওরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?’
সূরা আম্বিয়ার ৩৫ নং আয়াতে আছে
‘প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি তোমাদের ভালো ও খারাপ অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করি। আর আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে।’
সূরা কাফের ৪৩ নং আয়াতে আছে ‘হে মানুষ! আমিই জীবন দান করি। আমিই মৃত্যু ঘটাই। ’
সূরা ওয়াকিয়া,আয়াত ৬০ এ আছে-"আমি বিধান দিয়েছি যে, মৃত্যু সব সময় তোমাদের মাঝে অবস্থান করবে। "
সূরা জুমআ, আয়াত নং ৮ এ আছে,‘হে নবী ওদের বলুন, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাতে চাচ্ছ, তোমাদেরকে সে মৃত্যুর মুখোমুখি হতেই হবে।'
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়
বিশ্বজুড়ে প্রায় দুমাস ধরে ওদের সংক্রমণে মৃত্যুর হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। ওদের সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ৫২৭ জনের প্রাণ গিয়েছে। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৬ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ভারত। তবে সংক্রমণে ভারতের পরেই রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ৭৮ হাজার ৫৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে ।ইতালি,ফ্রান্স,যুক্তরাজ্য ,রাশিয়া,স্পেন ও এ ক্ষতি থেকে রেহাই পায়নি।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে থাইল্যান্ডে নতুন করে এক হাজার ৩৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ভারত ছাড়াও রাশিয়া, পোল্যান্ড ও ইরানের সংক্রমণ বাড়ছে।করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে টিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দিলে ও এটির সুফল এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
**করোনা প্রতিরোধে আমাদের কিছু কাজ করতেই হবে।**
১.দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকং এর মত স্বাস্থ্যবিধি মানাতেই হবে। এটিই করোনা প্রতিরোধের প্রধান রক্ষাকবচ। কঠোর না হয়ে কোনো দেশ এটি মানাতে পারেনি। প্রয়োজনে আমাদেরও কঠোর হতে হবে ।
২. নিম্ন আয়ের কর্মহীন-উপার্জনহীন
মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা দুর্নীতিমুক্ত ভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যই বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩.করোনা পরিস্থিতির সঠিক চিত্র জানার জন্য অধিক হারে করোনা পরীক্ষা করতে হবে।
করোনা রোগীর আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে সচেতনতা বাড়াতেই হবে।
৪. সকল করোনা রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই হবে।
৫. টিকা কার্যক্রম কোন মতেই বন্ধ রাখা যাবেনা। এটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে ।
৬. আল্লাহর কাছে বেশি সাহায্য চাইতে হবে।হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পাঁচ দিনের মধ্যে মারা গেছে। আর ৫ থেকে ১০ দিনের ভেতরে মারা গেছে ১৬ শতাংশ।
৭.চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।তা নাহলে স্বাস্থ্যকর্মীরা অধিক হারে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
৮.বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশকে দ্রূত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাই পরিশেষে বলব আর সহ্য হচ্ছেনা করোনার নিষ্ঠুরতা। বিষাক্ত বাতাসে লাশের গন্ধ আর নিতে পারছিনা। প্রিয়জনদের লাশের ভার বহন করতে গিয়ে আজ চোখ অশ্রুহীন, হৃদয় ভারাক্রান্ত।আল্লাহর উপর ভরসা করে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে তৎপর হলে নিশ্চয়ই আমরা ওদের রুখে দিতে পারব,এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।
লেখক- শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধান (অনার্স শাখা), আয়েশা (রা:)মহিলা অনার্স কামিল মাদ্রাসা,সদর, লক্ষীপুর।